৪ ম্যাচে ২৯৫ রান, বিশ্বকাপে চোখ জাওয়াদের
Published: 3rd, May 2025 GMT
৪ ম্যাচে দুটিতেই সেঞ্চুরি। মোট রান ২৯৫। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনার জাওয়াদ আবরার শ্রীলঙ্কায় ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন।
শ্রীলঙ্কায় ছয় ম্যাচের সিরিজ খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ। কলম্বোতে প্রথম ওয়ানডে হেরে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এরপর টানা তিন ওয়ানডে জিতেছে দল। যেখানে দুটিতেই জাওয়াদের সেঞ্চুরিতে ভর করে অতিথিরা বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে। তার দু্যতিময় পারফরম্যান্সে মুগ্ধ দল। প্রশংসিত হচ্ছে তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ। ব্যাটিং ধারাবাহিকতাও দেখাচ্ছে বড় আশা।
২২ গজে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেওয়া এই ব্যাটসম্যান নিজের পারফরম্যান্সে যারপরনাই খুশি। সঙ্গে দল ভালো করায় আনন্দটাও দ্বিগুন, ‘‘দেশের জন্য সেঞ্চুরি করতে পেরেছি, তাও তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি। তাই খুব ভালো লাগছে। দল আমার জন্য জিততে পেরেছে। এই জয়ে আমার অবদান ছিল। এজন্য আমি অনেক খুশি।’’
দিন পাঁচেক আগে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ডানহাতি ওপেনার। আজ তার ব্যাট থেকে আসে ঝলমলে ১১৩ রান। এর আগে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩৮ রান করেন। রানছুট থামাতে চান না জাওয়াদ। এই ফর্ম, আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে চান যুব বিশ্বকাপেও, ‘‘পরবর্তী লক্ষ্য…ইনশাআল্লাহ সামনে আমাদের বিশ্বকাপ আছে। আমাদের দলটাও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ব্যালেন্স। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবদিক থেকেই। তাই আমরা আশাবাদী দেশের জন্য ভালো কিছু করব।’’
২০২৬ সালে যুব বিশ্বকাপ আছে জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াতে। ২০২০ যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। জাওয়াদের প্রত্যাশা, ‘‘দলগতভাবে আমরা সেরা ক্রিকেটটা খেলতে চাই। আমাদের যে সম্ভাবনা আছে সে অনুযায়ী খেলতে পারলে বিশ্বকাপে আমরা ভালো কিছু করতে পারব ইনশাআল্লাহ।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা
ভুটান প্রিমিয়ার লিগের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব পারো এফসিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের তরুণ ফুটবলার মো. জুয়েল রানা। কিন্তু অর্থাভাবে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে তার স্বপ্নপূরণের যাত্রা।
শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল জুয়েলের গভীর ভালোবাসা। স্থানীয় পর্যায়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়েছেন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও। খেলেছেন ঢাকা সিটি কাপ, মেয়র কাপ, এমনকি বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় ডাক পান ভুটানের পেশাদার ফুটবল লিগের ট্রায়াল ক্যাম্পে, যেখানে ৫০ জনের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের একজন জুয়েল। বর্তমানে জুয়েল ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যামার স্কুল, রংপুর-এর নবম শ্রেণির বাংলা ভার্সনের শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
১০ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে সিউলকে বিধ্বস্ত করল বার্সেলোনা
রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে হতে যাওয়া লিগে অংশ নিতে হলে এর আগেই পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও খেলার কিটসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ।
জুয়েলের বাবা একজন দিনমজুর ও ভ্যানচালক। এমন আর্থিক অবস্থায় এত ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
জুয়েল রানা বলেন, “আমি ডোমার হাইস্কুল মাঠে খেলা শুরু করি, ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ সুজন ভাইয়ের কাছেই প্রথম হাতে খড়ি। এরপর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে এবং বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলি। ভুটান থেকে পারো এফসির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। তাদের নেয়া ট্রায়ালে ৫০ জনের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হই, পরে মেডিকেল টেস্টের পর আমিসহ ৩ জন সুযোগ পাই। লিগ শুরু হওয়ার এক মাস আগেই যেতে হবে। কিন্তু এখন অর্থের কারণে যাওয়া হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, কিটস সবকিছুতেই টাকা দরকার। আমি শুধু চাই কেউ পাশে দাঁড়াক। আমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।”
জুয়েলের মা রশিদা বেগম বলেন, “ছেলেটা অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত এসেছে। এখন যদি শুধু টাকার অভাবে তার স্বপ্ন থেমে যায়, সেটা আমাদের সহ্য হবে না।”
জুয়েলের বাবা জয়নুল ইসলাম বলেন, “আমি দিনমজুর মানুষ, ছেলের স্বপ্নপূরণে কিছুই করতে পারছি না। এই কষ্ট ভাষায় বোঝানো যায় না। সরকার কিংবা কেউ যদি সাহায্য করত, আমার ছেলে বিদেশে গিয়ে খেলতে পারত।”
এলাকাবাসীরাও জুয়েলের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “জুয়েল অনেক ভালো খেলে, সে আমাদের গর্ব। কিন্তু তার পরিবার অত্যন্ত অসচ্ছল। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সে একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।”
ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ মো. সাদিকুর রহমান সুজন বলেন, “জুয়েল আমাদের একাডেমির অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সে তার পরিশ্রমে অনেক দূর এগিয়েছে। সে ভুটানে খেলার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু এখন শুধু অর্থের অভাবে তার যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তার বাবা একজন ভ্যানচালক—এই খরচ বহন তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি অনুরোধ করব সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যেন জুয়েলের পাশে দাঁড়ায়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, “আমরা জুয়েলকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। আপনারাও সকলে জুয়েলের পাশে দাঁড়ান, সে যেন দেশের গর্ব হয়ে ওঠে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
একজন উদীয়মান প্রতিভাবান ফুটবলারের স্বপ্ন যেন শুধু আর্থিক সংকটে থেমে না যায়। এই লক্ষ্যেই জুয়েলের পরিবার সমাজের দানশীল, খেলাপ্রেমী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।
ঢাকা/সিথুন/আমিনুল