রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে অন্তত ৫০টি জায়গায় ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ বা বাতাস বিশুদ্ধকারী যন্ত্র বসানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এসব যন্ত্র বসাতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগরভবনে ‘দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে প্রশাসক এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করেছে ডিএনসিসি ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের একটা বড় কারণ ২০ বছরের আগের যানবাহন। ডিএমপিকে এ ধরনের যানবাহনগুলোকে উঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কারণ, বাসগুলো ভাঙাচোরা এবং একটি আরেকটিকে ধাক্কা দিতে দিতে চলে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণকাজও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।

এমন পটভূমিতে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকার ৫০টি জায়গায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এয়ার পিউরিফায়ার বসানো হচ্ছে। এগুলো আকারে বড় এবং দামি। এগুলোর জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষক পাওয়া গেছে। এগুলো জনপরিসরে স্থাপন করা হবে। করপোরেশনের কোনো টাকা খরচ হবে না।

এয়ার পিউরিফায়ার বসাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, ১০০টি গাছ যে পরিমাণ বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে, একেকটি পিউরিফায়ার সেই কাজ করবে। দূষণ কমাতে কিছু তাৎক্ষণিক সমাধানের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নিয়েও কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাসাবাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাদে সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের গৃহকরের ওপর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার কথা করপোরেশন থেকে ভাবা হচ্ছে। ঢাকার কিছু পরিকল্পিত এলাকায় ভবনের উচ্চতা কাছাকাছি। সেখানে পরিকল্পিতভাবে সোলার প্যানেল স্থাপন করে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পাড়কে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহর জীবনের মান সূচকে শেষ দিক থেকে চতুর্থ। এ শহর বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে। দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার প্রথম সারিতে। বিশ্বে যানজটের সূচকে পাঁচ নম্বরে। পৃথিবীর চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ শহর। শব্দদূষণেও শীর্ষে ঢাকা। স্বাস্থ্যসেবার সূচকে শেষের দিকে। এক কথায় ঢাকা শহর আজ ভয়াবহ পরিবেশদূষণের সম্মুখীন। এসব দূষণ থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে শতাধিক উপায় রয়েছে। আমাদের চাহিদাটাকে কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি দূষণকারী যাঁরা আছেন, তাঁদের সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, যানজট নিরসনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রচলন করলে সে ক্ষেত্রে সৌরশক্তির মাধ্যমে চার্জিংয়ের ব্যবস্থা করলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের (সিথ্রিইআর) সমন্বয়ক রৌফা খানম বলেন, শহরাঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অনেক আইন ও বিধিনিষেধ প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে শক্তিশালী কারিগরি ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, একটি কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবিটি) পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি, মানসম্মত গণপরিবহন, শিল্প খাত, কৃষি খাত, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে এর ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘আমাদের জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। তার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’

সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো.

কামরুজ্জামান, বিআইপির উপদেষ্টা বোর্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদারসহ অনেকে বক্তব্য দেন। সংলাপেরসহ আয়োজক ছিল ৩৫টি বেসরকারি ও সংগঠন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ব ল ন র ব যবহ র ক ম হ ম মদ ব যবহ র ব ব সরক র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ঝগড়া থেকে দেয়ালে মাথা ঠোকা, সালমান-ঐশ্বরিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশ্যে আনলেন প্রতিবেশী

বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত প্রেম-বিচ্ছেদের একটি হলো ঐশ্বরিয়া রাই ও সালমান খানের সম্পর্ক। প্রেমের সূচনা হয়েছিল পর্দার আড়ালেই, কিন্তু আলোচনায় আসে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবির মাধ্যমে। ছবির রোমান্স যেন বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। অথচ সেই রূপকথার প্রেমই কিছুদিনের মধ্যে রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, কর্মজীবনেও কঠিন আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল ঐশ্বরিয়াকে।

প্রতিবেশীর চোখে সেই সময়
বিজ্ঞাপন জগতের কিংবদন্তি প্রহ্লাদ কাক্কর ছিলেন ঐশ্বরিয়ার ঘনিষ্ঠজন। ঐশ্বরিয়ার মায়ের একই ভবনে থাকতেন তিনি। সম্পর্কের শুরুর দিক থেকে ক্যারিয়ারের উত্থান—সবকিছু কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাঁর মতে, সালমান ছিলেন ভীষণ আক্রমণাত্মক। ঐশ্বরিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইতেন। প্রহ্লাদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সালমান খুবই আক্রমণাত্মক ছিলেন। আমি একই ভবনে থাকতাম, সবকিছু শুনতাম-দেখতাম। ঝগড়া, চিৎকার, এমনকি দেয়ালে মাথা ঠোকা…এগুলো নিয়মিত ছিল। সম্পর্ক আসলে অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছিল, শুধু ঘোষণাটা পরে এসেছে। বিচ্ছেদটা সবার মধ্যে স্বস্তি এনেছিল—ঐশ্বরিয়ার, তাঁর বাবা-মায়ের, এমনকি সালমানেরও।’

ঐশ্বরিয়া ও সালমান খান

সম্পর্কিত নিবন্ধ