ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ড্রোন হামলা এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে চলমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সেনাবাহিনী এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরের খাসা সেনানিবাসের ওপর দিয়ে শত্রু পক্ষের একাধিক সশস্ত্র ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো শত্রুপক্ষের ড্রোনগুলো তাৎক্ষণিকভাবে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। 
"ভারতের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিপদে ফেলার পাকিস্তানের এমন প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য। ভারত শত্রুপক্ষের পরিকল্পনা ব্যর্থ করবে।"

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এর আগে জানিয়েছে, দেশটির তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। এখন শুধু ভারতকে জবাব দেওয়ার অপেক্ষা। জবাবের জন্য অপেক্ষা করুন। শনিবার ভোর সাড়ে তিনটায় পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, ভারত তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ চালিয়েছে। ‘অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র’ প্রতিহত করা হয়েছে। কোনো উড়োজাহাজের ক্ষতি হয়নি।

যেসব বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে সেগুলোর একটির অবস্থান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে। আরেকটি হলো রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটি। এটি ইসলামাবাদ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথিদের আসা-যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। ভারতের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর ওই ঘাঁটি থেকে নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

এদিকে তিন বিমানঘাঁটিতে ভারতের মিসাইল হামলার পরই পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আজ শনিবার ভোর থেকে পাল্টা হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতের বিয়াস অঞ্চলে ‌‘ব্রাহ্মোস মিসাইলের সংরক্ষণাগার উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। ভারতের আরও কিছু স্থাপনাতেও হামলা চালানো হচ্ছে। পাকিস্তান জবাব দিচ্ছে। ভারত যেসব ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের নাগরিক ও মসজিদের ওপর হামলা চালিয়েছে, সেসব জায়গা আমাদের পাল্টা হামলার মূল লক্ষ্য। 

পাকিস্তান জানিয়েছে, তিন বিমানঘাঁটিতে হামলার পাল্টা জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। দেশটি এই পাল্টা হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’। আরবি শব্দ বুনইয়ান–উন–মারসুস –এর অর্থ হলো ‘সুদৃঢ় প্রাচীর’।

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন বিমানঘাঁটিতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারত আমাদের দেশ, জনগণ ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাই আমরা এই জবাব দিয়েছি।’ এ হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে উত্তর ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগারসহ একাধিক স্থাপনাকে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতের বিয়াস অঞ্চলে ‘ব্রাহ্মোস মিসাইলের সংরক্ষণাগার উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। ব্রাহ্মোস হচ্ছে দীর্ঘ পাল্লার সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। দেশটির সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তারা ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটি এবং ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। 

অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছে, ভারতকে এখন পাকিস্তানের জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী মাতৃভূমি, আকাশসীমা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

তবে ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এই ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খুব শিগগিরই গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবে ভারতের সেনাবাহিনী। দীর্ঘদিনের কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে বুধবার থেকে প্রতিদিনই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে দুই প্রতিবেশী। ভারত বুধবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোর পর থেকেই উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়েছেন বলে দুই দেশের পক্ষ থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লক ষ য

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে বা করতে চায় এমন কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমরা নই। আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যদি গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দায়ী সংগঠনগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে? কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।’

শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিল। রংপুরে জাতীয় পার্টির ২ জন নেতা শহীদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মামলায় আমাদের অন্তত ৪ জন জেল খেটেছেন। মিথ্যা মামলায় আমাদের শতশত নেতা-কর্মী পালিয়ে বেড়িয়েছে। সংসদে ও সংসদের বাইরে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনে আমাদের অবদান শুধু অস্বীকার করাই হচ্ছে না, ছাত্র হত্যার মামলায় অন্যায়ভাবে আমাদের আসামিও করা হচ্ছে। যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তারাই বৈষম্য সৃষ্টি করছে- এমন অভিযোগ জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচিত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নাকি নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমার নেতৃত্বে প্রায় ২৭০ জন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমি তখন মন্ত্রী ছিলাম, বিভিন্নভাবে আমাকে নির্বাচনে থাকতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমাকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি রাজি হইনি। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গেলেও ওই বছর স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে গিয়েছিল। তাহলে ২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো কি আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেয়নি? ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমাদের দলকে ভাঙনের মুখে ফেলে, বিশেষ চাপ সৃষ্টি করে আমাদের নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আলোচিত বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই অবগত আছেন। তবে, সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমরা কোনো বেআইনি কাজ করেছি, মনে হয় না। যদি আমাদের নির্বাচনে যাওয়াকে জনগণের প্রত্যাশার বিপক্ষে মনে করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রায় গ্রহণ, শ্রেষ্ঠ বিচার বলে গণ্য হতে পারে, বলে বিশ্বাস করি।’

জাতীয় ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। জাতীয় ছাত্র সমাজ এর আহ্বায়ক মারুফ ইসলাম প্রিন্স এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. আরিফ আলীর পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, আলমগীর সিকদার লোটন, মনিরুল ইসলাম মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ইঞ্জিনিয়ার মাইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, একেএম নুরুজ্জামান জামান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহমুদ আলম, এমএ রাজ্জাক খান, ইব্রাহীম খান জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী, মো. ইউসুফ, জাতীয় ছাত্র সমাজ এর নেতৃবৃন্দের বক্তব্য রাখেন মো. নাজমুল হাসান রেজা, আরিফুল ইসলাম আরিফ, কাইসারুজ্জামান হিমেল, মো. তারিকুল ইসলাম হাওলাদার, খন্দকার রাসেল মাহমুদ, এমএম রেজাউল করিম, মো. জাহাঙ্গীর আলম রাজিব, মো. সেলিম রানা সিয়াম, হাওলাদার মো. জাহিদ, সাহিদুল ইসলাম সাকিল, রেজাউল করিম সুমন, রিয়াজ সিকদার, মো. মাসুম রানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ