যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং পোল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সায় পেলে সেটি অগ্রসর হবে। যুদ্ধবিরতির এই প্রচেষ্টায় যুক্ত রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতি নিয়ে যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন, তার সারাংশে রয়েছে এটি হতে হবে ‘শর্তহীন’। জেলেনস্কির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আরো যা যা রয়েছে-

জেলেনস্কির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব: শান্তির পথে ৩০ দিনের সুযোগ
মূল প্রস্তাবনার সারাংশে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরু হবে সোমবার (১২ মে) থেকে এবং এটি ৩০ দিন চলবে।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণের নিহতের খবর

জেলেনস্কির শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৮

যুদ্ধবিরতির আওতায় থাকবে আকাশপথ (ড্রোন, যুদ্ধবিমান ইত্যাদি বন্ধ), সমুদ্রপথ (নৌযান, সাবমেরিন অপারেশন নিষিদ্ধ), স্থলপথ (সেনা আগ্রাসন, গোলাবর্ষণ সম্পূর্ণ বন্ধ)। এই যুদ্ধবিরতি হবে ‘নিঃশর্ত’ – অর্থাৎ কোনো পক্ষকে অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হবে না।

যুদ্ধবিরতি তদারকির ব্যবস্থা

জেলেনস্কির মতে, যুদ্ধবিরতির তদারকি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে করা সম্ভব এবং বাস্তবায়নযোগ্য। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা কাজ করবে উভয় পক্ষের কার্যক্রম নিরীক্ষণ করতে।

শান্তি আলোচনার সূচনা

যুদ্ধবিরতির এই সময়টিকে ব্যবহার করে শুরু হবে আলোচনা, যার মূলে থাকবে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ভিত্তি। ভবিষ্যতে কীভাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা থাকতে হবে। 

রাজনৈতিক জায়গা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনে কূটনৈতিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। 

মানবিক দিক থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে সহায়তা, বন্দিমুক্তি ও বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন করতে হবে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার শর্ত

যদি রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে জ্বালানি খাত (গ্যাস, তেল) এবং ব্যাংকিং খাতের ওপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে একটি ‘শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ’ প্রস্তুত করছে, যা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে করা হয়েছে।

ইউরোপের পাঁচ নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ

বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেন সফর করছেন ইউরোপের চার নেতা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎজ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক। তারাসহ জেলেনস্কি মিলে কিয়েভ থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

জেলেনস্কি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে এই ফোনালাপকে ‘ইতিবাচক ও বাস্তবমুখী’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি লিখেছেন, “আমরা একমত হয়েছি যে, অবিলম্বে, পূর্ণাঙ্গ এবং নিঃশর্তভাবে কমপক্ষে ৩০ দিনের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।”

“প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সোমবার থেকে শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তবে তারা এখনো রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন,” বলেন জেলেনস্কি।

জেলেনস্কি আরো বলেন, “যখন যুদ্ধবিরতি শুরু হবে, তখনই হবে কূটনীতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। ইউক্রেন আলোচনার জন্য প্রস্তুত– যেকোনো ফরম্যাটে, যেকোনো স্তরে।”

অন্যান্য নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, এই যুদ্ধবিরতি "ইউক্রেনে একটি দৃঢ় এবং স্থায়ী শান্তির পথ সুগম করবে।"

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, "একটি ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।"

এই আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধ থামিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের দ্বার খুলতে চায়, এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি হচ্ছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন প রস ত ব ৩০ দ ন র ইউক র ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান

‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।

‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’

ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।

জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’

করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।

তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’

সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ