মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। তিনি বলেছেন, মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি শুধু মানবিক বিষয় নয়, এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। তাই বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

আজ মঙ্গলবার দলের কুমিল্লা মহানগর শাখার শুরা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ কথাগুলো বলেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ তথ্য জানিয়েছে।

রেজাউল করীম বলেন, ‘রাখাইন রাজ্য নিয়ে আমাদের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য করে আসছে। বর্তমানেও বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট মানবিক পরিস্থিতির প্রতি আমরা সংবেদনশীল। বিপর্যস্ত মানুষের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরনের করিডর কেবল “মানবিক” রাখা যায় না। এর সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ফলে (করিডরের জন্য) মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বা অন্য বিকল্পগুলোকেই বিবেচনা করা উচিত। কারণ, এ ধরনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার বা আরাকান আর্মি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কোনো অংশীদার নয়। তাই এ বিষয়ে তাড়াহুড়া না করে বুঝেশুনে সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী গণ–অভ্যুত্থান হয়ে গেল, কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও চরিত্রে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ক্ষমতার জন্য উদগ্র ব্যাকুলতা, প্রতিহিংসা, হানাহানি ও কূটকৌশল এখনো চলমান। এই পরিস্থিতে নির্বাচনের চেয়ে ব্যক্তি, দল ও রাষ্ট্রের সংস্কারই প্রধান মুখ্য হওয়া উচিত।

ক্ষোভ প্রকাশ করে চরমোনাই পীর বলেন, স্বৈরতন্ত্র পতনে যে ব্যক্তি জীবন দিয়েছেন, তাঁর কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হলো। সেই মেয়ে পরে আত্মহত্যাও করল। এর চেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে? নিপীড়িত মেয়েটাকে কেন রাষ্ট্র রক্ষা করতে পারল না, সেই জবাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই পতিত স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক এম এম বিলাল হুসাইনের সভাপতিত্বে শুরা অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জয়নাল আবেদীন, ইসলামী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব

কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তবে কারা, সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি।

আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাপা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ মন্তব্য করেন।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু দল ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে বা স্বাক্ষর করে একধরনের ফাঁদে পড়ে গেছে। কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। এখানে প্রতারক ও প্রতারণা শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এ রকম সংস্কার চাইনি।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঐকমত্য তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে জাপা মহাসচিব বলেন, কমিশন ৫৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দলকে বাদ দিয়েছে। যে দলগুলো সেখানে গেছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ আছে। এক ভাগকে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। অন্য আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে পরে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছে।

বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বলে দাবি করেছেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। কারণ, নির্বাচিত সরকার সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করেছে ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। এই মুহূর্তে দেশে যে প্রশাসনিক কাঠামো আছে, তার ব্যাপারে তথ্য উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, তাঁরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কথামতো প্রশাসন সাজিয়েছে, তার সঙ্গে এনসিপি আছে। এই তিন দলের বাইরে অন্য কোনো দল যদি ভোটে আসে, এই প্রশাসনিক কাঠামো সেই দলকে সুষ্ঠু ভোট হতে দেবে না।

গণভোটের দাবি নজিরবিহীন উল্লেখ করে শামামী হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে এই মুহূর্তে গণভোট কোনো প্রভিশনে নেই। বর্তমানে গণভোটের যে দাবি উঠেছে, সংসদে পাস হওয়ার আগে এই দাবি বাস্তবায়ন হলে ঐকমত্য কমিশনকে সংসদের মর্যাদা দেওয়া হবে। ঐকমত্য কমিশন সার্বভৌম নয়, নির্বাচিত নয় ও সংসদ নয়। সংসদকে এড়িয়ে গিয়ে কোনো আইন পাস করা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।

এ সময় জাপার কো–চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সদস্যসচিব হাজী আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামানসহ জাপা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
  • দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কেন এমন দুর্বোধ্য পথ
  • এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঐকমত্য সুপারিশ’ দেওয়ার আহ্বান
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব