রোববার প্রজ্ঞাপন না হলে আবারও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ৭ কলেজের
Published: 17th, May 2025 GMT
সাত কলেজ নিয়ে গঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন আগামীকাল রোববারের মধ্যে জারি না করা হলে আগামী সোমবার থেকে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে জনদুর্ভোগ এড়াতে এবার মন্ত্রণালয়ের সামনে কর্মসূচি দেবেন তারা।
আজ শনিবার বিকেলে ইডেন মহিলা কলেজের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সাত কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। এ সময় অন্যান্য কলেজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ; আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও লোগো বা মনোগ্রাম প্রকাশ এবং আগামী এক মাস তথা ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া।
এ ছাড়াও প্রশাসকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশের পাশাপাশি ভুতুড়ে ফলের সমাধান; বিভিন্ন ইস্যুতে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধসহ যাবতীয় অসংগতিগুলো স্পষ্টভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। তারা বলেন, প্রথম দাবির বিপরীতে প্রজ্ঞাপন না দেওয়া হলে মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখা হবে। আর এবার মাঠে নামলে রাজপথে থেকেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরবেন।
তারা আরও বলেন, সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি এ কলেজগুলো পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব করে। অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে এ প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করার কথা। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের বিষয়ে ইউজিসির প্রস্তাবের আড়াই মাস পার হলেও এখনো তার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ত কল জ স ত কল জ কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করুন
গত কিছুদিন ধরিয়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী–বিএসএফ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়া দলে দলে মানুষকে বাংলাদেশে যে ‘পুশইন’ করিয়া চলিয়াছে, উহা অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই; সৎ প্রতিবেশীসুলভও নহে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ হইতে ১৫ মে পর্যন্ত মেহেরপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা– বাংলাদেশের এই পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়া বিএসএফ অন্তত ৩১৮ জনকে ঠেলিয়া দিয়াছে। অধিকতর উদ্বেগজনক হইল, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এহেন চূড়ান্ত অকূটনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ জানাইবার পরও ভারত সরকার পুশইন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিয়াছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী প্রবেশপথের নিকট প্রায় ১৫০ জনকে জড়ো করা হয়, যদিও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি অবগত হইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকায় বিজিবি রাতভর টহল জোরদার করিলে উক্ত পুশইন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শুধু উহা নহে, বৃহস্পতিবার রাত্রি ২টার দিকে উক্ত জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়া ৭৫০ নারী-পুরুষকে পুশইন করিবার চেষ্টা চালায় বিএসএফ। এই ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান গ্রহণকারী বিজিবির সহিত স্থানীয় জনতাও যোগ দেয়। পরিস্থিতি বুঝিতে পারিয়া বিএসএফ অকুস্থল হইতে সরিয়া যায়। এই অবস্থায় বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় উদ্বেগ-উত্তেজনা সৃষ্টি হইয়াছে। এলাকাবাসী আতঙ্কের সহিত নিরাপত্তহীনতায়ও ভুগিতেছে। এমনিতেই সীমান্ত হত্যা, আন্তঃনদীর পানি সমস্যাসহ দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত নানা সংকটের কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে একটা শীতল ভাব চলিতেছে, যাহা উভয় দেশেরই জনগণের জন্য নানাবিধ কষ্টের কারণ হইয়া রহিয়াছে। এই অবস্থায় পুশইন সমস্যা নিশ্চিতভাবে দুই দেশের সম্পর্কে অধিকতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে।
আমরা জানি, ভারতের কিছু বিশেষ মহল দীর্ঘদিন ধরিয়া বাংলাদেশ হইতে সেই দেশে অনুপ্রবেশ ঘটিবার অভিযোগ করিয়া আসিতেছে, বিশেষত দিল্লিতে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হইবার পর তাহা নূতন মাত্রা পায়। আমরা ইহাও জানি, ভারতেরই বহু পর্যবেক্ষক মনে করেন, এহেন অভিযোগের সহিত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটা সংযোগ রহিয়াছে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের জনমত নিজেদের পক্ষে টানিবার লক্ষ্যেই বিজেপি নেতৃবৃন্দ এই ইস্যুটি ব্যবহার করেন বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। তাহাদের নিকট বাংলাভাষী মাত্রই বাংলাদেশি, আর এই অভিযোগে রাজ্যটির বর্তমান সরকারকে কথিত অনুপ্রবেশের দায়ে দাগাইয়া দেওয়া যায়। যেই কারণে কোনো যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্য হইতে বাংলাভাষীদের আটক করিয়া বাংলাদেশে পুশইন করা হইতেছে। বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলিয়া আসিতেছে, প্রকৃত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে বেআইনিভাবে অবস্থান করিলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁহার প্রত্যাবাসনে কোনো বাধা নাই। উপরন্তু, বাংলাদেশের তো বটেই, ভারতেরও আইন অনুযায়ী পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করিলে তাঁহাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করিতে হয়। এই নিয়ম বিদেশিদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’-এর প্রধান কিরীটী রায় বিবিসি বাংলাকে বলিয়াছেন, ‘বিদেশ হইতে কেহ যদি পাসপোর্ট-ভিসা ব্যতিরেকে ভারতে আসেন, তাহা হইলে তাঁহাকে চিহ্নিত করিয়া গ্রেপ্তার করিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করিতে হয়। উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা হয়। মামলায় সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে তাঁহার সাজা হইবে। সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে আদালতের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেই দেশ হইতে আসিয়াছেন, তথায় ফেরত পাঠাইতে হইবে।’ কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই সেই আইন উপেক্ষা করিয়াছে, অদ্যাবধি যাহা অব্যাহত আছে। জানা গিয়াছে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের নানা রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী খুঁজিবার অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানে আটককৃতদেরই অনেককে বাংলাদেশে ঠেলিয়া দিতেছে বিএসএফ। এমনকি পুশইনের শিকার অনেকে নির্যাতনের অভিযোগও করিয়াছেন, যাহা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের সহিত সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কূটনৈতিক প্রয়াস জোরদার করিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে দুই দেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং জনগণকেও সোচ্চার হইবার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যায়।