বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক
Published: 30th, April 2025 GMT
অনুমতি না নিয়েই ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন উল্লাপাড়ার ভাটবেড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। বুধবার গাছ কাটার বিষয় জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষক বলছেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই গাছ কাটা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস বলছে, প্রধান শিক্ষক আবেদন করেছেন। তাঁকে এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।
দুর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও ভাটবেড়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম অভিযোগে জানান, প্রধান শিক্ষক কাউকে না জানিয়ে স্কুল চত্বরের ১৮টি ইউক্যালিপটাস গাছ দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। বুধবার সকালে ক্রেতারা গাছগুলো কাটতে এলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। ততক্ষণে কয়েকটি গাছ কাটা হয়ে গেছে। পরে প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য ওয়াশ ব্লক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চত্বরের গাছগুলো বিক্রি করে সেটা বসানো হবে। শিক্ষা অফিসে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করলে শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক গাছ বিক্রির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনটি জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে পাবনা বন বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এর আগেই গাছ কেটে ফেলা অবৈধ। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেটে ফেলা গাছগুলো মাঠে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর এগুলো নিলামে বিক্রি হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, সরকারি অনুমোদন ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গাছ বিক্রি বা কাটার কোনো বিধান নেই। বিধি ভঙ্গ করে কেউ এ কাজ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, গাছ প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। প্রয়োজন হলে কাটতে হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উল ল প ড়
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা