তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামীকাল রোববার রংপুরে গণপদযাত্রা করবে বিএনপি। আজ শনিবার সকালে রংপুরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু এ তথ্য জানান।

আসাদুল হাবিব বলেন, কাল বেলা তিনটার দিকে রংপুর নগরের শাপলা চত্বর থেকে গণপদযাত্রা শুরু হবে। শেষ হবে জিলা স্কুল চত্বরে। গণপদযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু উপস্থিত থাকবেন।

আসাদুল হাবিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একাধিক বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের ফলাফল কী, তা জাতির সামনে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। চীন থেকে ঘুরে আসার পর আমরা আশা করেছিলাম, তিস্তা মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে সরকার আমাদের একটা ধারণা দেবে। সেটার খবরও আমরা পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘কিছু পরিবেশবাদী এনজিও বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্নভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। এটা আমার মনে হয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।’

অন্তর্বর্তী সরকার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন আসাদুল হাবিব। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা বারবার দাবি উত্থাপন করছি। কিন্তু সেখানেও মনে হয় না সরকার খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নদীভাঙনে তিস্তাপারের হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো কোথায় চলে গেছে, তাদের সন্ধান আমরা জানি না। দিন দিন রংপুরের মানুষ ভূমিহীন ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে।’

আসাদুল হাবিব বলেন, তিস্তা নদী ঘিরে এই এলাকা একসময় সমৃদ্ধ ছিল। পানির বৈষম্যের কারণে সেই তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পেতে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করেছে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ১৫টি বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও তিস্তার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি।

শুধু তিস্তা নয়, রংপুরের উন্নয়নেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে আসাদুল হাবিব বলেন, ‘গত বাজেটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মাত্র এক লাখ টাকা। রংপুর সিটি করপোরেশনে কোনো বরাদ্দই দেওয়া হয়নি। এগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, আমরা রংপুর কত বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। এ সরকারের কোনো দৃষ্টি রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। সরকার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাজেটে আগামী দিনে বরাদ্দ দেবে কি না, সেটা নিয়ে কোনো ধারণা দিচ্ছে না।’

গত ১৭–১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রংপুরের ৫ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচি হয়েছিল। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আবার লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান আসাদুল হাবিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান, জেলার সাবেক আহ্বায়ক ও কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণপদয ত র ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ