চট্টগ্রামের রাউজানে আলোচিত তিনটি হত্যা মামলায় নিরীহ লোকজনকে আসামি করে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে মামলার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলা থেকে আসামির নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। এসব হত্যা নিয়ে পুলিশের নীরব ভূমিকায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মামলার কার্যক্রম। জড়িতদের ধরতে পুলিশের ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার আসামিকে রক্ষার কৌশল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা যায়, ব্যবসায়ী মানিক আবদুল্লাহ হত্যার পর গত ১৯ এপ্রিল তাঁর স্ত্রী ছেমন আরা বেগম মামলা করেন। মামলার ৫ নম্বর আসামি রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেন। তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। ২৫ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। একই মামলায় ৯ নম্বর আসামি করা হয় বেতাগী ইউনিয়নের মো.

জামালকে। তাঁকেও ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।

২২ এপ্রিল রাউজানে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে। এ ঘটনায় মামলা করেন তাঁর মা খালেদা বেগম। সেখানে ৮ নম্বর আসামি করা হয় ব্যবসায়ী এসএম শহিদুল্লাহ রনিকে। তিনি থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। ইব্রাহিম হত্যায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ইব্রাহিম হত্যা শেষে দুর্বৃত্তরা যাওয়ার সময় মো. নাঈমকে গুলি করে। ওই ঘটনায় নাঈমের ভাই আবদুল মান্নান বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫-৬  জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
সূত্র বলছে, ইব্রাহিম হত্যায় অংশ নেওয়া দুর্বৃত্তরাই নাঈমকে গুলি করেছিল। তাহলে দুটি মামলায় আসামির ক্ষেত্রে ভিন্নতার মাধ্যমে অদৃশ্য গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়টি স্পষ্ট বলে মনে করেন স্থানীয়রা। 

মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী এস.এম. শহিদুল্লাহ রনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে হত্যাটি হলেও আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। অথচ আমি ঘটনার দিন রাউজানই ছিলাম না। এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমি প্রধান উপদেষ্টা, আইজিপি, পুলিশ সুপারসহ রাউজান থানা বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।’ মামলার বাদী খালেদা বেগম বলেন, ‘আমি আসামিকে চিনি না। আমার দেবর আবদুল হালিম আসামিদের নামে মামলায় দিয়েছেন। কেউ নিরপরাধ থাকলে আমার দেবরকে বলে নাম বাদ দেওয়া হবে।’

এদিকে রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের যুবদলকর্মী কমর উদ্দিন জিতু হত্যার ঘটনায় গত ১৮ মার্চ তাঁর স্ত্রী ডেজি আকতার মামলা করেন। ওই হত্যা মামলায় উপজেলা বিএনপির সদস্য মহিউদ্দিন জীবনকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। তিনি দাবি করেছেন, মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। অন্যদিকে একই মামলার দুই ব্যবসায়ীসহ তিনজনকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মামলার 
১৫ নম্বর আসামি হলদিয়া ইউনিয়নের খুদে ব্যবসায়ী মো. সৈয়দ, ১৬ নম্বর আসামি ফুলের দোকানি মো. মামুন ও ১৩ নম্বর আসামি মৎস্য হ্যাচারি কর্মচারী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ফুলের দোকানি মো. মামুন বলেন, ‘বিএনপির দু’পক্ষের কোন্দলের জেরে কমর উদ্দিন জিতু হত্যার শিকার হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ছিল। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করলে নিরীহ মানুষ হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।’

ব্যবসায়ী মো. সৈয়দ বলেন, ‘আমার মতো খুদে মানুষকে আসামি করে মামলাকে হালকা করা হয়েছে। প্রকৃত খুনিরা মামলা থেকে বাদ পড়েছে। আমি এ মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। মামলার বাদী ডেজি আক্তার বলেন, ‘আমি কাউকে আসামী করিনি। হত্যায় জড়িতদের নাম দিয়েছে পুলিশ।’ 
এ ব্যাপারে রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, ‘মামলার বাদী এজাহারে যাদের আসামি করেছেন, সেটা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে মামলা থেকে নিরপরাধ লোকদের বাদ দেওয়া হবে। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ