হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলমাছড়া অভয়ারণ্যে দুর্লভ প্রজাতির এশিয়াটিক কালো প্রজাতির ভালুকের বিচরণের খবর পাওয়া গেছে। বাচ্চাসহ একটি ভালুকের বিচরণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় বনে প্রবেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে বন বিভাগ।
তেলমাছড়া বনের বনরক্ষী সাদেকুর রহমান জানান, এশিয়াটিক কালো প্রজাতির একটি ভালুককে তিনটি বাচ্চাসহ সাতছড়ি, তেলমাছড়া ও সালটিলায় বনে বিচরণ করতে দেখা গেছে। বাচ্চা থাকা অবস্থায় ভালুক হিংস্র থাকে। এ কারণে বনরক্ষীরা খুব সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, জাতীয় উদ্যান ঘোষণায় তেলমাছড়া বনে বিপন্ন প্রজাতির ভালুকের সংখ্যা বাড়ছে।
কালো ভালুকের একটি দলের অভয়ারণ্যে বিচরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রাও। বনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন হৃদয় বলেন, এখন সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বনে ভালুকসহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভালুকের দেখা মেলায় মানুষ এখন ভয়ে আগের মতো বনে যায় না।
তেলমাছড়া বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, সম্প্রতি কিছু শ্রমিক পাহাড়ের বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বাচ্চাসহ ভালুকটিকে দেখেছে। এ কারণে পর্যটকদের বনে প্রবেশ করতে সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বনরক্ষীদের টহল কার্যক্রমকেও জোরদার করা হয়েছে।
মাধবপুরের তেলমাছড়ার বনে এশীয় ভালুকের উপস্থিতিকে সুখবর বলে অভিহিত করে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, এক সময় দেশের পার্বত্য অঞ্চল বিশেষ করে সিলেট-চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের গহিন অরণ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালুকের বাস ছিল। কিন্তু বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, বনে অনুপ্রবেশ ও শিকার এবং পাচারের কারণে প্রাণীটি বিলুপ্ত হতে বসেছে। যদিও গহিন বনে কিছু ভালুক এখনও টিকে আছে। তেলমাছড়া ও সাতছড়ি, রঘুনন্দন বনে বাচ্চাসহ ভালুকের দেখা মেলা জীববৈচিত্র্যের জন্য ভালো সংবাদ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।