বাংলাদেশের গণমাধ্যম: সংকট থেকে বের হয়ে আসার পথ কী
Published: 3rd, May 2025 GMT
গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত উঠে আসে সমাজের বহুমুখী সংকটের চিত্র। এসব সংকটের ভিড়ে খোদ গণমাধ্যমের সংকটই আড়ালে পড়েছে। সংকট নিয়েই গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে দিন দিন এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। সংকটের সুযোগ নিয়ে একটি শ্রেণি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভখ্যাত এই গণমাধ্যমকে সংকটে রেখে দেশে কখনো সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
গত তিন দশকে বেসরকারি খাতের গণমাধ্যমে যে ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে, তা মূলত অপরিকল্পিত। যারা যেভাবে পেরেছে, গণমাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে। গণমাধ্যমে বিনিয়োগের উৎস নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। এর ফলে গণমাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে। অনেকেই নিজেদের ব্যবসাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
আবার একই গোষ্ঠীর মালিকানায় একাধিক সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকা পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে গণমাধ্যমে গোষ্ঠীগত প্রভাব কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এতে গণমাধ্যমে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ভিত্তিও দুর্বল হচ্ছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে একই মালিকানার অধীন একাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের আরেকটি সংকট হলো আইনগত সংকট। গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট এমন কিছু আইন আছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য প্রতিবন্ধক। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার জন্য প্রযোজ্য এমন কিছু আইনের সংস্কারে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে। কমিশন মনে করে, সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত হলেও তাতে কিছু অস্পষ্টতা ও অযৌক্তিক সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত কিছু আইন বাক্স্বাধীনতা ও মুক্ত সংবাদমাধ্যমের পথে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এর পাশাপাশি বেশকিছু নতুন আইন প্রণীত হয়েছে, যার ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতা ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতে, স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশে পেনাল কোড (দণ্ডবিধি) ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-সহ আরও কয়েকটি আইনের সংশোধন প্রয়োজন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
বাক্স্বাধীনতা ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশের চর্চার মতো সুরক্ষিত অধিকারের জন্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময়ে হয়রানি ও শারীরিক আক্রমণের শিকার হতে হয়। সাগর-রুনি দম্পতির বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় জনধারণা তৈরি হয়েছে যে সাংবাদিকদের মারলে কিছুই হয় না। বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনা করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশের একটি খসড়াও সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে রয়েছে বহুমুখী সমস্যা। স্বল্প সময়ে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকার ও গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বিত উদ্যোগে দেশের গণমাধ্যম সংকট কাটিয়ে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের সব ধরনের গণমাধ্যমের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য এখনো কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। বিষয়টি বিবেচনা করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে। এই কমিশন হবে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত। গণমাধ্যম কমিশন সাংবাদিকদের আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রতিপালন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, সারা দেশে কর্মরত সাংবাদিকদের নিবন্ধন ও তালিকা প্রস্তুত করবে। সম্প্রচার ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ারও থাকবে প্রতিষ্ঠানটির হাতে।
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। প্রচারসংখ্যা বাড়ানোর পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিজ্ঞাপনের জন্য বাড়তি দর আদায়; দ্বিতীয়ত, কম শুল্কে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা। এসব অসংগতি বন্ধে সংবাদপত্রের সঠিক প্রচারসংখ্যা নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা তদারকির দায়িত্বে রয়েছে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি)। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিষ্ঠানটি এখনো মুদ্রিত সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্য প্রচারসংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ডিএফপির মিডিয়া তালিকায় থাকা ঢাকা থেকে প্রকাশিত ৫৯০টি পত্রিকার ঘোষিত প্রচারসংখ্যার যোগফল দৈনিক প্রায় পৌনে দুই কোটি। অথচ হকারদের হিসাবে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্রি হওয়া পত্রিকার সংখ্যা দৈনিক ১০ লাখের বেশি নয়। এই অসংগতির দ্রুত সমাধানের জন্য প্রচারসংখ্যা নির্ধারণের পদ্ধতিগত সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে আশার কথা হলো, সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো.
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সংখ্যাগত আধিক্য অবাক হওয়ার মতো। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকা ১ হাজার ৩৪০টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ৫৪৬টি এবং ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হয় ৭৯৪টি। দেশে সাপ্তাহিক পত্রিকা রয়েছে ১ হাজার ২১৮টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ৩৫৫টি এবং ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হয় ৮৬৩টি। এ ছাড়া দেশে বেশ কিছুসংখ্যক পাক্ষিক, মাসিক, দ্বিমাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্রিকা রয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইতিমধ্যে অনেক পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু পত্রিকা অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। আবার কিছু কিছু পত্রিকা শুধু বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ লাভজনক পরিমাণ বিজ্ঞাপন পাওয়া গেলে সেদিন সীমিত সংখ্যায় পত্রিকা ছাপানো হয়। অন্যান্য দিন ছাপানো হয় না। এভাবে সংবাদপত্র চলতে পারে না। সংবাদপত্র প্রকাশের সঙ্গে জড়িত সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে একটি শৃঙ্খলিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা প্রয়োজন। আর বাংলাদেশে আদৌ এত ছাপানো পত্রিকার প্রয়োজন আছে কি না, সেটাও ভাবতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত হচ্ছে আর্থিক সচ্ছলতা। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের গণমাধ্যম কখনোই সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ছিল না। বিজ্ঞাপনের বাজারে এখন প্রথাগত ও ডিজিটাল মিডিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা। দেশে ছাপানো পত্রিকার বিক্রি দ্রুত কমছে। সম্প্রচারমাধ্যমও দিন দিন দর্শক-শ্রোতা হারাচ্ছে। অনলাইনে পত্রিকার পাঠক বাড়লেও আয় তেমন বাড়েনি।
বর্তমানে দেশে কোনো সংবাদমাধ্যমই লাভজনক নয়। দুয়েক দশক ধরে নিজের আয়ে চলা এবং প্রসার লাভ করা পত্রিকাগুলোও এখন ব্যয় সংকোচন করছে। বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলেরও একই অবস্থা। এই অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মালিকানার স্বচ্ছতা। গণমাধ্যমের মালিকানা থেকে সম্পাদকীয় নীতিকে আলাদা করা জরুরি।
মালিক শুধু আর্থিক নিশ্চয়তা দেবেন, কিন্তু দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না। একইভাবে, প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা মতামতে মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকলে তার স্পষ্ট ঘোষণাও থাকা প্রয়োজন। গণমাধ্যমে বিনিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে গণমাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হবে এবং অসৎ উদ্যোক্তা নিজেরাই বিদায় নেবেন। এতে গণমাধ্যমে মালিকের হস্তক্ষেপ অনেকাংশে কমবে।
গণমাধ্যমকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, সংবাদপত্রকে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়া; ব্যাংকঋণ সহজলভ্য করা; সংবাদপত্রে বিনিয়োগে কর রেয়াত প্রদান এবং সরকারি বিজ্ঞাপনের হার অন্তত ১০ গুণ বৃদ্ধি।
দেশের গণমাধ্যম আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়েও সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমের সংখ্যাধিক্য ও দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকারত্বের পটভূমিতে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা ক্রমেই কমছে।
বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনা করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সারা দেশের সাংবাদিকদের স্থায়ী চাকরির শুরুতে একটি অভিন্ন ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে, যা হবে সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মূল বেতনের সমান এবং প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মূল বেতন সমন্বয় হবে। ঢাকার বাইরে কর্মরত সাংবাদিকদের বেতন ও মর্যাদার বৈষম্য দূর করা, সাংবাদিকদের বাড়িভাড়া, অবসর ভাতা কিংবা গ্র্যাচুইটি প্রদানের প্রস্তাবও করেছে কমিশন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে রয়েছে বহুমুখী সমস্যা। স্বল্প সময়ে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকার ও গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বিত উদ্যোগে দেশের গণমাধ্যম সংকট কাটিয়ে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
মো. মামুন অর রশিদ বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সদস্য এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব দপত র র স গণম ধ যমক স প র শ কর ব দ কত র স ব ধ নত ন র জন য ব স তবত আর থ ক প রস ত সমস য সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দাফনফেরত স্বজনের ওপর ককটেল হামলা
মুন্সীগঞ্জে পুরোনো বিরোধের জেরে নিহত শ্রমিক লীগ কর্মী সানা মাঝির (৪২) লাশ দাফনের পরপরই তাঁর স্বজনদের লক্ষ্য করে ককটেল হামলা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মধ্য মাকহাটি গ্রামে এ হামলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ককটেল হামলার সময় ঘটনাস্থলের অদূরে রজতরেখা নদীর অন্য প্রান্তে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
সানা মাঝি মাকহাটি গ্রামের প্রয়াত মোহাম্মদ মাঝির ছেলে। তিনি মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর গ্রাম ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একই উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের ডেকরাপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মাকহাটি গ্রামের মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে সানা মাঝিকে মারধর করে প্রতিপক্ষ। সংবাদ পেয়ে পুলিশ অচেতন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাকহাটি গ্রামের মোহাম্মদ মাঝির পরিবারের সঙ্গে বিরোধ চলছিল শামসুল মাঝির পরিবারের। এর জের ধরে ১৯৯৭ সালে হত্যার শিকার হন মোহাম্মদ মাঝি। এ হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুন হন শামসুল মাঝির ছেলে বিএনপি কর্মী শিপন মাঝি। এ হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ প্রয়াত মোহাম্মদ মাঝির ছেলে খলিল মাঝিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সানা মাঝি ও তাঁর চার ভাই দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। ২০১৬ সালে কারামুক্ত হয়ে গ্রামে ফেরেন তারা। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়। তবে শিপন হত্যার ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই বাবু মাঝির মনে ক্ষোভ রয়ে যায়। বাবু ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি প্রার্থী। তিনিই বড় ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে বৃহস্পতিবার রাতে সানা মাঝিকে ডেকে এনে হত্যা করেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।
সানা মাঝির পরিবার জানায়, শনিবার সকালে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। দুপুরে লাশ নেওয়া হয় মধ্য মাকহাটি গ্রামের বাড়িতে। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। সেখান থেকে বিকেল ৩টার দিকে স্বজনরা ফেরার সময় তাদের ওপর অর্ধশতাধিক ককটেল ছুড়ে মারা হয়। এতে পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত সানার ছোট ভাই আসাদ মাঝির দাবি করেন, বাবু মাঝির সন্ত্রাসী বাহিনী অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
সদর থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় সানা মাঝির বড় ভাই হাবু মাঝি বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে শনিবার হত্যা মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে বাবু মাঝিকে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, স্বজনরা লাশ দাফন শেষে কবরস্থান থেকে ফিরছিলেন। এ সময় তাদের পেছন থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কবরস্থানের অদূরে জমিতে প্রতিপক্ষের লোকজন ককটেল ছোড়ে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।