চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি বিদেশিদের দেওয়ার চক্রান্ত চলছে: সিপিবি
Published: 10th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি অন্তর্বর্তী সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আজ শনিবার সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে সিপিবির নেতারা বলেন, ২০০৭ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে এনসিটি নির্মাণ করে। এরপর আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের (ওঠানো–নামানোর) যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। কিন্তু যখন গুরুত্বপূর্ণ এ টার্মিনাল পরিচালনার প্রসঙ্গ আসে, তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ এর দায়িত্বভার তুলে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে।
সিপিবির নেতারা বলেন, বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগমুহূর্তে এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তারা সেটি করতে পারেনি। এখন অন্তর্বর্তী সরকারও এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার জোর চক্রান্ত শুরু করেছে। আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন বিদেশি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।
সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে বারবার এ ধরনের ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না। এনসিটি, পিসিটি, সিসিটিসহ বন্দরের কোনো স্থাপনা দেশি-বিদেশি কোনো ধরনের বেসরকারি খাতে দেওয়া যাবে না। টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দরের তত্ত্বাবধানে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরাই পরিচালনা করতে সক্ষম বলে আমরা মনে করি।’
বিবৃতিতে এনসিটিকে বিদেশিদের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের যেসব স্থাপনা পরিচালনায় বেসরকারি গোষ্ঠী যুক্ত আছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুরাইশদের আল্লাহ নিরাপত্তা কেন দিলেন
সুরা কুরাইশ পবিত্র কোরআনের ১০৬তম সুরা। এ সুরায় বলা হয়েছে, মক্কার কুরাইশরা শীত ও গ্রীষ্মকালে বাণিজ্য উপলক্ষে দেশ ভ্রমণ করতেন। তাদের আল্লাহ ক্ষুধায় খাদ্য ও ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন। তাই তাদের উচিত কাবাগৃহের প্রতিপালকের উপাসনা করা।
সুরা কুরাইশের অর্থ আবার দেখে নিই:
পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। ১. কুরাইশদের সংহতির জন্য, ২. শীত ও গ্রীষ্মের সফরে তাদের সংহতির জন্য, ৩. তাদের উপাসনা করা উচিত এই কাবাগৃহের প্রতিপালকের, ৪. যিনি তাদের ক্ষুধায় খাদ্য দান করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন ভয়ভীতি থেকে।
সুরা কুরাইশের মূল কথা:
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে কুরাইশরা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয়, তাদের ঐক্য ও সংহতি যেন বজায় থাকে।
দ্বিতীয় আয়াতে শীত ও গ্রীষ্মের সফরেও তাদের সংহতির কথা বলেছেন। ‘রিহলাহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন আল্লাহ। এর অর্থ এমন ভ্রমণ, যাতে বাণিজ্য পণ্য, মালপত্র বহন করা হয়। কুরাইশরা শীতের ও গ্রীষ্ম উভয় সময়েই বাণিজ্য সফর করত। গ্রীষ্মকালে তারা সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের দিকে বাণিজ্য সফর করত। কারণ, এ দুটি শীতপ্রধান দেশ। আর শীতকালে সফর করত দক্ষিণ আরব তথা ইয়েমেনের দিকে। কারণ, সেটি গ্রীষ্মপ্রধান এলাকা।
তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, কাবাঘরের চাবি ও কর্তৃত্ব কুরাইশদের হাতে থাকার কারণেই তারা এত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। কুরাইশরা কাবার তত্ত্বাবধায়ক ছিল। তাদের ওপর আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন তার প্রতিদানস্বরূপ এই ঘরের রবের ইবাদত তাদের করা উচিত বলে আল্লাহ বলেছেন। অথচ তারা আল্লাহর ঘর কাবার তত্ত্বাবধায়ক থাকলেও আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত করত না।
ইবাদত আসলে দুটি কাজের সংমিশ্রণ। উপাসনা ও দাসত্ব। যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে ইবাদত পরিপূর্ণ হয় না।
আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫দুই নামাজের মাঝখানের সময়ে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা হলো দাসত্ব। আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহর উপাসনা করা ও উপাসনা বাদে অন্য সব সময়ে আল্লাহর দাসত্ব করাই হলো আল্লাহর ইবাদত করা। তৎকালীন কুরাইশরা উপাসনা ও দাসত্ব দুটিই লঙ্ঘন করেছিল। তারা এক আল্লাহর উপাসনা না করে আরও অনেক কিছুর উপাসনা করত, আল্লাহর দাসত্ব না করে অন্য কিছুর দাসত্ব করত।
কাবার তত্ত্বাবধায়ক হওয়ায়, নিরাপত্তাসহ সফর ও ব্যবসা করার কারণে তাদের ক্ষুধা বা খাদ্যের সমস্যা বা চিন্তা ছিল না। তার সঙ্গে আল্লাহ বিশেষভাবে তাদের ও আল্লাহর ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন আগের সুরা আল ফিলে। সুরা আল ফিলে আল্লাহ কাবা ধ্বংস করার পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার বর্ণনা দেন। তার একটি কারণ কুরাইশদের নিরাপত্তা।
আল্লাহ কুরাইশদের প্রতি তার বিশেষ দুটি নেয়ামতের কথা এখানে স্মরণ করিয়েছেন চতুর্থ ও শেষ আয়াতে। আরবে শীতকালে খাদ্যের তেমন উৎপাদন না থাকায় ক্ষুধার প্রকোপ ছিল। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে খাদ্য থাকায় আর্থিক সংগতিতে বাণিজ্য কাফেলায় চলাচল বৃদ্ধি পেত। তাই তখন ডাকাতির ভয় থাকত।
আরও পড়ুন‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মক্কায় আসার আগে কুরাইশরা যখন আরবের চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল, তখন তারা অনাহারে মরতে বসেছিল। এখানে আসার পর তাদের জন্য রিজিকের দরজাগুলো খুলে যেতে থাকে। তাদের সপক্ষে ইবরাহিম (আ.) এই বলে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার মর্যাদাশালী ঘরের কাছে একটি পানি ও শস্যহীন উপত্যকায় আমার সন্তানদের একটি অংশের বসতি স্থাপন করিয়েছি, যাতে তারা সালাত কায়েম করতে পারে। কাজেই আপনি লোকদের হৃদয়কে তাদের অনুরাগী করে দিন, তাদের খাবার জন্য ফলমূল দান করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭)
তাঁর এই প্রার্থনা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়।
মোটকথা, আরবের অন্যান্য গোত্রের মতো তারাও একটি বংশধারার বিক্ষিপ্ত দল ছিল মাত্র। কিন্তু মক্কায় এই ঘরের চারদিকে একত্র হওয়ার এবং এর সেবকের দায়িত্ব পালন করতে থাকার পর সমগ্র আরবে তারা মর্যাদাশালী হয়ে উঠেছে। সব দিকে তাদের বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যাওয়া–আসা করছে। তারা যা কিছুই লাভ করেছে, এ ঘরের রবের বদৌলতেই লাভ করেছে। কাজেই তাদের একমাত্র সেই রবেরই ইবাদত করা উচিত।
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার অর্থ ও ফজিলত০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫