বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ‘নাকাল’ কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
Published: 25th, May 2025 GMT
দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক অবকাঠামো ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পরও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই নিজস্ব প্রধান সাব-স্টেশন অথবা কোনো কার্যকর জেনারেটর। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কুবির প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা, অনলাইন ক্লাস, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেটসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক আবহাওয়াতেও দিনে সাত-আটবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
আরো পড়ুন:
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা থাকছে না
জাবিতে গাঁজা সেবনকালে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ৪
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আবাসিক হল ও বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকট দেখা দেয়, বন্ধ হয়ে যায় ওয়াইফাই। এতে অনলাইন ক্লাস ও গবেষণার কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, সামান্য বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষকদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষাকার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন নিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মায়া ইসলাম বলেন, “প্রায় প্রতিদিন লোডশেডিং হয়। এতে খাবার পানি সংগ্রহ থেকে শুরু করে অনলাইন ক্লাসেও অংশ নিতে পারি না।”
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো.
শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, শিক্ষকরাও এ সমস্যায় ভুগছেন। ক্লাস চলাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম অচল হয়ে যায়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকটের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষাচর্চায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।”
বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। এরপর শনিবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ আসে কোটবাড়ি সাব-স্টেশন থেকে। সেখান থেকে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়। ফলে যেকোনো মেরামত বা দুর্যোগে একযোগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বৈদ্যুতিক) মো. জাকির হোসেন বলেন, “হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা রাইস কুকার, হিটার, ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করেন, যা নির্ধারিত ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ টানে। এ অতিরিক্ত লোডের কারণে সার্কিট পুড়ে যায় এবং লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমরা সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি তুলেছি। লাইনটি বনজঙ্গল ঘেরা এলাকায় হওয়ায় সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিংয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি।”
তবে জেনারেটর স্থাপন নিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো জেনারেটর স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিষয়টি আপাতত বিবেচনায় নেই।”
কোটবাড়ি সাব-স্টেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. পিন্টু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। তবে নিজস্ব প্রধান সাব-স্টেশন স্থাপন করতে হলে কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ চাহিদা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব চ ছ ন ন হয় সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’