চলাচলের রাস্তা নিয়ে বিরোধে পূর্ব বিরোধের জেরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মো. সাইদুর রহমান (৬৫) নামে এক প্রবীণ কৃষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বেল্লাল হোসেন (৫৫) ও তার ছেলে মো. আনিছুর রহমানের (২৩) বিরুদ্ধে। নিহত সাইদুর রহমান একই গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। 

এদিকে এ ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযুক্ত বেল্লাল ও তার ছেলে আনিছুর রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে তাদের বাড়ির তিনটি ঘর ও ঘরে থাকা সকল সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশাপাশি এ সময় বেল্লাল হোসেন ও আনিছুর রহমানসহ ওই পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়।

শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে সোয়া চারটার মধ্যে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের চৌ-পাকিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাড়াশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চৌ-পাকিয়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক মো.

সাইদুর রহমান ও প্রতিবেশী বেল্লাল হোসেন ও তার ছেলে আনিছুর রহমানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য একটি রাস্তা আছে। ওই রাস্তা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আজ বেলা তিনটার দিকে সাইদুর রহমান নামাজ শেষে বাড়ি ফিরলে চলাচলের ওই রাস্তা নিয়ে কৃষক সাইদুর রহমানের সঙ্গে প্রতিবেশী বেল্লাল ও তার ছেলে আনিছুর রহমানের মধ্যে প্রথমে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। পরে বেল্লালের ছেলে আনিছুর ওই রাস্তার জায়গা তাদেও দাবি করে তা দিয়ে চলাচল করতে সাইদুর রহমানকে নিষেধ করে। এতে সাইদুর রহমান প্রতিবাদ করলে রেগে গিয়ে লাঠি নিয়ে এসে বাবা ও ছেলে মিলে সাইদুর রহমানকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয়।

এদিকে এ প্রতিবেদন লেখাকালীন চৌ-পাকিয়া গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। মরদেহ উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে। পরে বিস্তারিত জানাব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ট য় হত য স র জগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় না খেয়ে আছে বহু মানুষ: ট্রাম্প

আড়াই মাস ধরে গাজায় কোনো সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। পানীয় জল, খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জ্বালানির অভাবে ধুঁকছে হাসপাতালগুলোও। এর মধ্যেও ফিলিস্তিনের উপত্যকায় বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলের বিমান হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় গাজায় বহু মানুষ না খেয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উপসাগরীয় সফরের শেষ দিন শুক্রবার আবুধাবিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের গাজা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য এমন একসময় এলো, যখন তিনি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফর শেষ করছিলেন। সফরে তিনি বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ ভ্রমণ করলেও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইসরায়েলকে বাদ দিয়েছেন। যদিও ব্যাপকভাবে আশা করা হয়েছিল, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের ফলে গাজা নিয়ে নতুন ঘোষণা আসতে পারে। পুনরায় সেখানে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে। 

তবে এখনও তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো গত ৭২ ঘণ্টা ধরে গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণের ফলে সহিংসতার মাত্রা গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় সফরের শেষ দিন শুক্রবার ট্রাম্প আবুধাবিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গাজার দিকে নজর রাখছি। আমরা অঞ্চলটির যত্ন নেব। সেখানে বহু মানুষ না খেয়ে আছে।’ 

গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, সেখানে গুরুতর খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার কাতারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ে নিলে, এটিকে মুক্ত অঞ্চল (ফ্রিডম জোন) বানালে, আমি মনে করি, আমি গর্বিতই হবো। ভালো কিছু হতে দিন। মানুষজনকে ঘরে রাখুন, যেখানে তারা নিরাপদে থাকবে। হামাসকেও মোকাবিলা করা হবে। চলুন, গাজাকে একটি ‘ফ্রিডম জোন’ হিসেবে তৈরি করি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত হতে দিন।’ 

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার হামাস জোর দিয়ে বলেছে, বিধ্বস্ত অঞ্চলে পুনরায় মানবিক সহায়তা চালু করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এখানে অন্য কোনো আলোচনা একেবারেই অবান্তর। ট্রাম্প আবারও এই অঞ্চলটি দখল করে ‘একটি মুক্ত অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি সতর্ক করে দিয়েছে, গাজা বিক্রয়ের জন্য নয়। 

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা উত্তর গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-মুগাইর শুক্রবার বলেন, মধ্যরাত থেকে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। বিকেল নাগাদ মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। এর আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল আড়াই শতাধিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১১৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারের কাছাকাছি। 

উত্তর গাজার বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী উম্মে মোহাম্মদ আল-তাতারি এএফপিকে বলেন, আমরা ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ আমাদের চারপাশের সবকিছু বিস্ফোরিত হয়ে গেল। সবাই এদিক-সেদিক দৌড়াতে শুরু করে। আমরা নিজের চোখে ধ্বংসস্তূপ দেখেছি। সর্বত্র রক্ত, শরীরের বিচ্ছিন্ন অংশ ও মৃতদেহ। আমরা জানতাম না কে মারা গেছে, আর কে এখনও বেঁচে আছে। ৩৩ বছর বয়সী আহমেদ নাসর বলেন, রাতভর বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। আমরা ঘুমাতে পারিনি। কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারি। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করে নিয়ে যাওয়া ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৫৭ জন গাজাতেই রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী। 

গাজায় এখনও বন্দি জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী ইসরায়েলের প্রধান গ্রুপটি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের প্রিয়জনদের বের করে আনার একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ হারিয়ে ফেলছেন। 

হোস্টেজস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় ক্রমবর্ধমান হামলা ও ট্রাম্পের এই অঞ্চলে সফর শেষের খবরে জিম্মিদের পরিবারগুলো সকালে গভীর উদ্বেগ নিয়ে ঘুম থেকে উঠেছিল। এই ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া করা হবে একটি বিরাট ব্যর্থতা, যা চিরকাল কুখ্যাতভাবে স্মরণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ