নোবিপ্রবি ও তেখনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর
Published: 7th, May 2025 GMT
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সঙ্গে তুরষ্কের অস্তিম তেখনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) নোবিপ্রবি উপাচার্যের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নোবিপ্রবির পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল। অন্যদিকে, অস্তিম তেখনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রেক্টর মুরাত ইউলেক।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “নোবিপ্রবি এবং তুরষ্কের অস্তিম তেখনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি ভবিষ্যতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়াকে তরান্বিত করবে। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ ধরনের চুক্তি অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম যত বেশি হবে শিক্ষার্থীদের লার্নিং সক্ষমতাও ততটাই বাড়বে। নোবিপ্রবিকে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমতালে এগিয়ে নিতে ইউরোপ এবং এশিয়ার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও আমরা এ ধরনের চুক্তি সম্পাদন করবো। আমি এর সফলতা কামনা করছি।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজওয়ানুর হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ, রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক আসাদুন নবী, নোবিপ্রবি ইন্টারন্যাশনাল কোলাবোরেশান ও কো-অপারেশন সেন্টারের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক মো.
ইরাসমাস প্লাস প্রোগ্রামের আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী বিনিময়, স্টাফ প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল কোলাবরেশনের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
এর আগে, নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল এবং তুরষ্কের অস্তিম তেখনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর মুরাত ইউলেক এর মাঝে গত ১৮ এপ্রিল এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রিয় সাইকেলটি চুরি হওয়ায় তিন বোনের মন খারাপ
প্রায় এক মাস আগে রাজধানীর ধানমন্ডির সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের পঞ্চম তলা থেকে এক সহকারী সচিবের তিন মেয়ের পুরোনো একটি সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলা হয় ধানমন্ডি থানায়।
কিন্তু সাইকেলটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। চোরও ধরা পড়েনি। প্রিয় সাইকেলটি উদ্ধার না হওয়ায় তিন বোনের মন খুব খারাপ।
সহকারী সচিব শেখ তৈয়েবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখের আগের দিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে এক চোর পঞ্চম তলা থেকে সাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে মনঃকষ্টে আছে তিন মেয়ে।
এই কোয়ার্টারে ৭২টি পরিবার বসবাস করে। বাসিন্দাদের অধিকাংশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও সহকারী সচিব পদমর্যাদার। সাইকেল চুরির বিষয়টি নিয়ে কোয়ার্টারের প্রতিবেশী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তৈয়েবুর রহমান। পরে মামলা করা হয়। কোয়ার্টারের এক নিরাপত্তারক্ষী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই একমত হই যে কোয়ার্টারে ঢুকে ভবনের প্রধান ফটকের তালা খুলে পাঁচতলায় উঠে দুটি তালা কেটে যে চোর সাইকেল চুরি করতে পারে, সে সাধারণ নয়। তাই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।’
তৈয়েবুর রহমান, মামলার বাদী ও ধানমন্ডি থানার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোয়ার্টারে প্রবেশের পথে একটি পুরোনো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) আছে। কোয়ার্টারের চারপাশে আছে উঁচু দেয়াল। কোয়ার্টারে প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। এই প্রবেশপথ থেকে কিছুটা দূরের দেয়াল টপকে একজন চোর কোয়ার্টারের ভেতরে ঢোকে। তার মুখমণ্ডল গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। সে ভবনের প্রবেশফটকের তালা খুলে সিঁড়ি দিয়ে পঞ্চম তলায় ওঠে। ফ্ল্যাটের বাইরে জানালার সঙ্গে দুটি তালা দিয়ে সাইকেলটি আটকানো ছিল। তালা দুটি কেটে সাইকেলটি নিয়ে দেয়াল টপকে চলে যায় চোর।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাইকেল চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন তাঁরা। তবে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোরের সুস্পষ্ট মুখ অবয়ব দেখা যায়নি। তারপরও তাঁরা সাইকেলটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
স্মৃতির সাইকেলতৈয়েবুর রহমানের তিন মেয়ে—তনিমা রহমান, অনিমা রহমান ও রাইয়ানা রহমান। তৈয়েবুর রহমান একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। তাঁর স্ত্রী গৃহিণী। এই দম্পতির বড় মেয়ে তনিমা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। মেজ মেয়ে অনিমা উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে রাইয়ানা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
ধানমন্ডির সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে প্রশস্ত খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে কোয়ার্টারের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। কেউ কেউ সাইকেল চালায়।
তনিমা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন সে দেখত, কোয়ার্টারের সমবয়সীরা বাসার সামনে সাইকেল চালায়। তনিমা বাবার কাছে বায়না ধরে, তাকে একটি সাইকেল কিনে দিতে হবে। পরে মেয়ের জন্য একটি সাইকেল কিনে আনেন তৈয়েবুর রহমান। বাবার সহযোগিতায় তনিমা সাইকেল চালানো শেখে। এরপর একা একাই সাইকেল চালাতে শুরু করে।
তনিমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার কিনে দেওয়া সেই কালো রঙের সাইকেলের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। গত পয়লা বৈশাখের আগের দিন সাইকেলটি চুরি হওয়ায় আমার মন অনেক খারাপ।’
শুরুতে সাইকেল চালাতে গিয়ে বারবার পড়ে যাওয়া, আবার ওঠাসহ অনেক স্মৃতিচারণা করেন তনিমা। একপর্যায়ে তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন। সেই শৈশব-কৈশোরে বন্ধুদের সঙ্গে বাসার সামনে সাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দারুণ আনন্দ পেতেন তিনি। সাইকেল নিয়ে এসব স্মৃতি এখন তাঁর মাথায় সারাক্ষণই ঘুরছে বলে জানালেন তিনি।
নবম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিত সাইকেলটি চালাতেন তনিমা। একই সময় অনিমাও সাইকেলটি চালাত। ফলে সাইকেলটি নিয়ে দুই বোনের অনেক গল্প আছে। আর একদম ছোট বোন রাইয়ানা সম্প্রতি সাইকেল চালানো শিখছিল।
তনিমা প্রথম আলোকে বলল, ‘রাইয়ানা রোজ ঘুমানোর সময় আমাকে বলছে, “আপু, আমাদের সাইকেলটি পাওয়া গেছে?” আমরা তাকে কোনো জবাব দিতে পারছি না। ওর মন সব থেকে বেশে খারাপ। আমি মানতেই পারছি না, পঞ্চম তলায় দুটি তালা লাগানো অবস্থায় আমাদের সাইকেলটি কীভাবে চুরি হয়ে গেল?’
সাইকেলটি দেখে রাখত রাইয়ানাতনিমা-অনিমা বড় হয়ে যাওয়ায় সাইকেলটি আর চালাত না। তাদের ছোট বোন রাইয়ানা সাইকেলটি চালানো শিখছিল। তাই সে-ই সাইকেলটি দেখে রাখত।
পাঁচতলা থেকে সাইকেলটি বাসার সামনের চত্বরে নিয়ে রাইয়ানাকে চালানো শেখাত তনিমা-অনিমা। তনিমা বলেন, ‘রাইয়ানা বাসা থেকে বেরিয়ে সাইকেলের বেলটি বাজাত। সে যখন বেলটি বাজাত, তখন আমি চলে যেতাম শৈশবের দিনগুলোয়। আমিও ছোটবেলায় সাইকেলের বেল বাজাতাম। সাইকেলের গায়ে লেগে থাকা ধুলো মুছে রাখত রাইয়ানা। সাইকেল চুরি হওয়ার পর থেকে তার মন অনেক খারাপ।’
গত সোমবার রাইয়ানাকে নিয়ে তার স্কুলে যাচ্ছিলেন বাবা তৈয়েবুর রহমান। তখন বাসার অদূরে তাঁর মেয়েদের সাইকেলটির মতো একটি সাইকেল দেখতে পান। সাইকেলটি দেখে রাইয়ানা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, তাদের সাইকেলটি পাওয়া গেছে কি না? জবাবে তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘মা, দেখতে একই রকমের হলেও এটি তোমাদের সেই সাইকেল না। এটি অন্য কারও সাইকেল।’
মামলাটির তদারক কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেলটি চুরি হওয়ার পর থেকে তিন বোনের মন খারাপের ব্যাপারটি আমরা জানি। তাদের বাসায় পুলিশ গিয়ে কথা বলেছে। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সাইকেলটি উদ্ধার করতে।’
ছোট বোন রাইয়ানার মন ভালো করার জন্য হলেও পুলিশ যেন স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় সাইকেলটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করে, সেই আকুতি তনিমার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারক চন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেল চুরি হওয়ার পর আমরা বাসাটিতে গিয়ে তিন বোনের সঙ্গে কথা বলেছি। সাইকেলের সঙ্গে তাদের আবেগ জড়িত। আমরা আশা করি, তিন বোনের চুরি হওয়া সাইকেলটি উদ্ধার করে ফেরত দিতে পারব।’