Prothomalo:
2025-08-02@11:16:03 GMT

ফটকের সামনে ইটের দেয়াল

Published: 18th, May 2025 GMT

দিনাজপুরের বিরামপুর শহরের ইসলামপাড়ায় প্রতিবেশী একটি বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে ইটের দেয়াল নির্মাণ করে সংখ্যালঘু এক পরিবারকে বিপাকে ফেলা হয়েছে। ওই পরিবারের অভিযোগ, উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা মোস্তাফিজুর রহমান (৬২) প্রভাব খাঁটিয়ে জমি দখল করে ফটকের সামনে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এতে তাঁরা দেড় বছর ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগের পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রতিবেশী সংখ্যালঘু পরিবারটির সদস্যরা।

মোস্তাফিজুর রহমান বিরামপুর শহরের ইসলামপাড়ার বাসিন্দা, জাপা বিরামপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার ৭ নম্বর পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। ভুক্তভোগী প্রতিবেশী নারীর নাম সুমতি রানী। তিনি একই পাড়ার মৃত নারায়ণ চন্দ্র শীলের স্ত্রী। সুমতি রানী ১৯৮৫ সাল থেকে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

কিছু বললেই এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদের হুমকি দেন। আমরা এখন আমার বড় বোনের বাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করি। সুমতি রানী, ভুক্তভোগী নারী

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ি নির্মাণের পর থেকেই সুমতি রানী বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। তাঁর বাড়ি-সংলগ্ন পশ্চিম পাশে তাঁর বড়বোন রেণু বালার বাড়ি। ২০১৪ সালে রেণু বালার ছেলে কালীপদ শীলের কাছ থেকে সুমতি রানী বাড়ি-সংলগ্ন এক শতাংশ জমি কিনে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরে সেখানে দুই শতাংশের বেশি জমি দখল করে দেড় বছর আগে সুমতি রানীর বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে ইটের দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে নিজের বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সুমতি রানী। সেই থেকে বড়বোন রেণু বালার বাড়ির ভেতর দিয়ে বাইরে যাওয়া-আসা করছেন। পরবর্তী সময়ে সুমতি রানীর বাড়ি থেকে বৃষ্টি ও গোসলখানার পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ করে দেন। ঘরের জানালার পাশে মলমূত্র ফেলে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদ্যরা অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় সুমতি রানীর ছেলে জীবন কুমার শীল গত ১৯ এপ্রিল বিরামপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। দুই দিন পর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইয়েদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তবে এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু সংখ্যালঘু পরিবারটি নয়। প্রভাব খাঁটিয়ে জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ এবং অন্য প্রতিবেশীর বাড়ির দেয়াল সংস্কারে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।

সুমতি রানী বলেন, ‘কিছু বললেই এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদের হুমকি দেন। আমরা এখন আমার বড় বোনের বাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করি। বোন মারা গেলে তার ছেলেরা যদি তাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে আমাদের বের হতে না দেয়, তখন আমরা কীভাবে বের হব?’

সুমতি রানীর বড় বোন বেণু বালা বলেন, ‘মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে কয়, এমন বাড়ান বাড়াব (মারধর) মাও-বেটা রাস্তা খুঁজে পাবে না, এ রকম আচরণ করে।’

জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি রাস্তা কোথায় বন্ধ করেছি? আমি এক শতাংশ জমি কিনে হাফ শতাংশ ছেড়ে দিয়েছি। দুই শতাংশ জমিতে ঘরবাড়ি করব। তখন তো আমার এত বেশি রাস্তা লাগবে না। আমি একটা গলির মতো রাস্তা রাখব। আমি কী ক্ষতি করেছি, আমি তো তার উপকার করেছি। জমিটি কতখানি আছে, সেটা মাপতে হবে।’

দেড় বছর বা দুই বছর আগে তো উনি দেয়াল দিয়েছেন। বাড়ির রাস্তা যদি না দিয়ে থাকেন, তাহলে রাস্তা আমি বের করে দিতে পারব না। মমতাজুল হক, ওসি, বিরামপুর থানা

গত ৪ মে ইসলামপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সুমতি রানীর বাড়ির পশ্চিমে বাহির পথের উত্তরে লাল রঙের ফটক। সেই ফটকের সামনে ইটের দেয়াল। দেয়ালঘেঁষা রেণু বালার বাড়ির গলির ভেতর দিয়ে সুমতি রানীর পরিবারের লোকজন যাওয়া-আসা করছেন। আর সুমতি রানীর বাড়ির আঙিনার মাঝখানে থাকা একটি বরইগাছের উত্তর দিকের বেশ কয়েকটি ডাল কাটা। ডালগুলো মোস্তাফিজুর রহমান তাঁদের কাটতে বাধ্য করেছেন বলে জানান সুমতি রানী।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘দেড় বছর বা দুই বছর আগে তো উনি দেয়াল দিয়েছেন। বাড়ির রাস্তা যদি না দিয়ে থাকেন, তাহলে রাস্তা আমি বের করে দিতে পারব না। রাস্তা বের করে দেবেন ইউএনও বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

ইউএনও নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত জমির মধ্যে ইউএনও কী করতে পারে? আমরা বড় জোর বলতে পারি। দেশের কোর্ট-কাচারি আছে? সব তো আর আমরা করতে পারব না। সরকারি জমি–সংক্রান্ত স্বার্থ থাকলে সেখানে আমরা গিয়ে ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে পারি। ব্যক্তিগত জমিতে কোনো কিছু করার এখতিয়ার আদালত আমাদের দেননি। আমি ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের (জরিপকারক) সঙ্গে কথা বলে তাঁকে সেখানে দেখার জন্য পাঠাব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন ইট র দ য় ল পর ব র র দ ড় বছর আম দ র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা, জামায়াতের পদ থেকে অব্যাহতি
  • বিএনপির সাবেক নেতার হুমকি, সরিয়ে ফেলা পোস্টার ইউএনওকেই লাগাতে হবে
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ