বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি করা হয় গত ২৭ মার্চ; কিন্তু সরকার মনোনীত সেই কমিটিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না আর্চারির বিশ্ব সংস্থা ওয়ার্ল্ড আর্চারি ফেডারেশন। গত ২৮ এপ্রিল আর্চারি ফেডারেশনকে ওয়ার্ল্ড আর্চারি ফেডারেশনের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যথাযথ নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়া গঠিত এ কমিটিকে আমরা স্বীকৃতি দিতে পারি না।’

তবে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদের দাবি, ‘স্বীকৃতি দিচ্ছে না, ব্যাপারটা এমন নয়। অ্যাডহক কমিটি কীভাবে গঠিত হলো, কেন হলো, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে তারা।’

অ্যাডহক কমিটিকে দেওয়া এটি বিশ্ব আর্চারির দ্বিতীয় চিঠি। এ মাসেই দেওয়া প্রথম চিঠিতে কেন কমিটি ভেঙে সরকার মনোনীত কমিটি হয়েছে, জানতে চাওয়া হয়েছিল সেই ব্যাখ্যা।

চিঠির ব্যাখাও দিয়েছে ফেডারেশন। এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে নতুন সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘চিঠির উত্তরটা ড্রাফট করে দেয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আমরা তা পাঠিয়ে দিই বিশ্ব আর্চারির কাছে। চিঠিতে বিস্তারিত ব্যাখা রয়েছে কমিটি বদলের ব্যাপারে। এরপর দ্বিতীয় চিঠি আমরা পেলাম। সেটির উত্তরও আমরা দেব।’

কী উত্তর দেবেন জানতে চাইলে তানভীর আহমেদ বলেন, ‘কী পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি হয়েছে, সে সবই জানানো হবে। আর যা যা জানতে চাওয়া হয়েছে, সবই জানাব।’ বিশ্ব আর্চারির দ্বিতীয় চিঠির শেষে বলা হয়েছে, ‘আমরা খুশি হব যদি আপনারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচনের সময়সূচি আমাদের জানাতে পারেন।’

এতেই মোটামুটি পরিষ্কার যে ওয়ার্ল্ড আর্চারি অনির্বাচিত কমিটি মানছে না। তবে আর্চারির নতুন সাধারণ সম্পাদকের দাবি, সেটি হলে চীনের সাংহাইয়ে ৬-১১ মে অনুষ্ঠেয় আর্চারি বিশ্বকাপ স্টেজ-টুতে অংশ নিতে পারত না বাংলাদেশ; কিন্তু বাংলাদেশ দল তাতে অংশ নিতে রোববার চীনে যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘আমাদের তো কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি খেলার ব্যাপারে। ফলে মনে করছি না যে আমরা কোনো সংকটে পড়ব।’

আর্চারির নতুন কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে তাদের প্রথম সভা করে গত ২৮ এপ্রিল। ফেডারেশন কার্যালয় বাদ দিয়ে কেন ক্রীড়া পরিষদে সভা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আগ্রহেই সেখানে সভা হয়েছে।’ প্রথম সভায় স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্চারি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাডহক কমিটি। সভার ছয় ঘণ্টা পর ওই রাতেই ওয়ার্ল্ড আর্চারির দ্বিতীয় চিঠি আসে ফেডারেশনের কাছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ল ড আর চ র ব শ ব আর চ র আর চ র র কম ট ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ