যশোরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন পালিত ছেলে শেখ শামস (২২)। আজ রোববার বিকেলে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহমত আলী তাঁর জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে তাঁকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

যশোর শহরের মণিহারের ফলপট্টিতে নিজের শামস মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করতেন খালেদা খানম (৫৫) নামের ওই নারী। তিনি শহরের মণিহার প্রেক্ষাগৃহ এলাকার শেখ শাহজাহানের মেয়ে। গতকাল শনিবার বিকেলে শোবার ঘর থেকে তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় খালেদার পালিত ছেলে শেখ শামসকে আটক করে পুলিশ।

খালেদা খানমের কোনো সন্তান না থাকায় তিনি তিন মাস বয়স থেকে শামসকে সন্তান হিসেবে লালনপালন করে আসছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত খালেদা খানমের ভাতিজা জুবায়ের তানভির সিদ্দিকী হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি শেখ শামস। তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে আদালতে পাঠালে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

জানতে চাইলে যশোর আদালতের পরিদর্শক রোকসানা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, যশোর কোতোয়ালি থানা থেকে আজ দুপুরে আসামি শামসকে আমলি আদালতে আনা হয়। তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

শামস মার্কেটের নিচতলায় ফলের দোকান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে ফলপট্টির দোকানিরা মোটরের লাইনে পানি না পেয়ে খালেদাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে যান। পরে আবার দুপুরে ডাকাডাকি করেন। ভেতর থেকে কেউ দরজা না খোলায় দোকানিরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর–৯৯৯–এ কল করেন। পরে পুলিশ গিয়ে ডাকাডাকি করলে শামস দরজা খুললে খালেদার লাশ উদ্ধার করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শামস মাদকাসক্ত। বিভিন্ন সময়ে মাদকের টাকার জন্য তিনি তাঁর মাকে মারধর ও বাড়ির আসবাব ভাঙচুর করতেন। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। তবে জবানবন্দিতে শামস কী বলেছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ