রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহানের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে দুদককে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেন রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো.

আব্দুস সোবহান। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত কমিটির দলনেতা হিসেবে আছেন, দুদকের উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। বাকি দুই সদস্য হলেন, দুদক কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া ও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আরো পড়ুন:

প্রশাসনিক কাজেও বিরত থাকার ঘোষণা কুয়েট শিক্ষক সমিতির

ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব, শিক্ষকের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে আব্দুস সোবহানের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি দুদক। ফলে তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে বিলম্ব হচ্ছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বারবার তথ্য চেয়েও সহযোগিতা না পাওয়ায় দুদকের ধারায় রাবি প্রশাসনের নামে যেকোনো সময় মামলা হতে পারে। দুদকের ১৯ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে তথ্য চেয়ে সহযোগিতা না পেলে তার নামে মামলা করতে পারবে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের কাছে কয়েক দফায় চিঠি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে অনুসন্ধানের কাজ বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে।

রাবি প্রশাসনের কাছে সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহানকে নিয়ে ছয় ধরনের তথ্য চেয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে-

১. অধ্যাপক এজাজুল হকের নেতৃত্বে গঠিত রাবির ‘পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি)’ প্রকল্পের ৩ কোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে নেওয়া ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।

২. আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষে ৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ঘাটতি সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং তার পদে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাত ভিত্তিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী (অর্থ বছর ভিত্তিক)।

৩. তার মেয়ে রাবি প্রভাষক সানজানা সোবহান ও জামাতা এটিএম সাহেদ পারভেজের এনআইডি/স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি।

৪. রাবিতে তিনি নিয়োগ পাওয়ার পূর্বের ও পরের কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার সত্যায়িত ফটোকপি।

৫. তার ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপি।

৬. তার সময়ে গৃহীত প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ, প্রাপ্ত টেন্ডারের সংখ্যা, টেন্ডার আহ্বানের পদ্ধতি, কার্যাদেশ প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, পরিশোধিত টাকার পরিমাণ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম, পদবী ও তাদের দায়িত্বের সব ডকুমেন্টের ফটোকপি।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই ছয়টি বিষয়ে তথ্য চেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো ধরনের তথ্য তাদের কাছ থেকে পাইনি। ফলে আব্দুস সোবহানকে নিয়ে তদন্তের কাজ বিলম্ব হচ্ছে। আমরা আবারো দেখব, যদি তথ্য না পাই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে দুদক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দুদকের চিঠি এসেছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, “দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তবে তারা যেসব তথ্য চেয়েছেন, তার মধ্যে কিছু তথ্য দিতে পেরেছি। আবার অনেক তথ্যই আমাদের কাছে নেই। ফলে আমরা সময় নিয়েছি।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “দুদকের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমার কাছে এসেছিলেন। দুদক যেসব তথ্য আমাদের কাছে চাইবে, তার সব তথ্য দেওয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেনো দেয়নি সেই বিষয়টি আমার জানা নেই।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ক উপ চ র য কর মকর ত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতি তদন্তে অসহযোগিতা রাবি প্রশাসনের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহানের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে দুদককে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেন রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত কমিটির দলনেতা হিসেবে আছেন, দুদকের উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান। বাকি দুই সদস্য হলেন, দুদক কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া ও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আরো পড়ুন:

প্রশাসনিক কাজেও বিরত থাকার ঘোষণা কুয়েট শিক্ষক সমিতির

ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব, শিক্ষকের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে আব্দুস সোবহানের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি দুদক। ফলে তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে বিলম্ব হচ্ছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বারবার তথ্য চেয়েও সহযোগিতা না পাওয়ায় দুদকের ধারায় রাবি প্রশাসনের নামে যেকোনো সময় মামলা হতে পারে। দুদকের ১৯ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে তথ্য চেয়ে সহযোগিতা না পেলে তার নামে মামলা করতে পারবে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের কাছে কয়েক দফায় চিঠি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে অনুসন্ধানের কাজ বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে।

রাবি প্রশাসনের কাছে সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহানকে নিয়ে ছয় ধরনের তথ্য চেয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে-

১. অধ্যাপক এজাজুল হকের নেতৃত্বে গঠিত রাবির ‘পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি)’ প্রকল্পের ৩ কোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে নেওয়া ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।

২. আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষে ৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ঘাটতি সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং তার পদে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাত ভিত্তিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী (অর্থ বছর ভিত্তিক)।

৩. তার মেয়ে রাবি প্রভাষক সানজানা সোবহান ও জামাতা এটিএম সাহেদ পারভেজের এনআইডি/স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি।

৪. রাবিতে তিনি নিয়োগ পাওয়ার পূর্বের ও পরের কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার সত্যায়িত ফটোকপি।

৫. তার ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপি।

৬. তার সময়ে গৃহীত প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ, প্রাপ্ত টেন্ডারের সংখ্যা, টেন্ডার আহ্বানের পদ্ধতি, কার্যাদেশ প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, পরিশোধিত টাকার পরিমাণ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম, পদবী ও তাদের দায়িত্বের সব ডকুমেন্টের ফটোকপি।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই ছয়টি বিষয়ে তথ্য চেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো ধরনের তথ্য তাদের কাছ থেকে পাইনি। ফলে আব্দুস সোবহানকে নিয়ে তদন্তের কাজ বিলম্ব হচ্ছে। আমরা আবারো দেখব, যদি তথ্য না পাই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে দুদক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দুদকের চিঠি এসেছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, “দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তবে তারা যেসব তথ্য চেয়েছেন, তার মধ্যে কিছু তথ্য দিতে পেরেছি। আবার অনেক তথ্যই আমাদের কাছে নেই। ফলে আমরা সময় নিয়েছি।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “দুদকের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমার কাছে এসেছিলেন। দুদক যেসব তথ্য আমাদের কাছে চাইবে, তার সব তথ্য দেওয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেনো দেয়নি সেই বিষয়টি আমার জানা নেই।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ