গাজায় দখলদার ইসরায়েলের ঘোষিত অবরোধ তিন মাসে গড়িয়েছে, যা ইতিহাসের দীর্ঘতম অমানবিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। খাদ্যাভাবে বাসিন্দারা এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। গাজার উত্তরে ভারী কামান ও বিমান হামলার কারণে আরও ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

হামলায় বেঁচে যাওয়া নাগরিকরা পরিস্থিতি ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরি ইসরায়েলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছে। তবে রাশিয়া ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছে।   

আলজাজিরা জানায়, গাজাজুড়ে বিমান হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। বাসিন্দারা আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। তারা বর্ণনা করেছেন, ইসরায়েলি বোমায় আবাসিক ভবন কেঁপে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে, ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে।

আইসিজের শুনানির তৃতীয় দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষা করে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। হাঙ্গেরিও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। দু’দেশই ২০২৩ সালে ফিলিস্তিন রক্ষায় জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার শুনানির দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকা শুনানিতে ইসরায়েলের কড়া নিন্দা করে। আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আইনি দলের জশ সিমন্স। তিনি বলেন, হামাস জাতিসংঘের সংস্থাটিকে তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করছে। হাঙ্গেরির কূটনীতিক গের্গো কোকসিস আইসিজের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণ ও ইহুদিবিদ্বেষ সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। শুনানিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগের পরিচালক মাকসিম মুসিখিন বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড মানবতার জন্য ভয়াবহ সংকট ডেকে আনছে। দখলদার শক্তি আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। 

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দির বিচারে মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এসব বন্দিকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।   

ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির মতে, ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯৮ জনকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী ১৫ মে থেকে সুইজারল্যান্ডে হামাস নিষিদ্ধ হচ্ছে। গতকাল দেশটির সরকার জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডকে হামাস যাতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। ১৮ মাসে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে গত রাতে তিনটি পৃথক হামলা হয়। একটি ভবনে আটজন নিহত হন।  আশপাশের ভবনগুলোতে ভূমিকম্পের দশা সৃষ্টি হয়। অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের খুঁজে ফিরছেন স্বজন। অন্য দুটি হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাদের সবাই একই পরিবারের। জাবালিয়া শহরেও এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।    

গাজার হাসপাতালগুলো রোগী ও আহতদের ভিড়ে উপচে পড়ছে। চিকিৎসাকর্মীরা সতর্ক করেছেন, সরঞ্জামের অভাবে আহতরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নীরবে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। সহজলভ্য ব্যথানাশক ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিবারগুলো অপর্যাপ্ত আটা-ময়দার সঙ্গে গুঁড়ো পাস্তা মিশিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র আইস জ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান