গুজরাটে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলিম
Published: 29th, April 2025 GMT
ভারতের গুজরাট পুলিশ বলছে, শনিবার ভোররাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে সাড়ে ৬ হাজার মানুষকে তারা আটক করেছে। তবে নিশ্চিতভাবে ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছে বলে সোমবার জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক বিকাশ সহায়।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সোমবার রাতে বিকাশ সহায়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘নথির ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করা গেছে, ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে এখানে থাকছিলেন। আটক হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের মনে হচ্ছে, একটা বড় সংখ্যায় বেআইনি বাংলাদেশিদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত করতে পারব।’
শনিবার ভোররাত থেকে প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাটে এবং এরপরের দুদিনে পুরো গুজরাটেই ‘বেআইনি বাংলাদেশি’ আটক করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে গুজরাট পুলিশ।
সুরাট থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়া সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘রাত তিনটা নাগাদ পুলিশ আসে আমাদের বাসায়। আমার স্বামী, বাচ্চাদের—সবার আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপর তারা আমার স্বামী আর দুই ভাগনেকে নিয়ে যায়। ওরা বলেছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে আমার স্বামী। কিন্তু প্রায় তিন দিন হতে চলল, তিনি ফেরেননি।’
যেদিন প্রথম অভিযান শুরু হয়, সেদিনই আটক হন সুলতান মল্লিক ও তাঁর দুই কিশোর ভাগনে।
বাংলাদেশি সন্দেহেই তাঁদের আটক করা হয়। তবে বিবিসি বাংলার হাতে সুলতান মল্লিকের পাসপোর্ট ও ১৯৯৩ সালের একটি জমির দলিল হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলের বাসিন্দা।
পশ্চিমবঙ্গের সুলতান মল্লিক কেন আটক
সুলতান মল্লিক বছর ছয়েক ধরে সুরাটে এমব্রয়ডারির কাজ করেন।
সুলতান মল্লিকের স্ত্রীর কথায়, ‘প্রথমে তো জানতেই পারিনি যে কোন থানায় নিয়ে গেছে, কোথায় রেখেছে। শনিবার আমার স্বামী পুলিশের একটা নম্বর থেকেই ফোন করে জানায় যে তাঁদের কোনো একটা গুদামঘরে রাখা হয়েছে। সব নথি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন আমার স্বামী। পাসপোর্ট, জমির দলিল—যা যা প্রমাণ ছিল, সব পাঠিয়েছি। কিন্তু তার পর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত আর কোনো যোগাযোগ নেই। এদিকে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর ছেলের এই দশা দেখে, আমার বড় মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। মাত্র এক বছর হলো আমি গুজরাটে এসেছি। এখন কোথায় স্বামীর খোঁজ করতে যাব, বুঝতে পারছি না।’
ভ্রাম্যমাণ শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ গুজরাটের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরে একটি হেল্পলাইন খুলেছে। প্রিয়জনের খোঁজ পাওয়ার জন্য ওই হেল্পলাইনে গত দুদিনে প্রিয়জনের খোঁজ না পাওয়া এক শর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানাচ্ছিলেন সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক।
‘গুজরাটে সংখ্যাটা বড়, তাই বিষয়টা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু উত্তর প্রদেশ, ওডিশা আর মহারাষ্ট্রেও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্তা করার ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে। এ রকম পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে এই আশঙ্কা করেই আমরা গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ যে কিছু হয়নি, দেখাই যাচ্ছে’—বলছিলেন আসিফ ফারুক।
আসিফ ফারুকের কথায়, ‘আরও একটা গুরুতর বিষয় জানতে পারলাম মল্লিকের ব্যাপারে। আটক হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে পেশ করার কথা। কিন্তু তিন দিন হয়ে গেল তাঁদের আটক করা হয়েছে, আদালতে কেন পেশ করা হলো না এখনো!’
আরও পড়ুনভারতে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যের ওপর হামলা২৮ এপ্রিল ২০২৫আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ২৬ এপ্রিল, গুজরাট, ভারত.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র স ব ম
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।
উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।
এএএম//