সাংবাদিকদের জন্য নৈতিকতা আইনও করা দরকার
Published: 29th, April 2025 GMT
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরে যতটা সাংবাদিকতা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে শেখ পরিবারকে রক্ষা করা এবং এই পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষার কাজ। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, একটা দলের হয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা মনে করেছেন, তাদের বিপক্ষে আছে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, পাকিস্তান; তারা আছেন সত্যের পক্ষে। তাদের মধ্যে অনুশোচনা-অনুকম্পা-অপরাধবোধ একদম নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে আসলে শুধু প্রতিষ্ঠান বা মালিকানা পরিবর্তন হলে কিছু হবে না। ফ্যাসিবাদ চলে গেছে। তবে এখনও যে সেই চরিত্র সমাজে নেই, তা নয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, কেউ কেউ হয়তো মনে করছেন, এ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করা হবে না। কিন্তু আমরা কাজ করব। সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের খসড়া দেখেছি। সেটি নিয়ে কাজ চলছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য নৈতিকতা আইনও করা দরকার।
তিনি বলেন, ‘এক সাংবাদিক সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভি তাদের সংবাদ বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি। তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে। এখন মানুষ ভাববে, এটা সরকার করেছে। উপদেষ্টার দুই মাসে কাউকে কল দিইনি।’
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং দুর্বৃত্তপনা রয়েছে সংবাদমাধ্যমের পেছনে। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেনস্তা করার জন্য একের পর এক রিপোর্ট ছাপা শুরু হয়ে যায়। দুর্বৃত্তায়নকে দুর্বৃত্তায়নই বলতে হবে। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে রেহমান সোবহানের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স হয়েছিল। বিশাল ভলিউমের রিপোর্ট হলো, কেউ তা পড়ে দেখল না। এবার যেমন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে শ্বেতপত্র হলো; কেউ পড়ে দেখল না বলে আফসোস করছে লোকজন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টটাও কতজন পড়ে দেখেছেন– আমার সন্দেহ হয়।’
সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি থেকে অনেকে সেল্ফ সেন্সর করে সাংবাদিকতা করেছে। আরেকটি হচ্ছে, কিছু পাওয়ার সংস্কৃতি। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে রিপোর্টাররা তেমন জায়গা পেত না। সম্পাদকরা সেখানে গিয়ে তোষামোদ করতেন।’ তিনি বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো চলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে। ওগুলো দেয়ালে পাওয়া যায়, কিন্তু পাঠকের ঘরে পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন তাঁর ‘শিকারি সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গবেষণাকাজ নিয়ে আলাপকালে বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমণিকে গ্রেপ্তার করার সময় বিপুলসংখ্যক র্যাব ও পুলিশ সদস্য তাঁকে আদালতে নিয়ে যায়। সঙ্গে এক দল ক্যামেরাম্যান ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় গণমাধ্যমের লোকজনকে ডেকে নিয়ে দেখানো হলো কোথায় কোথায় মদ রাখা হতো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ১৯টি লাশ পড়ে গেল। অথচ এ সফরের প্রতিবাদ জানানো মাওলানা মামুনুল হককে ব্যক্তিগত বিষয় দিয়ে ঘায়েল করা হলো। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় প্রথম দিন এমনকি পরদিনও বলা হচ্ছিল, একটি স্বনামধন্য করপোরেশনের মালিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও দেখা গেল, মুনিয়া এবং তাঁর বোনের চরিত্র নিয়ে কথা উঠল। কাউকে টার্গেট করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নানা উপায়ে অপমান করা হয়। এমন ঘটনা বিগত সময়ে বহুবার দেখেছি আমরা।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের সময় সাংবাদিকরা খুব ভয়ে ভয়ে বোধহয় কাজ করেছে, আমরা মনে করে থাকি। কিন্তু দেখা গেছে, অনেকে খুবই আনন্দের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের অংশ হয়েছে। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। কারণ এটি এজেন্ডা তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যম যে এ কাজটাও করতে পারে না– তার প্রমাণ আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান।’
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী তালাত মামুন বলেন, শিকারি সাংবাদিকতার যে ১৫ বা ১৬ বছরের হিসাবটা নিয়ে অধ্যাপক আ-আল মামুন বই লিখছেন, এমন গবেষণামূলক কাজ জারি রাখা উচিত। কারণ, অনুসন্ধান না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ব দ কত র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।