আইসিজের শুনানিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া
Published: 1st, May 2025 GMT
গাজায় দখলদার ইসরায়েলের ঘোষিত অবরোধ তিন মাসে গড়িয়েছে, যা ইতিহাসের দীর্ঘতম অমানবিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। খাদ্যাভাবে বাসিন্দারা এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। গাজার উত্তরে ভারী কামান ও বিমান হামলার কারণে আরও ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
হামলায় বেঁচে যাওয়া নাগরিকরা পরিস্থিতি ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরি ইসরায়েলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছে। তবে রাশিয়া ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছে।
আলজাজিরা জানায়, গাজাজুড়ে বিমান হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। বাসিন্দারা আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। তারা বর্ণনা করেছেন, ইসরায়েলি বোমায় আবাসিক ভবন কেঁপে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে, ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে।
আইসিজের শুনানির তৃতীয় দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষা করে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। হাঙ্গেরিও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। দু’দেশই ২০২৩ সালে ফিলিস্তিন রক্ষায় জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার শুনানির দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকা শুনানিতে ইসরায়েলের কড়া নিন্দা করে। আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আইনি দলের জশ সিমন্স। তিনি বলেন, হামাস জাতিসংঘের সংস্থাটিকে তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করছে। হাঙ্গেরির কূটনীতিক গের্গো কোকসিস আইসিজের বিরুদ্ধে রাজনীতিকরণ ও ইহুদিবিদ্বেষ সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। শুনানিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগের পরিচালক মাকসিম মুসিখিন বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড মানবতার জন্য ভয়াবহ সংকট ডেকে আনছে। দখলদার শক্তি আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দির বিচারে মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এসব বন্দিকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির মতে, ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯৮ জনকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী ১৫ মে থেকে সুইজারল্যান্ডে হামাস নিষিদ্ধ হচ্ছে। গতকাল দেশটির সরকার জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডকে হামাস যাতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। ১৮ মাসে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে গত রাতে তিনটি পৃথক হামলা হয়। একটি ভবনে আটজন নিহত হন। আশপাশের ভবনগুলোতে ভূমিকম্পের দশা সৃষ্টি হয়। অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের খুঁজে ফিরছেন স্বজন। অন্য দুটি হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাদের সবাই একই পরিবারের। জাবালিয়া শহরেও এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।
গাজার হাসপাতালগুলো রোগী ও আহতদের ভিড়ে উপচে পড়ছে। চিকিৎসাকর্মীরা সতর্ক করেছেন, সরঞ্জামের অভাবে আহতরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নীরবে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। সহজলভ্য ব্যথানাশক ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিবারগুলো অপর্যাপ্ত আটা-ময়দার সঙ্গে গুঁড়ো পাস্তা মিশিয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান
ইসরায়েলের হামলার জবাবে নতুন করে ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর জেরুজালেম ও তেল আবিবে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে একজন নিহত এবং প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত নয়টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হারেৎজ সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি উঁচু ভবনে আঘাত হানায় ভবনটির নিচের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল আবিবের শহরতলির রামাত গানেও নয়টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
ইরান দেড় শতাধিক মিসাইল ছুঁড়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদপত্রটি। এদিকে কিছুক্ষণ আগে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে) জেরুজালেমের আকাশে ফের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের একটি নতুন ঢেউ ইসরায়েলের দিকে এগিয়ে আসছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের দিকে আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। আইডিএফ এর আগে নতুন করে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল এবং বলেছিল যে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলায় হতাহতের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। নৃশংস এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছে। দখলদার বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান।