কত নাটক, কূটকৌশল, এমনকি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এক বছরের জন্য শাস্তি স্থগিত করে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন তাওহিদ হৃদয়। অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! যে ম্যাচে তাঁকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, সেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আজ হৃদয়কে পাচ্ছে না মোহামেডান। স্বাভাবিকভাবে তাঁর অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে আবাহনী শিবিরে। আজ সকাল ৯টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
১৫ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে আবাহনী। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পেছনে মোহামেডান। আজ জিতলে ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে আবাহনী। আর মোহামেডান জিতলে সমান হবে দুই দলের পয়েন্ট। লিগের বাইলজ অনুযায়ী তখন মুখোমুখি লড়াইয়ের (হেড টু হেড) ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিরোপা জিতবে মোহামেডান।
প্রথম পর্বে মোহামেডান ৩৯ রানে জিতেছিল। কাজেই আজ যে দল জিতবে, তারাই লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে। অলিখিত এই ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আবাহনীর কোচ হান্নান সরকার। গতকাল মিরপুরে প্রস্তুতির ফাঁকে জাতীয় দলের সাবেক এ নির্বাচক বলেন, ‘শেষ ম্যাচ ঘিরে আলাদা একটা সিনারিও তৈরি হয়েছে, অনেকটা ফাইনালে পরিণত হয়েছে। অবশ্যই আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লিগ শুরু করেছিলাম, এখন সেই লক্ষ্যের শেষ ধাপে। খেলোয়াড়রাও রোমাঞ্চিত কালকের দিনটা কখন আসবে, কখন খেলা শুরু হবে এবং দিনের শেষে সাড়ে ৪টা-৫টার দিকে ট্রফিটা হাতে নেবে।’
মোহামেডান অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়ের ইস্যু নিয়েও কথা বলেছেন হান্নান সরকার, ‘হৃদয় একজন আগ্রাসী ক্রিকেটার। সে সবসময় জিততে চায়, চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। তাঁর মানসিকতা অনেক আগে থেকেই আমি জানি। আমার সঙ্গে হৃদয়ের একটা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথম নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তবে পরের ঘটনায় আমি আপসেট হয়েছি।’
হৃদয় না থাকায় ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, রনি তালুকদার, আনিসুল ইসলাম ইমনকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। মোহামেডানের বোলিং বেশ শক্তিশালী। এবাদত ও সাইফউদ্দিনের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান যোগ দেওয়ার পর মোহামেডানের পেস আক্রমণ লিগের অন্যতম সেরা হয়ে গেছে। নাসুম আহমেদ ও নাবিল সামাদের স্পিন আক্রমণও মন্দ হয়। ব্যাটিংয়ে আবাহনী কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে। দুই তরুণ টপ অর্ডার পারভেজ হোসেন ইমন ও জিশান আলমের সঙ্গে আছেন দুই অভিজ্ঞ মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন। সে তুলনায় আবাহনীর বোলিং কিছুটা গড়পড়তা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?