বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে সারাদেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৩৫ অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান আকতারুল ইসলাম সমকালকে এ অভিযানের খবর নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার এ অভিযানকালে বিভিন্ন স্থানে বিআরটিএ ঘিরে সক্রিয় দালালদের হাতেনাতে আটক করা হয়। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পরীক্ষায় ফেল করলেও অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে পাস দেখানো, ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাস করতে ঘুষ লেনদেন, বিনা নোটিশে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিত না থাকা, দালাল দ্বারা অফিসের কাজ করাসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।
যশোর: অভিযানকালে ৩ দালালকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনজনকে এক হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
শেরপুর: জেলা বিআরটিএ অফিসে দুদক টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে সেবাগ্রহীতা সেজে অভিযান চালান। এ সময় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দালাল ও অফিসসংলগ্ন কম্পিউটার দোকানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। সেবা প্রার্থীরা জানান, কিছু কর্মচারীর সহায়তায় দালালরা টাকা নিয়ে লাইসেন্স তৈরি করে দেন। টাকা না দিলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হয়।
নীলফামারী: দুই দালালকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের অর্থদণ্ড দেন।
বরিশাল: দুদক টিম ছদ্মবেশে অভিযানকালে এক দালাল তাদের কাছে প্রতিটি ক্যাটেগরি-২ লাইসেন্স পেতে ১০ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ২১ হাজার টাকা দাবি করেন। অথচ সরকারি ফি মাত্র ৩ হাজার ৫২২ টাকা (লার্নার কার্ডসহ)। কথোপকথনের অডিও-ভিডিও রেকর্ড করে দালালকে হাতেনাতে ধরা হয়। পরে তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
বাগেরহাট: অভিযানকালে আউটসোর্সিং কর্মীদের মোবাইল ফোনে অস্বাভাবিক লেনদেন ও টাকা আদান-প্রদানের বার্তা পাওয়া যায়। পরীক্ষার খাতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অনেকে ফেল করলেও অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে পাস দেখানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল: সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে একজন মোটরযান পরিদর্শক জানান, তিনি অফিসের কেউ নন। ওই ব্যক্তি কীভাবে হেল্প ডেস্কে বসেছেন তা যাচাই করতে অফিস কর্তৃপক্ষকে দুদক টিম মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়।
গোপালগঞ্জ: ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ পেতে ঘুষ লেনদেন, রেজিস্টার খাতায় সিরিয়াল নম্বর ফাঁকা রেখে দুর্নীতির সুযোগ রাখা, দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থেকে কর্মকর্তাদের অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সহকারী পরিচালক সপ্তাহে একদিন অফিস করায় সেবাগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও: অভিযানকালে দু’জন দালালের মোবাইল নম্বর শনাক্ত করা হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৩০০ টাকা করে আদায় এবং পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে কিছু ব্যক্তিকে পাস করানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। দু’জন বহিরাগত ব্যক্তি কর্মচারী পরিচয়ে অফিসের বাইরে প্রভাব বিস্তার করছিলেন। তাদের পরিচয় ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে আইনি পদক্ষেপের জন্য বিআরটিএকে জানানো হয়।
দিনাজপুর: সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। দু’জনকে চার দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি দু’জনকে সতর্ক করা হয়।
আরও অভিযান: এ ছাড়াও বিআরটিএর বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, মাদারীপুর, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, জয়পুরহাট, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, রাঙামাটি অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিটি এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব আরট এ পর ক ষ য় ব আরট এ
এছাড়াও পড়ুন:
মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫: বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধি আকলিমা
সম্প্রতি বাংলাদেশের ফ্যাশন অঙ্গনের প্রভাবশালী উদ্যোক্তা ও ন্যাশনাল ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স পেয়েছেন। এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে আকলিমা আতিকা কনিকা।
সৌন্দর্য ও ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে বেশ কয়েক বছর থেকেই।দেশিয় প্রতিযোগিরা , ভিনদেশের প্রতিযোগিদের দিকে রীতিমতো ছুঁড়ে দিচ্ছেন চ্যালেঞ্জ। মোদ্দা কথা, মিস ওয়ার্ল্ড এর মতো বড় পরিসরের প্রতিযোগিতাতেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। এরই মাঝে বাংলাদেশ ফ্যাশনের ন্যাশনাল ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ পেলেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫ এর লাইসেন্স। এ বছরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীদের জন্য মিস ওয়ার্ল্ডের পথ সুগম হবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিলেন। যদিও তাঁর কাধে ইতিমধ্যে মিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মিস সেলিব্রিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং ফেস অফ এশিয়া, বাংলাদেশ-এর মতো বড় পরিসরের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়িত্ব আছে। এখানে উল্লেখ্য, মিস ওয়ার্ল্ড-এর ৭২তম আসরটি অনুষ্ঠিত হবে মে মাসে ভারতের তেলেঙ্গানায়।
সময়ের সীমাবদ্ধতা এবং বৈশ্বিক আয়োজনের বাঁধাধরা সময়সূচির কারণে এ বছর মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫-এর মূল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। বিশেষ কোনো আয়োজন ছাড়াই করা হয় প্রতিনিধি মনোনয়ন করা হয়।মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৪-এর প্রথম রানার আপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আকলিমা আতিকা কনিকা। এ বছর তিনিই বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দৈহিক সৌন্দর্য ছাপিয়েও যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে আকলিমার। তিনি ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ফেস অফ এশিয়া ২০২৪ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে লড়েছেন। তাঁর নিখুঁত উপস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুড়িয়েছে প্রশংসা। এই অভিজ্ঞতা তাকে মিস ওয়ার্ল্ড মঞ্চে একজন যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে আরও প্রস্তুত করে তুলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই সবদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মুখ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে তাঁকে।
আজরা মাহমুদ বলেন, আকলিমা মেধা, সৌন্দর্য ও উদ্দেশ্যবোধের প্রতীক। সে এমন একটি ফ্রেশ ফেইস যাকে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন সবার সামনে তুলে ধরতে চায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম এবং দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আছে। সে শীঘ্রই আমাদের ও বাংলাদেশের গর্ব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
আজরা মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্প (এ এম টি সি) ইতোমধ্যেই দেশের সম্ভাবনাময় তরুণীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুতি দেওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। সেখানে সৌন্দর্য, নেতৃত্ব, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাসের সমন্বয়ে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে নতুনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম।
আকলিমার এই মনোনয়ন এক কথায় আজরা মাহমুদের দূরদর্শিতা, সংগঠনের সামগ্রিক প্রস্তুতি ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীক। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার নামেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধারণা জন্মায় যে, এটি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। ধারণাটি একেবারেই ভুল। আজরা মাহমুদের উদ্যোগে প্রতিটি প্রতিযোগীকে সমাজসচেতন, শিক্ষিত ও ব্যক্তিসচেতনতা বৃদ্ধি করে, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা স্পষ্ট।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আকলিমা শুধুমাত্র একজন সুন্দরী প্রতিযোগী নন, বরং একজন সচেতন, আত্মপ্রত্যয়ী ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সঠিক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে সক্ষম নারী। আশা করা যায়, আকলিমা তাঁর লক্ষ্যে সফল হবেন। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে বাংলাদেশের মুকুটে যোগ হবে নতুন পালক, যা আগে কখনও দেখেনি বাংলাদেশ।