বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা এখনও অফিসিয়ালি কিছু জানি না।  ফরমালি জানার পর ব্যবস্থা নিতে পারবো। সরকারি সংস্থাগুলো বিশ্লেষণ করে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা করণীয় নির্ধারণ করবো। সেখানে যদি সমস্যা দেখা দেয় বা তৈরি হয় তাহলে উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো

রবিবার (১৮ মে) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নিজেদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। দেশটি গতকাল শনিবার  জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে শুধু নাভা শেভা এবং কলকাতা সমুদ্র বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আনা যাবে। তবে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

ভারতের এমন পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা কী ভাবছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা এখনও অফিসিয়ালি ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ থেকে আমরা জানি তারা স্থলবন্দর বিশেষ করে আখাউড়া, ডাউকিস্থল বন্দরসহ কিছু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ফরমালি জানার পর ব্যবস্থা নিতে পারবো। তবে আমাদের বিশ্লেষণ চলছে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলো সেটা করছে। আমরা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা করণীয় নির্ধারণ করবো।’’

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশ থেকে খুব বেশি যে সব কিছু যায় তা কিন্তু না। গার্মেন্টস শিল্পের একটা বড় পরিমাণ যায়। আপনারা এটা জানেন যে, প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনই আমাদের বড় লক্ষ্য। এটা দুই জনের জন্য লাভজনক বিষয়। আমরা নিশ্চয়ই মনে করি ভারত নিজেও একটা টেক্সটাইল বা বস্ত্র শিল্পে সমৃদ্ধ দেশ। এরপরও যখন আমাদের দেশ থেকে এসব পণ্য রপ্তানি হয় সেটা আমাদের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই। তবে আমরা আশা করি উভয় দেশের ভোক্তা ও উৎপাদনের স্বার্থে এটা চলমান থাকবে।’’

ট্রান্সশিপমেন্ট এবং রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ট্রান্সশিপমেন্টের প্রভাব আমাদের নেই। আমরা নিজেদের সক্ষমতা ব্যবহার করে নিজস্বভাবেই এই সমস্যার সমাধান করেছি।’’

‘‘অবশ্যই, এটা তো প্রতিযোগিতায় সক্ষমতার বিষয়। বিভিন্ন সময় আপনারা দেখছেন আমরা যেহেতু ভৌগোলিকভাবে কানেক্টেড একটা দেশ। আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা, পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য জিনিসগুলো নির্দিষ্ট। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের কৃষিপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি, ভারতও করে। সেটা চলমান একটা প্রক্রিয়া। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া আমরা। এ বিষয়েও কাজ করছি।’’

‘‘আমাদের বেশ কিছু বন্দর এখনও চালু আছে। আমাদের সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমি এখনও রিপোর্ট দেখিনি। আপনারা যেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছেন আমিও সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছি। আমাদের আরো দুই একদিন সময় লাগবে, পুরো পরিস্থিতিটা জানার জন্য আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। আজ না হয় কালকের মধ্যে তথ্য পেয়ে যাবো, তখন আমরা আরো ভালোভাবে জানতে পারবো।’’

ভারতের সঙ্গে কী তাহলে আলোচনায় যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘প্রয়োজনে সব কিছু করবো। তবে এ বিষয়টি আমাদের এখনও অফিসিয়ালি জানানো হয়নি।’’

যে দুটি সিদ্ধান্ত আমরা দেখলাম সেটা কি সাম্প্রতিক দুই দেশের সম্পর্কের কারণে হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমার কাজ বাণিজ্য আমি এটাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। সবসময় যেটা বলে এসেছি আমি উদার বাণিজ্যে বিশ্বাসী। আমার কাছে বাণিজ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমার দেশের ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বাণিজ্য উদারিকরণ ও বাণিজ্য ইনক্লুশন ছাড়া আর কোনো রাস্তা আমি দেখি না।

সরকার বলছে আমরা বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন করবো, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করবো অথচ পরিস্থিতি উল্টো দেখা যাচ্ছে, এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই জিনিসগুলোই আলোচনায় নিয়ে আসবো। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ভারতের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য সেটা ভারতের দিকেই অধিক ভারী। আমরা নিশ্চয়ই এই অবস্থানগুলো তুলে ধরবো। একই সঙ্গে আশা করছি এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো।

এই ধরনের সিদ্ধান্তে ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে সেটা কীভাবে কমিয়ে আনবেন এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, এক দিনে তো আর বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারবেন না। আমরা যেটা ভারত থেকে রিসোর্স করি সেটা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হিসেবে, ভারতও সেটা করে। সেটা প্রাকৃতিক বিষয়ের কারণেই হয়ে আসছে। আমরা আমাদের বৈচিত্র্য করণের মাধ্যমে ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধি করবো।

ঢাকা/হাসনাত//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ণ জ য উপদ ষ ট আম দ র ব পদক ষ প সমস য আপন র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, সারাদেশের পলিটেকনিকে বিক্ষোভ কাল

একটি রিট মামলায় দেওয়া রায় বাতিলের দাবিতে আগামীকাল রোববার হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা। এদিন সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করার ঘোষণাও দিয়েছে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি দিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। সেখানে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের সমস্যার যে সমাধান; সেটি আমরা এখনও দেখতে পাইনি।’

মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিলেও হাইকোর্টের যে রায় আছে, সেটি নিয়ে কোনো ফলাফল তারা পাননি বলে তুলে ধরেন জোবায়ের। তিনি বলেন, ‘এ রায়টি নিয়ে শুনানি করা হয়েছিল, সেদিন রায়টি স্থগিত করা হয়।’

আগামীকাল রোববার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এই রায়টি সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি করা হোক। এদিন প্রত্যেকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হবে এবং ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের এই দাবিগুলো দ্রুততম সময় মেনে নিন।’

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখার খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকার কারিগরি শিক্ষক তথা ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের এ রূপরেখা সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হবে।’

ছয় দফা পূরণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে রাস্তায় নামেন। সপ্তাহখানেক ধরে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করে। এরপর তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।

তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে তাদের তরফ থেকে।

৭ মে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের পদোন্নতি বিষয়ে হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা।

২. ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা ও মামলা করার সঙ্গে জড়িত ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

৩. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদী অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।

৪. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে।

৫. বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের মূল বেতনের সমান অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হ্যাকার যুদ্ধে ডিডস
  • একজনের অসুস্থতায় আটকা ৪ লাখ শিক্ষকের বেতন, আজ মাউশি ঘেরাওয়ের ঘোষণা
  • স্বপ্ন পূরণের পথে ফাহমিদুল
  • দুই বিভাগের টানাপোড়েনে নষ্ট হচ্ছে ১২শ গাছের আম
  • হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, সারাদেশের পলিটেকনিকে বিক্ষোভ কাল
  • গাজায় না খেয়ে আছে বহু মানুষ: ট্রাম্প
  • গুজব, অপপ্রচার, আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
  • নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করছে: ফরহাদ মজহার