বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ডুবে যেত ফসলি জমি। ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন। এ পরিস্থিতিতে তাদের ফসল রক্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা নির্মাণ করে স্থানীয় প্রশাসন। তাড়াহুড়ো করে কাজটি করায় উল্টো কৃষকের ক্ষতির কারণ হয়েছে। অপরিকল্পিত নালা আর পুকুরের কারণে জলাবদ্ধতায় পাকা ধানসহ কৃষকের অন্তত দেড় হাজার বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। কিছু ফসল কৃষক রক্ষা করতে পারলেও প্রায় ৩০০ বিঘার পাকা ধান নিমজ্জিত হয়ে আছে। কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আগে এভাবে ডুবে দুই শতাধিক কৃষকের অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহাদীপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষি মো.

সাজির হোসেন, সফিকুল, মো. বাচ্চু মিয়া, বেলাল হোসেন ও আলমের ভাষ্য, এসব জমি সারাবছর জলাবদ্ধ থাকলেও বোরো মৌসুমে কোনোমতে ধানের আবাদ করেন। কিন্তু ফসল কাটার আগে পাঁচ-ছয় দিনের বৃষ্টিতে তাদের প্রায় ১৫ বিঘা জমির পাকা ধান ডুবে আছে। পানির নিচের ধান কাটতে বিঘায় খরচ ৯-১০ হাজার টাকা।
আবওহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মে থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আট দিনে জেলায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে কয়েক বছর আগে সাড়ে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৬ মিটার নালা নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নালাটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ায় সামান্য পানি নিষ্কাশন হয়। অপরিকল্পিত নালার কারণে এ অবস্থা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে ৪৪ লাখ টাকায় দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার নালা নির্মাণ করা হয়। জাইকার অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কারিগরি সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদ কাজটি করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় ৪৩ মিটার সম্প্রসারণ করা হয়। সব মিলিয়ে ২০৬ মিটার খননে ব্যয় হয় ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতপুরের আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, গণিপুর, পলিপাড়া এবং খয়েরবাড়ির লক্ষ্মীপুর, মহেশপুর, মহদিপুরে পাকা ধান পানিতে ডুবে আছে। পানির নিচ থেকে অনেকে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কিছু ধান পচে গেছে। চারাও গজিয়েছে।
অপরিকল্পিত পুকুরের কারণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহানুর রহমান। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত পুকুর খনন। এতে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা হচ্ছে। এর আগে কৃষি বিভাগের সুপারিশে একটি নালা নির্মাণ করে প্রশাসন। তাতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। 
কৃষকের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে তাদের প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। সে হিসাবে ৩০০ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। ধান ডুবে না গেলে ২৫ মণ করে সাড়ে ৭ হাজার মণ ধান পেতেন, যার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। জলাবদ্ধ ১৫শ বিঘার মধ্যে ১২শ বিঘার ধান কাটতে পারলেও ৩০০ বিঘার ফসল নিমজ্জিত হয়ে আছে। এতে তাদের ক্ষতি হবে কোটি টাকার বেশি।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, প্রায় ২০ বছর ধরে এসব জমিতে তারা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না। কিছু জায়গায় পানি কম থাকলে আমন মৌসুমে চারা রোপণ করলেও তা নষ্ট হয়ে যায়। বোরো মৌসুমে কিছু ধান ঘরে তুলতে পারলেও বেশির ভাগ নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়। 
বারাইপাড়া গ্রামের মকছেদ আলী, রহমান ও মইদুল জানান, জমি থাকলেও সারাবছর ফসল ফলানো যায় না। কষ্ট করে আবাদ করলেও পাকা ধান ঘরে তোলার সময় বৃষ্টিতে চার দিন ধরে ডুবে আছে। কোমরপানিতে নেমেও কাটা যাচ্ছে না। 
ভুক্তভোগী কৃষকের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত খালের কারণে জলাবদ্ধতায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে নালা নির্মাণ করলেও সেটি উঁচু হওয়ায় তেমন পানি নিষ্কাশন হয় না।
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ বিদ্যুৎবন্দর জাতীয় রক্ষা কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক এবং কয়লা খনি আন্দোলনের নেতা সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পরিকল্পনামতো নালা না করায় সরকারি টাকার বিনাশ হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত নালা নির্মাণ করতে হবে।
খালের সঙ্গে বড় পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে মত উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি) সফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, ইউএনওর সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ইউএনও ইসাহাক আলী বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর র ফসল উপজ ল ফসল র

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরে একদিনে ৯ মরদেহ উদ্ধার

দিনাজপুরে একদিনেই নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার দিনগত রাতে জেলার বীরগঞ্জের চাউলিয়া গ্রামে জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি বাহা বেসরা (৫৫) নিহত হন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সামিয়েল মার্ডিকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্ত্রী মিনি হায়দার সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একই উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের নাগরগঞ্জ কলোনিপাড়া লিচু বাগানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল গফুর হত্যা ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

দুপুরে জেলার নবাবগঞ্জে খয়ের গুনি গ্রামে করতোয়া নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়। 

একই উপজেলার মালভবানীপুর গ্রামের সোহরাফ হোসেনের মেয়ে সাথী আকতার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

এছাড়া হাকিমপুর উপজেলার বাওনা আলিহাট গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী বৃষ্টি (১৯) ও একই উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে মুনসুর আলী খোকা (৫০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিকেলে তাদের নিজ শয়নকক্ষ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

একই রাতে বিরল উপজেলার ফরক্কাবাদ মল্লাপাড়া গ্রামের মৃত তসলিম উদ্দিনের ছেলে তৌফিকুজ্জামান (৪৭) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিরল থানার ওসি আব্দুস ছবুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এ দিন দুপুরে গলায় লিচুর বিচি আটকে বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগন ইউনিয়নের ধনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোমিনের ছয়মাস বয়সের শিশু সন্তান আরফানের মৃত্যু হয়। 

এছাড়াও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আঁখি মনি (২৭) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।‌ প্রবাসী হারুন অর রশিদের নতুন বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় ঘরের দরজা বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় আঁখি মনি দরজা খুলতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম খন্দকার মুহিব্বুল জানান, অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ