চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘির পাড় থেকে সার্সন রোডের দিকে ১০০ গজ এগোলেই জয়পাহাড় আবাসিক এলাকা। এই এলাকাতেই নিজ বাড়ির আঙিনার আনুমানিক ৫০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বন। গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ার এর নাম দিয়েছেন ‘মিনি সুন্দরবন’। 
তাঁর এই বনে বেড়ে উঠছে সুন্দরী, গরান, গর্জন, হারগোজা, কালিলতা, গোলপাতাসহ নানা জাতের গাছ। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনাপানিতে জন্ম নেওয়া এসব গাছ সংরক্ষণে তিনি তৈরি করেছেন বিশেষ মাটি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেই পরিবেশে আসে জোয়ার-ভাটাও। গতকাল শনিবার সেই ‘মিনি সুন্দরবন’ দেখতে যান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। পরিদর্শন শেষে তিনি গবেষক মাইনুল আনোয়ারের এই উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। 

মিনি সুন্দরবনের পাশেই আছে আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে দুইশরও বেশি ভেজাল মধুর ধরন শনাক্ত করা আছে। থরেবিথরে সাজানো পটে আছে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত ৭০ রকমের মধু। কোন মধু কখন উৎপাদন করতে হয়, কোনটির গুণগত মান কখন ভালো হয়, মধু কীভাবে সংরক্ষণ করলে ভালো থাকে, ভেজাল করার সময় কোন মধুতে কী রকমের উপকরণ মেশানো হয়– এসবের উত্তর আছে গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ারের জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রে। কৃষি সচিব মধু জাদুঘরটিও ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ড.

মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক সাইফুল আজম খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল আলম প্রমুখ। 
কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘মাইনুল আনোয়ারের ম্যানগ্রোভ বন ও মধুর জাদুঘর অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। তাঁর এই উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে উপকৃত হবে কৃষি ও পরিবেশ।’ অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, এই জাদুঘরে যেভাবে ভেজাল মধু শনাক্ত করা হচ্ছে তা ব্যতিক্রম। গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ার বলেন, ‘২০ বছর ধরে সাধনা করে শহরের বুকে এই মিনি সুন্দরবন গড়ে তুলেছি। এই প্রচেষ্টা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন স ন দরবন হ ম মদ ম জ দ ঘর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’

সুন্দরবনের কয়রা নদীর পাশে গহিন বনে শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ে উল্টো হয়ে ঝুলছিল একটি হরিণ। পরে হরিণটিকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সুন্দরবনের হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিন্টু বাড়ৈ হরিণটিকে উদ্ধারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সুন্দরবনের কয়রা নদীর পাশ ঘেঁষে সরু একটি খাল ঢুকে গেছে বনের গভীরে। নাম তার হেলাল খাল। ডিঙিনৌকায় খাল ধরে যত দূর সম্ভব এগোনো গেল, তারপর শুরু হলো হেঁটে টহল। চারদিকে শূলের মতো উঁচিয়ে থাকা শ্বাসমূল আর নানা গাছের কাঁটায় ভরা পথে হাঁটা এক যুদ্ধ। হঠাৎ নিস্তব্ধ বনে শোনা গেল হরিণের চিৎকার। ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে।’ ফাঁদ কেটে হরিণটিকে মুক্ত করতেই দৌড়ে চলে গেল বনের গভীরে।

বন কর্মকর্তারা জানান, সুন্দরবনে হরিণ শিকারের কৌশল নিষ্ঠুর। এক টুকরা শক্ত দড়ি, মাঝারি আকারের একটি গাছ বা গাছের ডাল দিয়ে তৈরি হয় ভয়ংকর ছিটকে ফাঁদ। শিকারিরা হরিণের চলাফেরার পথ চিহ্নিত করে সেখানে মাঝারি আকারের একটি গাছ কেটে সেই গাছের কাটা অংশের সঙ্গে দড়ির ফাঁদ টেনে বেঁধে রাখে। উপরিভাগে শুকনা পাতা ছড়িয়ে দেয়, যাতে ফাঁদ একেবারেই চোখে না পড়ে। নির্দিষ্ট জায়গায় হরিণ পা ফেললেই তীব্র বেগে দড়ির ফাঁস ছিটকে উঠে যায়, সঙ্গে গাছের কাটা অংশও টেনে নিয়ে শিকারকে ঝুলিয়ে ফেলে।

হরিণের ক্ষেত্রে বনের ভেতরে অপরাধ উদ্‌ঘাটনের তথ্য দেওয়ায় ২০ হাজার এবং বনের বাইরে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।ইমরান আহমেদ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক

হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিন্টু বাড়ৈ বলেন, সুন্দরবনের হেলাল খাল আর পাশের বাইসার খালের আশপাশে হেঁটে তাঁরা গতকাল আরও প্রায় ৫০টি ছিটকা ফাঁদ উদ্ধার করেছেন।

আরও পড়ুনজেলের ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ, চলছে বিষ দিয়ে মাছ ধরা ও হরিণ শিকার১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হায়াতখালী টহল ফাঁড়িটি কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর, খোড়লকাঠি, হায়াতখালী ও তেঁতুলতলা গ্রামের পাশেই অবস্থিত। সুন্দরবনসংলগ্ন এসব গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, লোকালয়ের পাশে ছোট নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। হরিণশিকারিরা জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার জালের সঙ্গে ফাঁদ তৈরির দড়ি বনে নিয়ে যায়। তারপর বনে বসে হরিণ ধরার ফাঁদ তৈরি করে।

আরও পড়ুনসুন্দরবনের দৃষ্টিনন্দন চিত্রা হরিণ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হরিণ শিকারের অভিযোগে কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান কয়রার মহেশ্বরীপুর এলাকার এক শিকারি। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বনের যেখানে কেওড়াগাছ বেশি, সেখানে হরিণ বেশি থাকে। ওই এলাকায় শিকারিরা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ বলেন, বন্য প্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে শিকারিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। হরিণের ক্ষেত্রে বনের ভেতরে অপরাধ উদ্‌ঘাটনের তথ্য দেওয়ায় ২০ হাজার এবং বনের বাইরে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনসুন্দরবনের যে ফলটি হরিণ-বানরের প্রিয়, কাজে লাগে মানুষেরও১২ জুলাই ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’