জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সঙ্গে জড়িত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি)  ২৫৯ জন শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার ও ৯ জন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের সবাই জাবি শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। 

রবিবার (২৭ এপ্রিল) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টায় থেকে শুরু হওয়া সিন্ডিকেট সভা শেষে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন সংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ড মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংসাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেট সভায় গত ১৪ জুলাই রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে, ১৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে, একই দিন দিবাগত রাত ১২টায় জাবি উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ছররা গুলি বর্ষণ এবং ১৭ জুলাই বেলা ৩টায় প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নয়জন শিক্ষক, দুইজন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

জুলাই হামলার বিচার দাবিতে জাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

নিউজ প্রকাশের জেরে জাবি সাংবাদিককে হুমকি, প্রতিবাদে মানববন্ধন

সভায় ২৫৯ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একইসঙ্গে ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যূত্থান চলাকালীন চরম নিরাপত্তাহীন অবস্থায় প্রাণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খালি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার দায় কতটুকু, তা যাচাই করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

গত ১৭ মার্চ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হিসেবে গণ্য করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন শ ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ