বসুন্ধরার চেয়ারম্যানসহ পরিবারের ২২ কোম্পানির শেয়ার ও ৭০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
Published: 30th, April 2025 GMT
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর পরিবাবের সাত সদস্যের নামে ২২ কোম্পানিতে থাকা ৭৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২টি শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের তথ্য মতে এসব শেয়ারের বাজার মূল্য ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা। এর পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যদের নামে ৭০টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৯ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬৬ টাকা ও ১০ হাজার ৫৩৮ মার্কিন ডলার (বর্তমান বাজারমূল্যে ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা) অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা মালিকানা শেয়ার এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের তথ্য মতে, যেসব কোম্পানিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শেয়ার জব্দ করার আদেশ হয়েছে সেগুলো হলো, ইস্ট ওয়েস্ট প্রপারটি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড, বসুন্ধরা স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, বসুন্ধরা হর্টিকালচার লিমিটেড, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড, বসুন্ধরা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড, বসুন্ধরা ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, ক্রিস্টাল প্রপার্টিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা মাল্টি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইউনাইটেড সিটি টুইন টাওয়ার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, টগি রিয়েল স্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, বসুন্ধরা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড, বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, বসুন্ধরা টিস্যু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ প্রাইভেট লিমিটেড।
দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে এসব কোম্পানিতে ৭৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২টি শেয়ার রয়েছে, যার মূল্য ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা। এ ২২টি কোম্পানি ছাড়াও আরজেএসসি (যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর) নিবন্ধিত আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে বসুন্ধরার স্বার্থ রয়েছে, এমন শেয়ার হস্তান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব শেয়ার হস্তান্তর করা হলে দুদকের অনুসন্ধান শেষে মামলা করা, অভিযোগপত্র দাখিল, বিচার শেষে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যাবে না।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৭০টি ব্যাংক হিসাব পেয়েছে দুদক। আদালতে পাঠানো আবেদনে দুদক বলেছে, ১৯৯৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসব ব্যাংক হিসাবে ২ হাজার ৭৫ কোটি ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫৭ টাকা ও ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৪ মার্কিন ডলার লেনদেন হয়েছে। বর্তমানে এসব ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬৬ টাকা ও ১০ হাজার ৫৩৮ মার্কিন ডলার জমা রয়েছে ।
সম্পদ অবরুদ্ধ করার আবেদনে দুদক আদালতকে বলেছে, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবর দখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে আহমেদ আকবর সোবহান, তাঁর ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, সাদাত সোবহান, সাফিয়াত সোবহান, সাফওয়ান সোবহান, সায়েম সোবহানের স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, সাদাত সোবহানের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান এবং সাফওয়ান সোবহানের স্ত্রী ইয়াশা সোবহানের নামে ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে স্লোভাকিয়া ও সাইপ্রাসে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বিদেশি পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা।
দুদক আরও বলেছে, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা স্লোভাকিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরে একাধিক কোম্পানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাবিব ব্যাংক লিমিটেডে এবং সাইপ্রাসের ইউরো ব্যাংকে তাঁদের বিপুল অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। সাইপ্রাসে বাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে এসব সম্পদ কিনেছেন।
এর আগে গত ২১ নভেম্বর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। সম্পদ জব্দের আদেশের তালিকায় নাম থাকা অন্যরা হলেন আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম, তাঁদের তিন ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান এবং তিন পুত্রবধূ সাবরিনা সোবহান, সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান ও ইয়াশা সোবহান। দুদক আদালতকে এই আটজনের প্রায় ১৪৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ, সম্পদ কেনা ও ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য জানায়। এর বাইরে বিদেশে সম্পদ কেনা, বিনিয়োগ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর টাকার পরিমাণ দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
ঢাকার আদালত গত ২১ অক্টোবর আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। ৬ অক্টোবর তাঁদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র জ ল ম ট ড
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।