দিনাজপুরের বিরামপুর শহরের ইসলামপাড়ায় প্রতিবেশী একটি বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে ইটের দেয়াল নির্মাণ করে সংখ্যালঘু এক পরিবারকে বিপাকে ফেলা হয়েছে। ওই পরিবারের অভিযোগ, উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা মোস্তাফিজুর রহমান (৬২) প্রভাব খাঁটিয়ে জমি দখল করে ফটকের সামনে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এতে তাঁরা দেড় বছর ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগের পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রতিবেশী সংখ্যালঘু পরিবারটির সদস্যরা।
মোস্তাফিজুর রহমান বিরামপুর শহরের ইসলামপাড়ার বাসিন্দা, জাপা বিরামপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার ৭ নম্বর পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। ভুক্তভোগী প্রতিবেশী নারীর নাম সুমতি রানী। তিনি একই পাড়ার মৃত নারায়ণ চন্দ্র শীলের স্ত্রী। সুমতি রানী ১৯৮৫ সাল থেকে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
কিছু বললেই এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদের হুমকি দেন। আমরা এখন আমার বড় বোনের বাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করি। সুমতি রানী, ভুক্তভোগী নারীভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ি নির্মাণের পর থেকেই সুমতি রানী বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। তাঁর বাড়ি-সংলগ্ন পশ্চিম পাশে তাঁর বড়বোন রেণু বালার বাড়ি। ২০১৪ সালে রেণু বালার ছেলে কালীপদ শীলের কাছ থেকে সুমতি রানী বাড়ি-সংলগ্ন এক শতাংশ জমি কিনে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরে সেখানে দুই শতাংশের বেশি জমি দখল করে দেড় বছর আগে সুমতি রানীর বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে ইটের দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে নিজের বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সুমতি রানী। সেই থেকে বড়বোন রেণু বালার বাড়ির ভেতর দিয়ে বাইরে যাওয়া-আসা করছেন। পরবর্তী সময়ে সুমতি রানীর বাড়ি থেকে বৃষ্টি ও গোসলখানার পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ করে দেন। ঘরের জানালার পাশে মলমূত্র ফেলে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদ্যরা অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় সুমতি রানীর ছেলে জীবন কুমার শীল গত ১৯ এপ্রিল বিরামপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। দুই দিন পর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইয়েদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তবে এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু সংখ্যালঘু পরিবারটি নয়। প্রভাব খাঁটিয়ে জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ এবং অন্য প্রতিবেশীর বাড়ির দেয়াল সংস্কারে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।
সুমতি রানী বলেন, ‘কিছু বললেই এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদের হুমকি দেন। আমরা এখন আমার বড় বোনের বাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করি। বোন মারা গেলে তার ছেলেরা যদি তাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে আমাদের বের হতে না দেয়, তখন আমরা কীভাবে বের হব?’
সুমতি রানীর বড় বোন বেণু বালা বলেন, ‘মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে কয়, এমন বাড়ান বাড়াব (মারধর) মাও-বেটা রাস্তা খুঁজে পাবে না, এ রকম আচরণ করে।’
জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি রাস্তা কোথায় বন্ধ করেছি? আমি এক শতাংশ জমি কিনে হাফ শতাংশ ছেড়ে দিয়েছি। দুই শতাংশ জমিতে ঘরবাড়ি করব। তখন তো আমার এত বেশি রাস্তা লাগবে না। আমি একটা গলির মতো রাস্তা রাখব। আমি কী ক্ষতি করেছি, আমি তো তার উপকার করেছি। জমিটি কতখানি আছে, সেটা মাপতে হবে।’
দেড় বছর বা দুই বছর আগে তো উনি দেয়াল দিয়েছেন। বাড়ির রাস্তা যদি না দিয়ে থাকেন, তাহলে রাস্তা আমি বের করে দিতে পারব না। মমতাজুল হক, ওসি, বিরামপুর থানাগত ৪ মে ইসলামপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সুমতি রানীর বাড়ির পশ্চিমে বাহির পথের উত্তরে লাল রঙের ফটক। সেই ফটকের সামনে ইটের দেয়াল। দেয়ালঘেঁষা রেণু বালার বাড়ির গলির ভেতর দিয়ে সুমতি রানীর পরিবারের লোকজন যাওয়া-আসা করছেন। আর সুমতি রানীর বাড়ির আঙিনার মাঝখানে থাকা একটি বরইগাছের উত্তর দিকের বেশ কয়েকটি ডাল কাটা। ডালগুলো মোস্তাফিজুর রহমান তাঁদের কাটতে বাধ্য করেছেন বলে জানান সুমতি রানী।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘দেড় বছর বা দুই বছর আগে তো উনি দেয়াল দিয়েছেন। বাড়ির রাস্তা যদি না দিয়ে থাকেন, তাহলে রাস্তা আমি বের করে দিতে পারব না। রাস্তা বের করে দেবেন ইউএনও বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
ইউএনও নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত জমির মধ্যে ইউএনও কী করতে পারে? আমরা বড় জোর বলতে পারি। দেশের কোর্ট-কাচারি আছে? সব তো আর আমরা করতে পারব না। সরকারি জমি–সংক্রান্ত স্বার্থ থাকলে সেখানে আমরা গিয়ে ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে পারি। ব্যক্তিগত জমিতে কোনো কিছু করার এখতিয়ার আদালত আমাদের দেননি। আমি ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের (জরিপকারক) সঙ্গে কথা বলে তাঁকে সেখানে দেখার জন্য পাঠাব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন ইট র দ য় ল পর ব র র দ ড় বছর আম দ র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’