সুনামগঞ্জের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি, শ্রমিকদের দুর্গতি
Published: 2nd, May 2025 GMT
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় একসময়ের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কৃষি পদ্ধতিতে লেগেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, বদলে যাচ্ছে চাষপদ্ধতি; যে কারণে কৃষিশ্রমিকদের বন্দোবস্তে পরিবর্তন আসছে; পেশা বদলাচ্ছে অনেকে।
সুনামগঞ্জে ফসলি জমিতে পানি সেচ দেওয়া হতো সনাতন পদ্ধতির কোণ বা দোংগা দিয়ে। লাঙল-জোয়াল ব্যবহার করে গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষের ধারা বহু প্রাচীন হলেও বর্তমানে সেই জায়গা নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ারট্রিলারসহ প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্র। ধান রোপণ ও কাটায় প্রযুক্তিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।
ফলে কৃষিতে কর্মসংস্থান হারাচ্ছে শ্রমিক। অনিচ্ছায় পেশা বদলের যে ঝক্কি, তাতে বাড়ছে দুর্গতি। কৃষিকাজে অভিজ্ঞ শ্রমিক বাধ্য হয়ে কাজের খোঁজে নগরমুখী হচ্ছেন, কেউ কেউ এলাকায় ইজিবাইক চালাচ্ছেন; কেউবা হচ্ছেন রিকশা চালক ও রাজমিস্ত্রি।
আরো পড়ুন:
চা শ্রমিকদের জীবন: সামান্য বেতনে বেঁচে থাকার সংগ্রাম
সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক দিলাল উদ্দিন। কৃষি শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে ১ মে (বৃহস্পতিবার) রাইজিংবিডি ডটকম কথা বলে তার সঙ্গে।
একসময় শত শত শ্রমিক নিয়ে বৈশাখ মাসের রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, শরীরের ঘাম ঝরিয়ে সোনার ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত থাকতেন মাঠে। বর্তমানে তার আর সেই অবস্থা নেই।
রাইজিংবিডি ডটকমকে দিলাল উদ্দিন বলেন, “আগে হাওরের কৃষকশ্রমিকের অভাব ছিল না। বর্তমানে সব মেশিনের কারবার, প্রথমে এক মেশিনে হাল চাষ করি, আরেক মেশিন দিয়ে ধানের জালা রুই, আরেক মেশিন দিয়ে ধান কাটাসহ মাড়াই দেই।”
“দু-একজন শ্রমিক দিয়েই এখন এত সব কাজ হচ্ছে। আগে এগুলো শ্রমিকরা করতেন। বৈশাখ এলে শ্রমিকদের আয়ের একটা পথ বের হতো। এই মেশিনগুলো বের হওয়ায় কৃষি-শ্রমিকদের ক্ষতি হয়েছে। আর বড়লোকদের জন্য আবার মেশিন খুব ভালো হয়েছে,” বলেন তিনি।
দিলাল উদ্দিন বলছেন, কৃষিশ্রমিকদের কাজ করিয়ে আগে তার ৫০ থেকে ৬০ মণ ধান গোলায় উঠত। এখন সব মেশিনে করলেও গোলায় ওঠে সামান্যই।
তিনি বলেছন, “ধান কেটে মেশিনওয়ালাদের দেওয়া লাগে ২ হাজার টাকা, ধান ভাঙাতে (চাল বানাতে) ৫০০। এর আগে আবার তেলের মেশিন চালিয়ে পানি দেওয়া লাগে হাজার হাজার টাকার। সব মিলিয়ে আমরা শেষ।”
সুনামগঞ্জের হাওরে ১ হাজার ১৫৫টি মেশিনের পাশাপাশি এবার ধান ওঠানোর কাজ করছেন প্রায় দেড় লাখ কৃষিশ্রমিক।
সুনামগঞ্জ সদরে ‘দেখার হাওর’ বেশ পরিচিত একটি হাওর। সেখানে কৃষক মঞ্জুর আলীর সঙ্গে কথা হলে রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন কৃষিকাজের জন্য শ্রমিক নিতে হলে ৫০০ টাকার বেশি দিতে হয়, তাও এই টাকা দিলেও তাদের পোষায় না। কারণ নিত্যপণ্যের যে চড়া দাম, তেল বলেন আর পেঁয়াজ বলেন, সব কিছুর দাম সীমাহীন।”
“তো, এই কৃষিশ্রমিকরা কেমনে বাঁচবেন?” প্রশ্ন ছুড়ে দেন মঞ্জুর আলী।
তিনি বলছেন, কৃষকরা এখন ধান চাষ করে মৌসুম শেষে খরচ হিসাব করে দেখেছেন ধানের যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তা ব্যয়ের প্রায় সমান। কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করেও পোষানো যাচ্ছে না; আবার শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়েও একই ফল দাঁড়াচ্ছে।
মঞ্জর আলী বলছেন, “এসব কারণে বেশিরভাগ কৃষিশ্রমিক অন্য কাজের কাজের পথে হাঁটছেন। আমাদের এই এলাকায় যারা আগে কৃষিকাজ করতেন, তাদের মধ্যে অনেক যুবক ঢাকা, চট্রগ্রামে চলে গেছেন কৃষিকাজে লাভ নেই দেখে।”
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, “এবার জেলার হাওরগুলোতে ধান কাটার কাজে রয়েছেন প্রায় দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। তাদের মধ্যে স্থানীয় শ্রমিকের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকও কাজ করছেন।
সুনামগঞ্জের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রমিকদের পাশাপাশি ধানের কাজ করছে ১ হাজার ১৫৫টি মেশিন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৩৫টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ১২০টি রিপার মেশিন।”
হাওরে মেশিন আসায় এখন উভয় সংকটে পড়তে হচ্ছে বলে রাইজিংবিডি ডটকমকে জানালেন কৃষক ফরমুজ মিয়া।
তিনি বলেছেন, “আমরা আগে গৃহস্থ করেছি, খুব আনন্দের সাথে। দেশে নাইয়া (শ্রমিক) আইতো ধান কাটার জন্য, এখন নাইয়া নাই। এখন মেশিনে ধান কাটে। মেশিনে দুই হাজার টাকা করে ধানের কিয়ার কাটছি। কিন্তু মেশিনও কম, দুই একটা মেশিনে কাভার করা যায় না। বাড়তি টাকা দিয়ে মেশিন এনে ধান কাটানো লাগে।”
“মেশিনের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এখন মেশিনও নাই, নাইয়াও নাই। বড় বিপাকেই পড়ছি আমরা,” যোগ করেন ফরমুজ মিয়া।
তানিম তালুকদার। আগে কৃষি শ্রমিক ছিলেন। সেই পেশা ছেড়ে দিয়ে টাইলস মিস্ত্রি হয়েছেন। তার সঙ্গে কথা হয়েছে রাইজিংবিডি ডটকমের।
তিনি বলেন, কৃষি কাজ করে এখন আর পেট চলে না। বাধ্য হয়েই এখন এই (টাইলস মিস্ত্রি) কাজে এসেছি। প্রতি মাসে কাজ করতে পারলে মোটামোটি চলা যায়।”
আরেকটি বাস্তবতার কথা বলছেন তানিম তালুকদার। তিনি বলছেন, ধানের কাজ ছাড়া সারা বছর তেমন কিছু করার থাকে না। তার সঙ্গে এখন প্রযুক্তিযন্ত্র এসেছে; ফলে কৃষিশ্রমিকদের কাজ খুবই কমে গেছে।
তিনি বলছেন, “এখন মেশিন আসায় ১০ জন শ্রমিকের কাজ সেটি একাই করছে। ফলে ধানের মালিকরা আর আমাদের ডাকে না। নিরুপায় হয়েই টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছি।”
সুনামগঞ্জের ‘দেখার হাওরে’ পাকা ধানের ক্ষেত।
কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণের কথা বলছেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুল। তার বক্তব্য অনুযায়ী, জমির মালিকানা বর্তমানে অনেক কৃষকের কাছে নেই। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭২ শতাংশ কৃষক ভূমিহীন।
তিনি বলছেন, “যেহেতু কৃষকের কাছে জমি নেই, সে এমনিতেই সর্বহারা। কিন্তু তার তো কাজের দরকার, কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শহরে গিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন, হোটেলে কাজ করছেন, যা কাজ পাচ্ছেন তাতেই শ্রম দিচ্ছেন।”
কৃষিতে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের বহুমুখী সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বাস্তবসম্মত সমবায় খামার গড়ে তোলার কথা বলছেন সাইফুল আলম ছদরুল।
তিনি বলছেন, “সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হলে কৃষকদের দিয়ে খামারের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিকল্পিত আধুনিকায়ন করতে হবে।”
শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রটা সুনামগঞ্জসহ সারা দেশেই সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য করে শ্রমিক নেতা ছদরুল বলছেন, “তবে সুনামগঞ্জে একেবারে এই সংকটটা বেশি। সুনামগঞ্জে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের যে সম্ভাবনা ছিল, সে দিকে তো সরকারের নজর নেই।”
তিনি বলছেন, “শ্রমিকদের জন্য আরো কিছু ক্ষেত্র ছিল আমাদের সুনামগঞ্জ অঞ্চলে। বালু ও পাথর মহালে কৃষকরা কাজ করতে পারতেন, এরপর হাওরেও কৃষকরা জেলের কাজ করতেন। এগুলো রাষ্ট্রীয় কিছু নীতির দুর্বলতার কারণে চলে গেছে ব্যক্তির হাতে। বালু ও পাথর মহাল লুটপাট হয়েছে। ফলে শ্রমিকদের কর্মের আরো সংকট দেখা দিয়েছে।”
কৃষিশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ার প্রভাবে সুনামগঞ্জে দারিদ্র্য বেড়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে ছদরুল বলছেন, “এভাবে চলতে থাকলে তা আরো বৃদ্ধি পাবে।”
কৃষকদের ভাষ্য তুলে ধরে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সুনামগঞ্জে এবার কোনো শ্রমিক সংকট নেই। এখন প্রতি বছরই শ্রমিকের পাশাপাশি মেশিনে ধান কাটা হয়।”
“কিন্তু আগে যখন মেশিন বের হয়নি, তখন জামালপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকরা শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে আসতেন। কিন্তু যন্ত্রের ব্যবহারে বৃদ্ধি পাওয়াতে কৃষকরা এখন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। এতে দ্রুত ধান ঘরে তোলা যায়; আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়।”
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন মগঞ জ র র ব যবহ র ক জ করত ক জ করছ র হ ওর র জন য ক জ কর ক ষকর বলছ ন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট শুরু, আলোচনায় জীবনযাত্রার ব্যয় ইস্যু
অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।
নির্বাচনে বড় ইস্যু: এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন ব্যয় নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল আসতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইলেকটোরাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু করবে। মূলত এই প্রাথমিক ফল থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে কে দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবেন।
নির্বাচনে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না, বরং বিদেশে থাকা দেশটির ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ৮৩টি দেশে ১১১টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। এর মধ্যে বার্লিন, হংকং, লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানের বসবাস রয়েছে।
দেশটির ভোটারদের জন্য ভোট দেয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ বছর বয়সী সবার জন্য ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৩ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতেই এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে।
দেশটিতে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি: অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি এবং রক্ষণশীল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন। কোনও দলের সরকার গঠনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের অন্তত ৭৬টি আসন পেতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে দলগুলো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই রাজ্য ও ফেডারেল সরকার নির্বাচনে ছোট দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রতি তিনজন ভোটারের একজন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্যদের ভোট দিয়েছিলেন। লেবার, দ্যা লিবারেল, দ্যা ন্যাশনালস এবং দ্যা গ্রিন মোটামুটি আলোচনায় থাকে। যদিও আসলে ১২টি দল সিনেটে আর আটটি দল প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।
সিনেটর পলিন হানসন ১৯৯৭ সালে ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ওয়ান ন্যাশন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। হানসন প্রায়ই নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন। তিনি সিনেটে বুরকা পড়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন। তার দলের নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দ্য ন্যাশনালসের সাবেক সদস্য বব কাট্টের প্রায় ৫০ বছর ধরে এমপি এবং তিনি তার বক্তৃতার স্টাইলের জন্য পরিচিত। ২০১৭ সালে সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়ে গণভোটের সময়ে তিনি এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
বিলিওনিয়ার ক্লাইভ পালমারের দলের নাম ছিলো ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টি। গত নির্বাচনে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেও মাত্র একটি আসন পেয়েছিলেন সিনেটে। এবার পালমার ট্রাম্পেট অফ প্যাটরিওটস পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। এছাড়া সেন্ট্রাল এলায়েন্স দলের একমাত্র এমপি হলেন রেবেকা শারকি। ইতোমধ্যেই তিনি কোয়ালিশন নেতা পিটার ডাটনের সাথে যোগসূত্র রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য সেবা ইস্যু
বিবিসির টিফানি টার্নবুল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির সূচনা হয়েছে প্রায় চার দশক আগে। সেখানে মেডিকেয়ার নামে একটি জনবীমা প্রকল্প চালু আছে। এর আওতায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বিষয়টি প্রায়ই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। কারণ প্রয়োজনের সময় অনেককেই এই সেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বলতে গেলে সর্বজনীন এই স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি অনেকটাই খুঁড়িয়ে হাঁটছে। সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তা যথেষ্ট হচ্ছে না। জেনারেল প্রাকটিশনারসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা যাচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। রোগীদের খরচও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশটিতে অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
অভিবাসন আলোচনায় কেন
অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম অংশেরই জন্ম দেশটির বাইরে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির পরিচিত 'মাইগ্রেশন ন্যাশন' হিসেবে, যেখানে অভিবাসীরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো বাসস্থান খরচ বাড়ছে। পিটার ডাটন বলেছেন তিনি অভিবাসীরা যেন সহজেই ভোট দিতে পারেন সেজন্য ফাস্ট ট্রাক সিটিজেনশিপ চালু করবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সীমিত করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাশ হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।