কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের শ্বশুরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের মীরাখোলা গ্রামের মুন্সি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের (৯৯৯) মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেন।

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। হামলাকারীরা মুজিবুল হকের স্ত্রী হনুফা আক্তারের বড় ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি ও নাছির উদ্দিন মুন্সির ঘরে প্রবেশ করে ভাঙচুরের পর লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মুজিবুল হকের স্ত্রীর বড় ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, একই গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন তাঁদের মুরগির খামারে কাজ করতেন। প্রায় এক বছর আগে সব হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে তিনি খামার থেকে অব্যাহতি নেন। গতকাল (৫ মে) বিকেলে পাঁচ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে লোকজন নিয়ে বাড়িতে আসেন কামাল। এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজনকে সবকিছু বুঝিয়ে বললে তাঁরা নানা উসকানিমূলক কথা বলে চলে যান। তবে রাত ১২টার পর যখন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েন, তখন ৭০ থেকে ৮০ জন লোক এসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। তিনি ও তাঁর ভাই কোনোরকমে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন।

আলাউদ্দিন মুন্সি বলেন, ‘তারা এমনভাবে হামলা চালিয়েছে, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে যে ঘরে পানি পান করার জন্য একটি গ্লাসও রাখেনি। উপায় না পেয়ে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করি। পরে যৌথ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’ তিনি আরও বলেন, রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনী চলে যাওয়ার পর আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হামলাকারীরা বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। দুপুরে চান্দিনা থানা-পুলিশ বাড়িতে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

আলাউদ্দিনের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, ‘হামলাকারীরা আমাদের ঘরের ৪টি আলমারি ভেঙে ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া চারটি টিভি, দুটি এসি, তিনটি ফ্রিজ, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ আসবাবপত্র ভেঙে চুরমার করেছে। হামলার সময় আমাদের শিশুসন্তানেরা ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে ছিল। আতঙ্কিত হয়ে দুই শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আমার শিশুসন্তানেরা তো কোনো অপরাধ করেনি, আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। তাহলে আমাদের ওপর এই অত্যাচার কেন?’

জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক রেলমন্ত্রীর ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে আলাউদ্দিন ও নাছির উদ্দিন এলাকার মানুষের ওপর অনেক অন্যায়-অত্যাচার করেছেন। ক্ষমতার দাপটের কারণে কেউ তাঁদের কথার অবাধ্য হলেই তাঁদের বাড়িতে ধরে নিয়ে মারধর করা হতো। কয়েক দিন আগেও তাঁরা সরকারি টাকায় নির্মিত একটি পাকা রাস্তা নিজেদের বলে বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে শুনেছেন। তিনি নিজে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক চান্দিনার মীরাখোলা গ্রামের মুন্সি বাড়ির হনুফা আক্তার রিক্তাকে বিয়ে করেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। এর আগে গত ৫ এপ্রিল বিকেলে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নিজ বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বসুয়ারা গ্রামে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক র লমন ত র ম জ ব ল হক র ল টপ ট এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

পান্ডিয়ার রানআউট মিসে শেষ বলে জিতে সবার ওপরে গিলের গুজরাট

১ বলে ১ রান।

মাত্রই উইকেটে যাওয়া আরশাদ খান দীপক চাহারের করা বলটিকে মিড অফ ফিল্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার দিকে ঠেলেই পড়িমরি করে দৌড় লাগালেন। পান্ডিয়ার থ্রো ভাঙতে পারেনি নন স্ট্রাইকার প্রান্তের উইকেট। আর তাতে ১ রান পূর্ণ করেই মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে গুজরাট টাইটানসকে ৩ উইকেটে জয় এনে দিলেন আরশাদ।

১১তম ম্যাচে পাওয়া অষ্টম এই জয়ে আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল শুবমান গিলদের গুজরাট। অন্যদিকে টানা ছয় ম্যাচ জয়ের পর প্রথম হারের স্বাদ পেয়ে মুম্বাই নেমে গেলে চারে (১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট)।

ওয়াংখেড়ে দুবার বৃষ্টির কারণে বন্ধ হওয়া ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে স্বাগতিক মুম্বাই করেছিল ৮ উইকেটে ১৫৫ রান। রান তাড়ায় দুবার বৃষ্টির বাধায় পড়া গুজরাট যখন শেষবার আবার ব্যাটিংয়ে নামল দলটির লক্ষ্য ১৯ ওভারে ১৪৭ রানের। যার অর্থ ১ ওভারে দলটির দরকার ১৫ রান।

সেই ওভারটি করলেন দীপক চাহার। ভারতীয় পেসারের প্রথম ৩ বলে ১টি করে চার-ছক্কা মেরে রাহুল তেওয়াতিয়া ও জেরাল্ড কোয়েৎজি ৩ বলে ৪ বানিয়ে ফেলেন সমীকরণটাকে। পরের বলটা হলো নো বল, ব্যাটসম্যানরা দৌড়ে নিলেন ১ রান। তাতে ৩ বলে ২ রানের হিসাব গুজরাটের। ফ্রি হিটে তেওয়াতিয়া ১ রান নেওয়ার পর আবার নাটক। এবার বল আকাশে তুলে আউট কোয়েৎজি। আর তাতেই সমীকরণটা হয়ে যায় ১ বলে ১ রানের। এরপর পান্ডিয়ার সেই রানআউট মিস। তাতে সুপার ওভারের নাটকে গড়াতে পারল না ম্যাচটি।

শেষ বলে রানআউট মিস করে হতাশ মুম্বাই ইন্ডিয়ানস অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ