৫৫ লাখের নালা জমির চেয়ে উঁচু পানি জমে ফসলের সর্বনাশ
Published: 24th, May 2025 GMT
বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ডুবে যেত ফসলি জমি। ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন। এ পরিস্থিতিতে তাদের ফসল রক্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা নির্মাণ করে স্থানীয় প্রশাসন। তাড়াহুড়ো করে কাজটি করায় উল্টো কৃষকের ক্ষতির কারণ হয়েছে। অপরিকল্পিত নালা আর পুকুরের কারণে জলাবদ্ধতায় পাকা ধানসহ কৃষকের অন্তত দেড় হাজার বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। কিছু ফসল কৃষক রক্ষা করতে পারলেও প্রায় ৩০০ বিঘার পাকা ধান নিমজ্জিত হয়ে আছে। কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আগে এভাবে ডুবে দুই শতাধিক কৃষকের অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহাদীপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি মো.
আবওহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মে থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আট দিনে জেলায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে কয়েক বছর আগে সাড়ে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৬ মিটার নালা নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নালাটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ায় সামান্য পানি নিষ্কাশন হয়। অপরিকল্পিত নালার কারণে এ অবস্থা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে ৪৪ লাখ টাকায় দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার নালা নির্মাণ করা হয়। জাইকার অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদ কাজটি করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় ৪৩ মিটার সম্প্রসারণ করা হয়। সব মিলিয়ে ২০৬ মিটার খননে ব্যয় হয় ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতপুরের আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, গণিপুর, পলিপাড়া এবং খয়েরবাড়ির লক্ষ্মীপুর, মহেশপুর, মহদিপুরে পাকা ধান পানিতে ডুবে আছে। পানির নিচ থেকে অনেকে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কিছু ধান পচে গেছে। চারাও গজিয়েছে।
অপরিকল্পিত পুকুরের কারণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহানুর রহমান। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত পুকুর খনন। এতে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা হচ্ছে। এর আগে কৃষি বিভাগের সুপারিশে একটি নালা নির্মাণ করে প্রশাসন। তাতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
কৃষকের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে তাদের প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৩০০ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। ধান ডুবে না গেলে ২৫ মণ করে সাড়ে ৭ হাজার মণ ধান পেতেন, যার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। জলাবদ্ধ ১৫শ বিঘার মধ্যে ১২শ বিঘার ধান কাটতে পারলেও ৩০০ বিঘার ফসল নিমজ্জিত হয়ে আছে। এতে তাদের ক্ষতি হবে কোটি টাকার বেশি।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, প্রায় ২০ বছর ধরে এসব জমিতে তারা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না। কিছু জায়গায় পানি কম থাকলে আমন মৌসুমে চারা রোপণ করলেও তা নষ্ট হয়ে যায়। বোরো মৌসুমে কিছু ধান ঘরে তুলতে পারলেও বেশির ভাগ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়।
বারাইপাড়া গ্রামের মকছেদ আলী, রহমান ও মইদুল জানান, জমি থাকলেও সারাবছর ফসল ফলানো যায় না। কষ্ট করে আবাদ করলেও পাকা ধান ঘরে তোলার সময় বৃষ্টিতে চার দিন ধরে ডুবে আছে। কোমরপানিতে নেমেও কাটা যাচ্ছে না।
ভুক্তভোগী কৃষকের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত খালের কারণে জলাবদ্ধতায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে নালা নির্মাণ করলেও সেটি উঁচু হওয়ায় তেমন পানি নিষ্কাশন হয় না।
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ বিদ্যুৎবন্দর জাতীয় রক্ষা কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক এবং কয়লা খনি আন্দোলনের নেতা সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পরিকল্পনামতো নালা না করায় সরকারি টাকার বিনাশ হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত নালা নির্মাণ করতে হবে।
খালের সঙ্গে বড় পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে মত উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি) সফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, ইউএনওর সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ইউএনও ইসাহাক আলী বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর র ফসল উপজ ল ফসল র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান থেকে দেশে আরও ৩২ জন
ইরান থেকে দ্বিতীয় দফায় দেশে ফিরেছেন ৩২ বাংলাদেশি। মঙ্গলবার তারা এয়ার অ্যারাবিয়ার দুটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (কল্যাণ) তৈয়ব আহমেদ আনোয়ারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দর কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশে ফেরা এসব যাত্রী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। বিমানবন্দর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন সমকালকে জানান, গতকাল সকালে দুই ফ্লাইটে করে দেশে ফেরেন বাংলাদেশিরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১ জুলাই ২৮ বাংলাদেশি দেশে ফেরেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন নারী, শিশু এবং দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী। তারা প্রথমে তেহরান থেকে সড়কপথে বেলুচিস্তানের তাফতান সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন। পরে করাচি-দুবাই হয়ে ঢাকায় আসেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে ফেরার জন্য ২৫০ বাংলাদেশি তেহরান দূতাবাসে নিবন্ধন করেছিলেন। তাদের ধাপে ধাপে দেশে আনার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। তবে এখন যুদ্ধ না থাকায় নিজ উদ্যোগেও তারা দেশে ফিরতে পারবেন। ইরানে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি থাকার তথ্য পাওয়া যায়। তবে সরকারের তালিকাভুক্ত আছেন ৬৭২ জন। তাদের মধ্যে ৬৬ জন শিক্ষার্থী।