চুলের সাজে সামান্য বদল এনে গ্রীষ্মের তাপকে হার মানানো যায় অনায়াসেই। আধুনিক স্টাইল আর স্বস্তির মেলবন্ধনে এ গরমে কীভাবে চুল সাজালে দেখাবে ঝরঝরে ও আকর্ষণীয়, তা নিয়ে লিখেছেন আশিকা নিগার
নারীর চুলের সৌন্দর্য, রহস্যময়তা চিরকালই সবার কাছে আবেগের। চুল সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু শারীরিক সৌন্দর্য নয়, চুল আমাদের আবেগ, মানসিক অবস্থা এবং ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন হিসেবে কাজ করে। চুলের রং, দৈর্ঘ্য, শেপ প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
ব্যক্তিভেদে কেউ লম্বা চুল পছন্দ করে, আবার কেউ ছোট চুল পছন্দ করে। চুল লম্বা হোক আর ছোট হোক, সবাই চান নিজের মনের মতো করে চুল সাজাতে। নতুন নতুন চুলের সাজে আয়নায় নিজেদের আকর্ষণীয় রূপে দেখতে চান নারীরা।
গ্রীষ্মকাল মানে প্রচণ্ড রোদ, ঘাম, ধুলাবালির সঙ্গে অস্বস্তিকর গরম। এ সময় সাজগোজ হালকা রাখতে যেমন সবাই মনোযোগী হন, ঠিক তেমনি চুলের যত্ন ও সাজ নিয়েও একটু বাড়তি ভাবনা আসে। কারণ, চুল ঘেমে গেলে একদিকে যেমন অস্বস্তি তৈরি হয়, অন্যদিকে সাজটাও নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে গরমের জন্য প্রয়োজন এমন কিছু সাজ, যা হালকা, আরামদায়ক এবং একইসঙ্গে ট্রেন্ডি। আজ আমরা জানব এমন কিছু অনুপম চুলের সাজ সম্পর্কে, যেগুলো গরমে সহজেই করা যায়, দেখতে সুন্দর লাগে এবং সারাদিন ধরে আরামদায়ক থাকে।
লো বান (গরমে স্বস্তি): গরমে চুল খোলা রাখা একেবারেই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। এ সময় ঘাড়ের কাছাকাছি একটি টাইট লো বান স্টাইলিশ ও স্বস্তিদায়ক একটি সমাধান। এটি ঘাড় ফাঁকা রাখে; ফলে ঘেমে যাওয়ার ঝামেলা কমে যায়। অফিস হোক বা বন্ধুর আড্ডায়, লো বান সব জায়গায় মানিয়ে যায়। চাইলে বানটার পাশে হালকা কয়েক লট চুল ফেলে দিলে একটা রোমান্টিক লুকও আসে।
হাফ আপ হাফ ডাউন টুইস্ট (হালকা সাজে মিষ্টি সাজ): যারা চুল পুরো খোলা রাখতে চান আবার ঘাম বা অগোছালোভাব থেকে বাঁচতে চান, তাদের জন্য হাফ আপ হাফ ডাউন টুইস্ট আদর্শ। সামনের কিছু চুল নিয়ে হালকা টুইস্ট করে ক্লিপ বা স্ক্রাঞ্চি দিয়ে বেঁধে দিলে মুখের চুল সামলানো যায়। নিচের চুল খোলা রাখায় একটা ন্যাচারাল ভলিউম আসে।
শর্ট বব বা লেয়ারড কাট (গরমের জন্য পারফেক্ট কাট): গরমে কম ঝামেলার সাজ চাইলে চুলের ছাঁটে কিছু পরিবর্তন আনা যায়। শর্ট বব, লেয়ারড বব বা পিক্সি কাট গরমের জন্য অসাধারণ। এটি শুধু দেখতে স্টাইলিশ নয়, বরং হালকা চুলে ঘামও কম হয়। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন চুল বাঁধতে বা সাজাতে সময় পান না তাদের জন্য এটি সেরা অপশন।
মেসি বান (ক্যাজুয়াল দিনে কুল লুক): যদি একদম ঝটপট কিছু করতে হয়, মেসি বান নিঃসন্দেহে চ্যাম্পিয়ন। এটি বানানো সহজ, দেখতে কিউট এবং যে কোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। সকালে হুট করে বাইরে বের হতে হলে বা হোম অফিসের সময় এ স্টাইল একদম নিখুত।
পাশাপাশি গরমে চুলের যত্নও জরুরি। এ ক্ষেত্রে হালকা ও সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করুন। চুলে হিট প্রোডাক্ট কম ব্যবহার করুন, চেষ্টা করুন ন্যাচারাল ড্রাই করার। বাইরে গেলে স্কার্ফ বা হ্যাট ব্যবহার করুন সূর্য থেকে চুলকে রক্ষা করতে।
শোভনস মেকওভারের রূপ বিশেষজ্ঞ শোভন সাহা বলেন, ‘হেয়ারস্টাইলের ক্ষেত্রে যারা ছোট চুল পছন্দ করেন তারা এ গরমে ছোট করে কেটে নিতে পারেন, যাতে নতুন লুকও হয়ে যাবে। যাদের চুল অতিরিক্ত ঘামে তারা ঢিলেঢালা করে পনিক জেল করতে পারেন। বড় চুলের ক্ষেত্রে চুল ছেড়ে রাখলেও গরম বেশি লাগবে। সে ক্ষেত্রে নানা রকমের ব্রেয়ার্ডস অ্যাপ্লাই করা যায়। এ ছাড়া খোঁপা করে, টেনে বেঁধে রাখার স্টাইলই গরমের জন্য উপযুক্ত।
এর পাশাপাশি গরমে চুলের যত্ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গরমে চুল অবশ্যই খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর ডিপ ক্লিনজিং শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সিরাম ব্যবহার করতে হবে।’
গরমে চুলের সাজ মানে ঝামেলা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং একটু কৌশলী ও ট্রেন্ডি হেয়ারস্টাইল বেছে নিলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন গরমে ফ্রেশ, স্মার্ট আর স্টাইলিশ। হালকা চুলের ছাঁট, চটজলদি বান বা একটু স্কার্ফের স্টাইল– সব মিলিয়ে এ গরমে আপনার চুলের সাজ হতে পারে সবচেয়ে অনুপম ও আরামদায়ক। তাই গরমকালকে ভয় নয়, বরং নিজের স্টাইলকে দিন একটু নতুন চেহারা, স্বস্তিদায়ক আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
রেড বিউটি স্যালুনের স্বত্বাধিকারী এবং রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘গরম যখন শুরু হয় তখন আমরা সবাই অস্থিরতায় থাকি। বাইরে চলাফেরার সময় আমরা যখন গণপরিবহন ব্যবহার করি অথবা হাঁটি তখন আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে চুল যত আকর্ষণীয়ভাবে গুছিয়ে রাখতে পারব, আমাদের ব্যক্তিত্বও ততো সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে এবং স্বস্তির অনুভূতিও দেবে।’
তিনি বলেন, ‘পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে চুলের সাজ হওয়া উচিত। যদি কুর্তি বা শার্ট পরা হয় তাহলে সেটির সঙ্গে মানিয়ে আমরা চুলকে ওপরে তুলে আটকে নিতে পারি এবং সে চুলকে ওপরে আটকানোর ফলে দেখতেও বেশ স্টাইলিশ লাগবে। আবার চুলগুলোকে যদি পাশ থেকে হালকা বের করে একটু ক্যাজুয়াল ফিলে রাখি তাহলে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে এবং আপনার অনুভূতিও বেশ আরামদায়ক হবে।’
আফরোজা আরও বলেন, ‘সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে যদি চুলের কথা আসে তাহলে আমি বলবো সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে বেশির ভাগ সময়ে আসলে খোলা চুলই দেখতে ভালো লাগে।’
গরমে খোলা চুলে থাকলে সামনের চুলটা যখন গলায়, মুখে এসে লাগে তখন খুবই অস্বস্তিবোধ হয়। তখন নিজেকে গোছানো বা পরিপাটি লাগছে না মনে হয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসও এতে কমে যায়। সেক্ষেত্রে সামনে থেকে চুলগুলো নিয়ে আটকে দিয়ে আমরা যেকোনো এক পাশে চুলগুলো ক্যারি করতে পারি। তাহলে ঘাড়টা খোলামেলা থাকবে এবং সামনের দিকে কোনো চুল এসে আপনাকে এলোমেলো লুক দেবে না।
নিজেকে স্টাইলিশ দেখানোর জন্য আমরা দুই পাশ থেকে দুটি আকর্ষণীয় বেণি করতে পারি। এটি ফ্রেঞ্চ বেণির মতো স্টাইল করে এনে পেছনে পনিটেইলের সঙ্গে যুক্ত করে নিতে পারি। পনিটেইলটি উঁচুতে না হয়ে নিচুতে হবে। তখনও দেখতে ভালো লাগবে। নিচের চুলগুলো ছাড়া থাকবে আর মাথার চুলটা আটকানো থাকবে। এতে কান, গলা এবং মুখে যখন চুল থাকবে না তখন গরম অনেকটা কম লাগবে।
এছাড়াও আফরোজা পারভীন আরও বলেন, এ সাজগুলো ছাড়াও আমরা এ সময়ে সরাসরি পনিটেইলও করে রাখতে পারি। আমরা চাইলে চুল একদম ওপরে উঠিয়ে বেঁধে রাখতে পারি।
আবার এটিও মনে রাখতে হবে যে খুব রোদে ঘোরাঘুরি করার পর ঠান্ডা স্থান অর্থাৎ বাড়িতে
ফিরে চুল খুলে ফেলতে হবে এবং চুলের গোড়া শুকিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে যাবে।
মডেল: আসিন জাহান; মেকওভার: রেড বিউটি স্যালুন; ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স ন দর
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
ইরান থেকে তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার অভিযোগে ৬টি ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে ভারতের ৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা এসব প্রতিষ্ঠান ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনাবেচা ও বিপণনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে। এতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, যেসব ভারতীয় কোম্পানির ওপর মার্কিন সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেগুলো হচ্ছে, অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং মার্কিন নাগরিক ও কোম্পানিগুলো তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এদের অধীন যেসব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মালিকানা রয়েছে, তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ইরানের ‘ছায়া নৌবহর’ ও বিশ্বব্যাপী মধ্যস্বত্বভোগীদের দমন করা, যারা ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান থেকে এই ধরনের পণ্য কেনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো তেহরানকে অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহের সুযোগ করে দিচ্ছে। আর এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহী, হামাসসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় এবং যুদ্ধপরিস্থিতি উসকে দিতে। মার্কিন সরকারের মতে, ইরান সরকারের এই নীতিমালার কারণে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং এতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় কোম্পানি ছাড়াও তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ