হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
Published: 5th, May 2025 GMT
গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। রোববার রাত ১০টার দিকে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ ছাড়া এ হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মশালমিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘আজকে হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর যে হামলা হয়েছে, এই হামলা শুধু হাসনাতের ওপর হামলা নয়, এই হামলা পুরো জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর হামলা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন সরকার এখনো দিতে পারেনি। আমরা দেখতে পেয়েছি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমার সহযোদ্ধাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তারা আমাদের নিরাপত্তা দিতেই ব্যর্থ হয়নি, তাদের যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, জুলাইয়ের শহীদেরা যেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলন করেছিল, তারা শহীদদের রক্তের মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারেনি।’
এখনো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের উদ্দেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের কিসের আতঙ্ক যে আপনারা এখনো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারবেন না? পুরো বাংলাদেশ কিন্তু আপনাদের থেকে সমর্থন ছাড়িয়ে নিতে বাধ্য হবে, যদি না আপনারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারেন।’ অবিলম্বে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।
আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, বাংলাদেশে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নির্বাচনে আসার প্রশ্ন আসে কীভাবে?
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক যুগ্ম সদস্যসচিব সাকিব আহমেদ বলেন, ‘যে বিপ্লবের ওপর দাঁড়িয়ে আজকের এই গভর্নমেন্ট (সরকার), কেন এই ইন্টেরিম আমাদের সেই বিপ্লবের নায়কদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ? আমরা প্রশ্ন করতে চাই কেন শহীদের মেয়েরা আজকে ধর্ষিত? আমরা প্রশ্ন করতে চাই, আজকে আমাদের জুলাইয়ের যে আহত যোদ্ধারা, তারা কেন আজকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে? আমরা প্রশ্ন করতে চাই, আজকে কেন এই খুনিরা দিনের পর দিন জামিন নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে?’
হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মশালমিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের টাইগার পাস মোড় থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন।
এ সময় তাঁদের হাতে জ্বলন্ত মশাল ছিল। মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাজীর দেউড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য দেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক রিদোয়ান সিদ্দিকী ও অন্য নেতা-কর্মীরা।
এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে দায়ী করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, দলটিকে নিষিদ্ধ না করায় বারবার তারা হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে। তাঁরা গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চান। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর কর ম র আওয় ম সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
তেলের দাম কমলেও সৌদি আরব এতটা নির্ভার কীভাবে
তেলের দাম পড়ে গেছে। সৌদি আরবের উচ্চাকাঙ্ক্ষী বড় প্রকল্পগুলোতেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এরপরও রাজতান্ত্রিক এ দেশে যেন একটুও চিন্তার ছাপ নেই।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে অনুসারে, সৌদি আরব তেলশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোকে বলেছে যে দাম কম হলেও এর সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নিতে পারবে তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিক থেকে এটা সত্যও। কারণ, সৌদি আরব এ মুহূর্তে এমন এক অবস্থানে আছে, যা অনেক দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। বাস্তবতা হলো, উপসাগরীয় দেশটি তাদের আয়ের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে পারে।
সৌদি আরব চাইছে, তাদের অর্থনীতি যেন এককভাবে জ্বালানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল না থাকে। ‘নিওম’-এর মতো বিশাল প্রকল্পগুলো আসলে তাদের সেই চিন্তাভাবনারই বাস্তব রূপ। তবে বাস্তবতা হলো, এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজস্বের প্রায় ৬১ শতাংশ আসে তেল বিক্রি থেকে।
সৌদি আরব হলো বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের একটি, যাদের রাজস্ব জ্বালানির দামের সঙ্গে এতটা সরাসরি সম্পৃক্ত। অন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোও তা–ই। এ কারণেই অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা যখন সৌদি আরবের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে লেখেন বা বিশ্লেষণ করেন, তখন প্রায়ই একটি শব্দ ব্যবহার করেন—‘ব্রেক-ইভেন অয়েল পয়েন্ট’। এর মানে হলো, তেলের দামের এমন একটি স্তর নির্ধারণ করা, যেখানে থাকলে সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতিও হয় না, আবার উদ্বৃত্তও থাকে না।
অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকার তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে সৌদি আরবের বাজেটে ভারসাম্য রাখতে হলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে হবে।
তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সভার্সাল কনসালটিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘সৌদি ইনক’ বইয়ের লেখক এলেন ওয়াল্ড মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘সৌদি আরবের বাজেটে ভারসাম্য রাখার দরকার নেই। তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে কত ডলার হলে বাজেটে ভারসাম্য বজায় থাকবে, তা সৌদি আরবের নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে যে ধারণার কথা বলা হচ্ছে, সেই হিসাব দিয়ে তেলের দাম নিয়ে সৌদির নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে না।’
বাজেট ঘাটতি মেনে নিয়েই এগোচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির ২০২৫ সালের বাজেটে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বা জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ ঘাটতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট গত এপ্রিল মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, যদি ২০২৫ সালে তেলের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলার হয়, তবে সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি বেড়ে ৫৬ বিলিয়ন ডলার বা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতির আভাস সত্ত্বেও আপাতত স্বস্তিতে আছে সৌদি আরব।
বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কায় তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার কারণেও বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ, চুক্তি হলে ইরানি তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তখনো তেলের দামের ওপর প্রভাব পড়বে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কায় তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।বড় ধরনের বাজেট ঘাটতি একটি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে গত কয়েক মাসে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি নিয়ে বড় ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে এক অনন্য অবস্থানে আছে। কারণ, ডলার বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা। বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থানই যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় শিবিরের প্রেসিডেন্টদের অতিরিক্ত খরচের ক্ষেত্রে একটি নিরাপদ পথ তৈরি করে দিয়েছে।
সৌদি আরব তো আর যুক্তরাষ্ট্র নয়। তবে বাজেট ঘাটতি সত্ত্বেও নিজেদের চালানোর মতো অবস্থা দেশটির আছে।
চলতি মাসে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস সৌদি আরবের ক্রেডিট রেটিং ‘এ প্লাসে’ উন্নীত করেছে। এ রেটিং দেশটিকে চীন ও জাপানের সমপর্যায়ে নিয়ে গেছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি, যা যেকোনো বৈশ্বিক সংকটে প্রতিরোধ গড়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। সৌদি আরবের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩০ শতাংশ, যা অন্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় অনেকটা কম।
স্বল্পমেয়াদি অর্থের চাহিদা মেটাতে ঋণ করছে সৌদি আরব। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক ঋণ ইস্যুর দিক থেকে চীনকে পেছনে ফেলেছে দেশটি। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে বিনিয়োগের জন্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি আমরা। এশীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে মার্কিন ঋণ বিক্রি করার মধ্য দিয়ে সৌদি আরব লাভবান হবে।টিমোথি অ্যাশ, উদীয়মান বাজারবিষয়ক বিশেষজ্ঞআরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার টিম ক্যালেন বলেন, সৌদি আরব এ বছর এখন পর্যন্ত ডলার ও ইউরোতে ১৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যেরও বেশি ঋণ ইস্যু করেছে। বছর শেষ হওয়ার আগেই ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
ক্যালেন গত মাসে লিখেছিলেন ‘সৌদি আরব এখনো শক্তিশালী আর্থিক অবস্থানে থাকায় বড় বাজেট ঘাটতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে অর্থায়নের কোনো সমস্যা হবে না। তবে তেলের দাম কম হলে, ঋণদাতারা হয়তো চলতি বছরের শুরুর দিকের তুলনায় বেশি হারে সুদ নেবে।’
সৌদি আরবে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারে এশীয় দেশগুলো
সৌদি আরবের খরচের পরিমাণ অনেক। সেই খরচের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। এর মধ্য দিয়ে রাজতান্ত্রিক দেশটিতে অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটছে। চলতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার ঋণ তুলেছে সৌদি আরব।
সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান