তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামীকাল রংপুরে গণপদযাত্রা করবে বিএনপি
Published: 3rd, May 2025 GMT
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামীকাল রোববার রংপুরে গণপদযাত্রা করবে বিএনপি। আজ শনিবার সকালে রংপুরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু এ তথ্য জানান।
আসাদুল হাবিব বলেন, কাল বেলা তিনটার দিকে রংপুর নগরের শাপলা চত্বর থেকে গণপদযাত্রা শুরু হবে। শেষ হবে জিলা স্কুল চত্বরে। গণপদযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু উপস্থিত থাকবেন।
আসাদুল হাবিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একাধিক বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের ফলাফল কী, তা জাতির সামনে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। চীন থেকে ঘুরে আসার পর আমরা আশা করেছিলাম, তিস্তা মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে সরকার আমাদের একটা ধারণা দেবে। সেটার খবরও আমরা পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘কিছু পরিবেশবাদী এনজিও বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। এটা আমার মনে হয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।’
অন্তর্বর্তী সরকার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন আসাদুল হাবিব। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা বারবার দাবি উত্থাপন করছি। কিন্তু সেখানেও মনে হয় না সরকার খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নদীভাঙনে তিস্তাপারের হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো কোথায় চলে গেছে, তাদের সন্ধান আমরা জানি না। দিন দিন রংপুরের মানুষ ভূমিহীন ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে।’
আসাদুল হাবিব বলেন, তিস্তা নদী ঘিরে এই এলাকা একসময় সমৃদ্ধ ছিল। পানির বৈষম্যের কারণে সেই তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পেতে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করেছে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ১৫টি বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও তিস্তার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
শুধু তিস্তা নয়, রংপুরের উন্নয়নেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে আসাদুল হাবিব বলেন, ‘গত বাজেটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মাত্র এক লাখ টাকা। রংপুর সিটি করপোরেশনে কোনো বরাদ্দই দেওয়া হয়নি। এগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, আমরা রংপুর কত বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। এ সরকারের কোনো দৃষ্টি রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। সরকার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাজেটে আগামী দিনে বরাদ্দ দেবে কি না, সেটা নিয়ে কোনো ধারণা দিচ্ছে না।’
গত ১৭–১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রংপুরের ৫ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচি হয়েছিল। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আবার লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান আসাদুল হাবিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান, জেলার সাবেক আহ্বায়ক ও কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণপদয ত র ব এনপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে যাবেন না, শরীরচর্চা একটি সুন্নত
খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম আধুনিক জীবনে প্রায়ই অবহেলিত হয়, বিশেষ করে ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ইসলামে খেলাধুলার একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
শরীরচর্চার আধ্যাত্মিক উপকারিতাশরীরচর্চা ইসলামে একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের মনোযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, সম্প্রদায়ের বন্ধন জোরদার করে এবং হারাম থেকে দূরে রাখে। যেমন:
দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২১. মনোযোগ ও অবিচলতা গড়ে তোলে
ইসলাম আমাদের নিজেকে উন্নত করতে ও পরকালে উত্তম স্থান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। শরীরচর্চা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক; কারণ, এটি মনোযোগ, সংগ্রাম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে।
শারীরিক ব্যায়ামের সময় আমরা যখন মাত্রা অতিক্রম করে যাই, তখন তাৎক্ষণিক আরাম ত্যাগ করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসিক শক্তি অর্জন হয়।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫২. সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করে
ইসলামে সামাজিক ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এক উম্মাহর অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই যে তোমাদের উম্মাহ, এটা তো একই উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)
জুমার নামাজ, হজের মতো ইবাদত আমাদের সম্প্রদায়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
দলগত খেলাধুলা বা ব্যায়াম অনুশলীন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. হারাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়
আধুনিক সমাজে হারাম ক্রিয়াকলাপ—যেমন মদ্যপান, অবৈধ সম্পর্ক, জুয়া বা অনৈতিক কনটেন্ট—সহজলভ্য। এই প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সময় ও শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জিমে শরীরচর্চা বা মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ আমাদের মনকে হারাম থেকে দূরে রাখে এবং দ্বীনের প্রতি নিবেদিত রাখে।
সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২)
শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫হাদিসে উল্লিখিত খেলাধুলানবীজি (সা.)-এর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মতো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য খেলা হলো:
দৌড়: হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮)
বোঝা যায়, শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শরীরচর্চা করা অনুমোদিত।
তিরন্দাজি: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিরন্দাজি অনুশীলন করো, কারণ এটি তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১৭)
তিরন্দাজি শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়ায়।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।হজরত আয়েশা (রা.), সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮ঘোড়দৌড়: নবীজি (সা.) ঘোড়দৌড়ের প্রশংসা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,৫৮৫)
সাঁতার: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারি শেখাও।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৫৮২)
কুস্তি: নবীজি (সা.) একবার নিজেই রুকানা নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে খেলাধুলা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, বরং এটি সুন্নাহের একটি অংশ। নবীজির (সা.) জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আধুনিক বিশ্বে যেখানে সামাজিক বিভেদ ও হারামের প্রলোভন আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেখানে এই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা আমাদের দ্বীন ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫