রিকশাচালকের ছদ্মবেশে ছিনতাই, ফেসবুকে ভাইরাল সেই ছিনতাইকারী আটক
Published: 29th, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জ শহরে রিকশাচালকের ছদ্মবেশে ছিনতাইকারী আবু ছায়েদকে আটক করেছে পুলিশ। সে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগবেড় আক্তাপাড়ার লিয়াকত আলীর ছেলে। আটকের সময় তার কাছ থেকে মাদকও উদ্ধার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের হাছননগরের (বক পয়েন্টের) এক নারী ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই ঘটনার সিটিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার পর Mehendi Artist By Mimi নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ঘটনা পোস্ট করা হয়। পোস্ট করার পরেই ভাইরাল হয় পোস্টটি। সতর্ক থাকার জন্য শেয়ার করতে থাকেন সুনামগঞ্জ শহরের অনেকে।
ওই আইডিতে লেখা হয়, ‘সতর্কতা পোস্ট’ আমি সুনামগঞ্জ শহরের স্থানীয় মেয়ে আমার সাথে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। এই যে ছবিতে লোকটি- উনি, কত বড় চোর পুরো কাহিনীটি আমি বলছি, আজকে (সোমবার) বিকাল ৫টায় আমি শহরের কালিবাড়ি স্বর্ণা জুয়েলার্সে গিয়েছি কিছু জিনিস কিনব, গোল্ড কিনতে একটু সময় লেগে যায়। মাগরিবের আজান পড়ে যায়, স্বর্ণালংকারটি কিনতে আমার চার হাজার টাকার মতো শর্ট ছিল। আমার সাথে থাকা আরেক ভাবী আমাকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। যেহেতু দুজন জন একসাথে যাব উনি উকিলপাড়া আর আমি বকপয়েন্ট, আমি ভাবীকে রিকশায় রেখে ওপর থেকে টাকা ৪ হাজার টাকা এনে দিলাম। তিনি তার বাসায় যাচ্ছিলেন হঠাৎ ওই রিকশাচালক সুনামগঞ্জ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে রাখে রিকশা। ভাবী বললেন, এখানে কেন দাঁড়িয়েছেন, ওই জানোয়ার বললো- ‘আমার কাছে ছুরি আছে তোর বাচ্চাসহ তোরে শেষ করে দেব, যা আছে তাড়াতাড়ি দে, চিৎকার করবি না, ভাবীর হাত থেকে এ সময় মোবাইল পড়ে যায়, ওনার আট মাসের বাচ্চা কোলে তাই আমার দেওয়া চার হাজার, ওনার কাছে থাকা আরও দুই হাজার টাকাসহ ছয় হাজার টাকা দিয়ে বাঁচেন তিনি। ২০ টাকা রিকশা ভাড়াও রাখেনি ব্যাগে।’
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘টাকাটা তো বড় কথা নয়, সুনামগঞ্জের কী অবস্থা হয়েছে, তা ভেবে উৎকণ্ঠা হয়, এভাবে যে করোর সাথে ঘটতে পারতো।’
তিনি লিখেছেন, ‘রিকশাচালকের ছবিটি স্বর্ণের দোকানের সিসি টিভি থেকে নেওয়া, যদি কেউ তাকে চিনতে পারেন, উপযুক্ত শাস্তি দেবার চেষ্টা করবেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য মঙ্গলবার বিকালে শহরের কালীবাড়ির স্বর্ণা জুয়েলার্সে গেলে নয়ন রায় নামের একজন জুয়েলারি কর্মচারী জানান, ওই গ্রাহক রিকশা দাঁড় করিয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই তার পছন্দের অলংকার কিনে নিয়ে চলে যায়।’
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি আবুল কালাম মঙ্গলবার বিকেলেই জানান, কাল রাতেই অনেকে এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের লিংক তাকে পাঠিয়েছেন। তিনিও ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় হতবাক হয়েছেন। যেহেতু রিকশাচালকের ছবি তারা পেয়েছেন, সে পালাতে পারবে না। একজন সাবইন্সপেক্টরকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর জহির বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ভাইরাল হলে আমাদের নজরে আসে। ওসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করি। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে সন্ধ্যার পর অভিযুক্ত রিকশাচালককে আটক করি। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ আটক স ন মগঞ জ ছ নত ই স বর ণ শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।