মানিকগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে ৯ মাস পর ২১৭ জনের নামে মামলা হয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়, এস এম জাহিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, পৌরসভার সাবেক মেয়র রমজান আলী, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুদেব সাহা, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক জহিরুল করিম, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার বাহাউদ্দিন, সাবেক ওসি হাবিল উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ২১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি মেহেরাব হোসাইন বাদী হয়ে সোমবার দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। মামলাটি মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ জুলাই সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মানিকগঞ্জ খাল-পাড় ব্রিজে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা করে। এতে আন্দোলনকারী মো.

আরমান হোসাইন, হাসনা হেনা, মাহফুজ হোসাইন, তন্ময়সহ অনেককেই কুপিয়ে আহত করা হয়। ওই দিন বেলা ১২টায় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মানরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইউনিটের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে। এ সময় সাবেক এমপি জাহিদ মালেক ও সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খানের নেতৃত্বে আসামিরা পুলিশের সহায়তায় ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করে। আহতের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ও নার্সরা আহতদের চিকিৎসা দেননি।

মামলার বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি মেহেরাব হোসাইন বলেন, আসামিদের তথ্য-উপাত্ত ও ভিডিও ফুটেজসহ প্রমাণ সংগ্রহের জন্য মামলা করতে দেরি হয়েছে। যাদের আসামি করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

কোর্ট থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সোমবার আদালতে সিআর মামলা করেছেন। বিচারক মামলাটি সদর থানা অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। এখনও মামলার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ হ স ইন

এছাড়াও পড়ুন:

আল-আজিজ, যিনি ইজ্জত দান করেন

আল্লাহর ‘আল-আজিজ’ নামটি তাঁর অপরাজেয় ক্ষমতা, মহান সার্বভৌমত্ব এবং অপ্রতিরোধ্য শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে কেউ ইজ্জত কামনা করে, তবে সমস্ত ইজ্জত আল্লাহর জন্য।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ১০)

এই নাম আমাদের শেখায়, প্রকৃত ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত আল্লাহর জন্য।সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬৫আল-আজিজ নামের অর্থ

আল্লামা সা’দি (রহ.) ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আল-আজিজ’ শব্দটি তিনটি মূল অর্থ বহন করে:

১. ইজ্জতুল কুওয়া: মানে শক্তির ইজ্জত। আল্লাহর শক্তি অতুলনীয়। তাঁর ক্ষমতার সামনে সৃষ্টির কোনো শক্তি তুচ্ছ।

২. ইজ্জতুল ইমতিনা: মানে অপ্রতিরোধ্যতার ইজ্জত। আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারও প্রয়োজন নেই। কেউ তাঁকে ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। তিনি ক্ষতিকারক, উপকারক, দানকারী, এবং প্রতিরোধক।

৩. ইজ্জতুল কাহর: প্রতিটি সৃষ্টির ওপর বিজয়ের ইজ্জত। সমস্ত সৃষ্টি তাঁর কাছে নত। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটে না। তিনি বলেন, ‘যা তিনি চান তা হয়, আর যা তিনি চান না তা হয় না।’ (আল-বদর, ফিকহুল আসমা, পৃ. ২৪৬)

পবিত্র কোরআনে ‘আল-আজিজ’ নামটি ৯২ বার উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায়ই তাঁর অন্যান্য নামের সঙ্গে যুক্ত, যেমন ‘আল-হাকিম’ বা ‘আল-গাফুর’। এটি তাঁর সর্বাঙ্গীণ ইজ্জতের প্রতীক।

আরও পড়ুনআল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ‘আল্লাহ’০২ জুন ২০২৫পবিত্র কোরআনে ‘আল-আজিজ’ নামটি ৯২ বার উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায়ই তাঁর অন্যান্য নামের সঙ্গে যুক্ত, যেমন ‘আল-হাকিম’ বা ‘আল-গাফুর’।ইজ্জতের উৎস

প্রকৃত ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর কাছে। ধন, পদ, স্বাস্থ্য বা জনপ্রিয়তার মাধ্যমে ইজ্জত খোঁজা ভুল। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, সে অপরাজেয় শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত আল্লাহর জন্য।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬৫)

আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে কখনো অপমানিত হতে হয় না, কিন্তু অন্যের কাছে চাওয়া অপমান বয়ে আনে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দানের কারণে সম্পদ কমে না, ক্ষমার কারণে আল্লাহ বান্দার ইজ্জত বাড়ান এবং যে আল্লাহর জন্য নম্র হয়, তাকে আল্লাহ উন্নত করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৮৮)

ইজ্জত অর্জনের পথ হলো বিনয়ী হওয়া, ক্ষমা করা এবং মানুষের প্রতি উদার হওয়া। এ ছাড়া পবিত্র কোরআন নিয়মিত তিলাওয়াত করা, বোঝার চেষ্টা করা, চিন্তাভাবনা করা এবং তার বিধান মেনে চলাই ইজ্জতের পথ। পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ ‘আল-আজিজ’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এটি অপরাজেয় সত্য।

আরও পড়ুনআল্লাহর নামের ওপর ইমান আনতে হয় কেন১১ জুন ২০২৫তার বিধান মেনে চলাই ইজ্জতের পথ। পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ ‘আল-আজিজ’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এটি অপরাজেয় সত্য।আল-আজিজের প্রভাব

আল-আজিজ নামের ইমান আনার ফল হলো বান্দার একমাত্র আল্লাহর কাছে নত হওয়া। সে তাঁর কাছেই আশ্রয় চায়, তাঁরই সুরক্ষা কামনা করে এবং তাঁর কাছেই ইজ্জত প্রার্থনা করে। এটি তাকে সৃষ্টির প্রতি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে এবং আল্লাহর সঙ্গে একটি অটুট সম্পর্ক গড়ে তোলে। যে আল্লাহকে তার আশ্রয় মনে করে, সে দুর্বল হলেও শক্তিশালী হয়, দরিদ্র হলেও সম্মানিত হয়।

একটি কবিতায় বলা হয়েছে: ‘আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধরে থাকো, কারণ তিনিই একমাত্র নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।’

বাস্তব জীবনে আল-আজিজ

আল-আজিজ নামটি আমাদের শেখায়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে—ধন, ক্ষমতা বা স্বাস্থ্য—ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে আসে। যখন আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা আমাদের অপরাজেয় করে।

যেমন একজন ব্যক্তি যিনি সমাজে দুর্বল বা অপমানিত, তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাঁর বিধান মেনে ইজ্জত ফিরে পেতে পারেন। এটি আমাদের ধৈর্য, তাকওয়া এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার গুরুত্ব শেখায়।

অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুন‘হাউসে কাউসার’ উম্মতের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত ১৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ