শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: শ্রম উপদেষ্টা
Published: 29th, April 2025 GMT
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান স্বীকার করতে হবে। সকল সেক্টরে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ওএসএইচ কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা একথা বলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০৩ সাল থেকে ২৮ এপ্রিলকে পেশাগত দুর্ঘটনা ও রোগ প্রতিরোধের প্রচার এবং কর্মক্ষেত্রে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিবস পালন করে আসছে। এ বছরে দিবসটি উদযাপনের প্রতিপাদ্য- ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের রূপান্তর: বাংলাদেশে ওএসএইচ-এর ভবিষ্যৎ’।
তিনি বলেন, এই প্রতিপাদ্য আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড শ্রমজীবী মানুষ- তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
পরিবহন সেক্টরে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিক ইনফরমাল সেক্টরের। কর্মক্ষেত্রে এ সকল শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, এছাড়াও নারী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকে। আমরা কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। যে সকল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি শ্রম আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত না তাদেরকে কোনো দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা ।
উপদেষ্টা আরো বলেন, সম্প্রতি রাজশাহীতে ডিআইআই-ই-এর অধীনে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি শ্রমিক দুর্ঘটনা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থার মাধ্যমে, কারখানার শ্রমিক, মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আগ্রহী সংস্থা ও ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এই সংস্থা বাংলাদেশের শ্রম খাতে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সামগ্রিক উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়ন, পেশাগত দুর্ঘটনা, পেশাগত রোগ এবং শ্রমিকদের কল্যাণ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী ওএসএইচ সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক, সুশীল সমাজ এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি এবং গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া