সুনামগঞ্জ শহরে রিকশাচালকের ছদ্মবেশে ছিনতাইকারী আবু ছায়েদকে আটক করেছে পুলিশ। সে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগবেড় আক্তাপাড়ার লিয়াকত আলীর ছেলে। আটকের সময় তার কাছ থেকে মাদকও উদ্ধার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের হাছননগরের (বক পয়েন্টের) এক নারী ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই ঘটনার সিটিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার পর Mehendi Artist By Mimi নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ঘটনা পোস্ট করা হয়। পোস্ট করার পরেই ভাইরাল হয় পোস্টটি। সতর্ক থাকার জন্য শেয়ার করতে থাকেন সুনামগঞ্জ শহরের অনেকে। 

ওই আইডিতে লেখা হয়, ‘সতর্কতা পোস্ট’ আমি সুনামগঞ্জ শহরের স্থানীয় মেয়ে আমার সাথে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। এই যে ছবিতে লোকটি- উনি, কত বড় চোর পুরো কাহিনীটি আমি বলছি, আজকে (সোমবার) বিকাল ৫টায় আমি শহরের কালিবাড়ি স্বর্ণা জুয়েলার্সে গিয়েছি কিছু জিনিস কিনব, গোল্ড কিনতে একটু সময় লেগে যায়। মাগরিবের আজান পড়ে যায়, স্বর্ণালংকারটি কিনতে আমার চার হাজার টাকার মতো শর্ট ছিল। আমার সাথে থাকা আরেক ভাবী আমাকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। যেহেতু দুজন জন একসাথে যাব উনি উকিলপাড়া আর আমি বকপয়েন্ট, আমি ভাবীকে রিকশায় রেখে ওপর থেকে টাকা ৪ হাজার টাকা এনে দিলাম। তিনি তার বাসায় যাচ্ছিলেন হঠাৎ ওই রিকশাচালক সুনামগঞ্জ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে রাখে রিকশা। ভাবী বললেন, এখানে কেন দাঁড়িয়েছেন, ওই জানোয়ার বললো- ‘আমার কাছে ছুরি আছে তোর বাচ্চাসহ তোরে শেষ করে দেব, যা আছে তাড়াতাড়ি দে, চিৎকার করবি না, ভাবীর হাত থেকে এ সময় মোবাইল পড়ে যায়, ওনার আট মাসের বাচ্চা কোলে তাই আমার দেওয়া চার হাজার, ওনার কাছে থাকা আরও দুই হাজার টাকাসহ ছয় হাজার টাকা দিয়ে বাঁচেন তিনি। ২০ টাকা রিকশা ভাড়াও রাখেনি ব্যাগে।’

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘টাকাটা তো বড় কথা নয়, সুনামগঞ্জের কী অবস্থা হয়েছে, তা ভেবে উৎকণ্ঠা হয়, এভাবে যে করোর সাথে ঘটতে পারতো।’ 

তিনি লিখেছেন, ‘রিকশাচালকের ছবিটি স্বর্ণের দোকানের সিসি টিভি থেকে নেওয়া, যদি কেউ তাকে চিনতে পারেন, উপযুক্ত শাস্তি দেবার চেষ্টা করবেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য মঙ্গলবার বিকালে শহরের কালীবাড়ির স্বর্ণা জুয়েলার্সে গেলে নয়ন রায় নামের একজন জুয়েলারি কর্মচারী জানান, ওই গ্রাহক রিকশা দাঁড় করিয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই তার পছন্দের অলংকার কিনে নিয়ে চলে যায়।’ 

সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি আবুল কালাম মঙ্গলবার বিকেলেই জানান, কাল রাতেই অনেকে এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের লিংক তাকে পাঠিয়েছেন। তিনিও ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় হতবাক হয়েছেন। যেহেতু রিকশাচালকের ছবি তারা পেয়েছেন, সে পালাতে পারবে না। একজন সাবইন্সপেক্টরকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর জহির বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ভাইরাল হলে আমাদের নজরে আসে। ওসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করি। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে সন্ধ্যার পর অভিযুক্ত রিকশাচালককে আটক করি। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ আটক স ন মগঞ জ ছ নত ই স বর ণ শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ