Samakal:
2025-06-16@02:52:23 GMT

নানা ঢঙে বাঁধি চুল

Published: 29th, April 2025 GMT

নানা ঢঙে বাঁধি চুল

চুলের সাজে সামান্য বদল এনে গ্রীষ্মের তাপকে হার মানানো যায় অনায়াসেই। আধুনিক স্টাইল আর স্বস্তির মেলবন্ধনে এ গরমে কীভাবে চুল সাজালে দেখাবে ঝরঝরে ও আকর্ষণীয়, তা নিয়ে লিখেছেন আশিকা নিগার

নারীর চুলের সৌন্দর্য, রহস্যময়তা চিরকালই সবার কাছে আবেগের। চুল সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু শারীরিক সৌন্দর্য নয়, চুল আমাদের আবেগ, মানসিক অবস্থা এবং ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন হিসেবে কাজ করে। চুলের রং, দৈর্ঘ্য, শেপ প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।  
ব্যক্তিভেদে কেউ লম্বা চুল পছন্দ করে, আবার কেউ ছোট চুল পছন্দ করে। চুল লম্বা হোক আর ছোট হোক, সবাই চান নিজের মনের মতো করে চুল সাজাতে। নতুন নতুন চুলের সাজে আয়নায় নিজেদের আকর্ষণীয় রূপে দেখতে চান নারীরা।   
গ্রীষ্মকাল মানে প্রচণ্ড রোদ, ঘাম, ধুলাবালির সঙ্গে অস্বস্তিকর গরম। এ সময় সাজগোজ হালকা রাখতে যেমন সবাই মনোযোগী হন, ঠিক তেমনি চুলের যত্ন ও সাজ নিয়েও একটু বাড়তি ভাবনা আসে। কারণ, চুল ঘেমে গেলে একদিকে যেমন অস্বস্তি তৈরি হয়, অন্যদিকে সাজটাও নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে গরমের জন্য প্রয়োজন এমন কিছু সাজ, যা হালকা, আরামদায়ক এবং একইসঙ্গে ট্রেন্ডি। আজ আমরা জানব এমন কিছু অনুপম চুলের সাজ সম্পর্কে, যেগুলো গরমে সহজেই করা যায়, দেখতে সুন্দর লাগে এবং সারাদিন ধরে আরামদায়ক থাকে।
লো বান (গরমে স্বস্তি): গরমে চুল খোলা রাখা একেবারেই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। এ সময় ঘাড়ের কাছাকাছি একটি টাইট লো বান স্টাইলিশ ও স্বস্তিদায়ক একটি সমাধান। এটি ঘাড় ফাঁকা রাখে; ফলে ঘেমে যাওয়ার ঝামেলা কমে যায়। অফিস হোক বা বন্ধুর আড্ডায়, লো বান সব জায়গায় মানিয়ে যায়। চাইলে বানটার পাশে হালকা কয়েক লট চুল ফেলে দিলে একটা রোমান্টিক লুকও আসে।
হাফ আপ হাফ ডাউন টুইস্ট (হালকা সাজে মিষ্টি সাজ): যারা চুল পুরো খোলা রাখতে চান আবার ঘাম বা অগোছালোভাব থেকে বাঁচতে চান, তাদের জন্য হাফ আপ হাফ ডাউন টুইস্ট আদর্শ। সামনের কিছু চুল নিয়ে হালকা টুইস্ট করে ক্লিপ বা স্ক্রাঞ্চি দিয়ে বেঁধে দিলে মুখের চুল সামলানো যায়। নিচের চুল খোলা রাখায় একটা ন্যাচারাল ভলিউম আসে।
শর্ট বব বা লেয়ারড কাট (গরমের জন্য পারফেক্ট কাট): গরমে কম ঝামেলার সাজ চাইলে চুলের ছাঁটে  কিছু পরিবর্তন আনা যায়। শর্ট বব, লেয়ারড বব বা পিক্সি কাট গরমের জন্য অসাধারণ। এটি শুধু দেখতে স্টাইলিশ নয়, বরং হালকা চুলে ঘামও কম হয়। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন চুল বাঁধতে বা সাজাতে সময় পান না তাদের জন্য এটি সেরা অপশন।
মেসি বান (ক্যাজুয়াল দিনে কুল লুক): যদি একদম ঝটপট কিছু করতে হয়, মেসি বান নিঃসন্দেহে চ্যাম্পিয়ন। এটি বানানো সহজ, দেখতে কিউট এবং যে কোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। সকালে হুট করে বাইরে বের হতে হলে বা হোম অফিসের সময় এ স্টাইল একদম নিখুত।
পাশাপাশি গরমে চুলের যত্নও জরুরি। এ ক্ষেত্রে হালকা ও সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করুন। চুলে হিট প্রোডাক্ট কম ব্যবহার করুন, চেষ্টা করুন ন্যাচারাল ড্রাই করার। বাইরে গেলে স্কার্ফ বা হ্যাট ব্যবহার করুন সূর্য থেকে চুলকে রক্ষা করতে।
শোভনস মেকওভারের রূপ বিশেষজ্ঞ শোভন সাহা বলেন, ‘হেয়ারস্টাইলের ক্ষেত্রে যারা ছোট চুল পছন্দ করেন তারা এ গরমে ছোট করে কেটে নিতে পারেন, যাতে নতুন লুকও হয়ে যাবে। যাদের চুল অতিরিক্ত ঘামে তারা ঢিলেঢালা করে পনিক জেল করতে পারেন। বড় চুলের ক্ষেত্রে চুল ছেড়ে রাখলেও গরম বেশি লাগবে। সে ক্ষেত্রে নানা রকমের ব্রেয়ার্ডস অ্যাপ্লাই করা যায়। এ ছাড়া খোঁপা করে, টেনে বেঁধে রাখার স্টাইলই গরমের জন্য উপযুক্ত। 
এর পাশাপাশি গরমে চুলের যত্ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গরমে চুল অবশ্যই খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর ডিপ ক্লিনজিং শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সিরাম ব্যবহার করতে হবে।’
গরমে চুলের সাজ মানে ঝামেলা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং একটু কৌশলী ও ট্রেন্ডি হেয়ারস্টাইল বেছে নিলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন গরমে ফ্রেশ, স্মার্ট আর স্টাইলিশ। হালকা চুলের ছাঁট, চটজলদি বান বা একটু স্কার্ফের স্টাইল– সব মিলিয়ে এ গরমে আপনার চুলের সাজ হতে পারে সবচেয়ে অনুপম ও আরামদায়ক। তাই গরমকালকে ভয় নয়, বরং নিজের স্টাইলকে দিন একটু নতুন চেহারা, স্বস্তিদায়ক আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
রেড বিউটি স্যালুনের স্বত্বাধিকারী এবং রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘গরম যখন শুরু হয় তখন আমরা সবাই অস্থিরতায় থাকি। বাইরে চলাফেরার সময় আমরা যখন গণপরিবহন  ব্যবহার করি অথবা হাঁটি তখন আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে চুল যত আকর্ষণীয়ভাবে গুছিয়ে রাখতে পারব, আমাদের ব্যক্তিত্বও ততো সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে এবং স্বস্তির অনুভূতিও দেবে।’
তিনি বলেন, ‘পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে চুলের সাজ হওয়া উচিত। যদি কুর্তি বা শার্ট পরা হয় তাহলে সেটির সঙ্গে মানিয়ে আমরা চুলকে ওপরে তুলে আটকে নিতে পারি এবং সে চুলকে ওপরে আটকানোর ফলে দেখতেও বেশ স্টাইলিশ লাগবে। আবার চুলগুলোকে যদি পাশ থেকে হালকা বের করে একটু ক্যাজুয়াল ফিলে রাখি তাহলে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে এবং আপনার অনুভূতিও বেশ আরামদায়ক হবে।’
আফরোজা আরও বলেন, ‘সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে যদি চুলের কথা আসে তাহলে আমি বলবো সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে বেশির ভাগ সময়ে আসলে খোলা চুলই দেখতে ভালো লাগে।’ 
গরমে খোলা চুলে থাকলে সামনের চুলটা যখন গলায়, মুখে এসে লাগে তখন খুবই অস্বস্তিবোধ  হয়। তখন নিজেকে  গোছানো বা পরিপাটি লাগছে না মনে হয়ে নিজের  আত্মবিশ্বাসও এতে কমে যায়। সেক্ষেত্রে সামনে থেকে চুলগুলো নিয়ে আটকে দিয়ে আমরা যেকোনো এক পাশে চুলগুলো ক্যারি করতে পারি। তাহলে ঘাড়টা খোলামেলা থাকবে এবং সামনের দিকে কোনো চুল এসে আপনাকে এলোমেলো লুক দেবে না। 
নিজেকে স্টাইলিশ দেখানোর জন্য আমরা দুই পাশ থেকে দুটি আকর্ষণীয় বেণি করতে পারি। এটি ফ্রেঞ্চ বেণির মতো স্টাইল করে এনে পেছনে পনিটেইলের সঙ্গে যুক্ত করে নিতে পারি। পনিটেইলটি উঁচুতে না হয়ে নিচুতে হবে। তখনও দেখতে ভালো লাগবে। নিচের চুলগুলো ছাড়া থাকবে আর মাথার চুলটা আটকানো থাকবে। এতে কান, গলা এবং মুখে যখন চুল থাকবে না তখন গরম অনেকটা কম লাগবে। 
এছাড়াও আফরোজা পারভীন আরও বলেন, এ সাজগুলো ছাড়াও আমরা এ সময়ে সরাসরি পনিটেইলও করে রাখতে পারি। আমরা চাইলে চুল একদম ওপরে উঠিয়ে বেঁধে রাখতে পারি। 
আবার এটিও মনে রাখতে হবে যে খুব রোদে ঘোরাঘুরি করার পর ঠান্ডা স্থান অর্থাৎ বাড়িতে 
ফিরে চুল খুলে ফেলতে হবে এবং চুলের গোড়া শুকিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে যাবে। 

মডেল: আসিন জাহান; মেকওভার: রেড বিউটি স্যালুন; ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ