প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর দেশের ভেতরে ও বাইরে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব করা হচ্ছে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এবং গোলামিতে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আজ রোববার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্রেস সচিব।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যত দিন আছেন, তত দিন দেশের অনিষ্ট হয় এমন কোনো কাজ তাঁকে (প্রধান উপদেষ্টা) দিয়ে হবে না বলে তিনি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিশ্চিত করেছেন।

শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলেন, দেশ বড় যুদ্ধাবস্থার ভেতরে আছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরে ডিস্ট্যাবিলাইজ (অস্থিতিশীল) করার জন্য তারা সব রকম চেষ্টা করছে। এ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিভাজন থেকে উদ্ধার পেতে হবে এবং ঐকমত্য থাকতে হবে। সবাই একসঙ্গে বসাতে তিনি মনে সাহস পেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারলে তিনি অপরাধী অনুভব করবেন।

শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে রাজনৈতিক দলের নেতারা সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন নিয়ে সরকার যে কাজ করছে, তাতে প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা বলেছেন যে তাঁরা আমাদের চিফ অ্যাডভাইজার এবং আমাদের ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের পাশে থাকবেন।’

বৈঠকে নির্বাচন এবং সংস্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আবারও জানিয়েছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করা হবে; ৩০ জুনের পরে যাবে না। এতে রাজনৈতিক দলগুলো সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান প্রেস সচিব।

বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন বলে জানান শফিকুল আলম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীকে 'প্রাণঘাতী অস্ত্র' ব্যবহারের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—একটি ফাঁস হওয়া অডিও যাচাই করে এমন সত্যতা খুঁজে পেয়েছে বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কীভাবে তারা ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যাচাই করেছে। 

গত মার্চ মাসে অনলাইনে ফাঁস হয় ওই অডিও রেকর্ডিং। অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের তথ্যমতে, গত জুলাই-অগাস্টের ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান।

মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে দেশটিতে যে বিচার শুরু হয়েছে, সেখানে অডিও এই রেকর্ডিংটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।

তবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

“টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি-না, তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না,” বিবিসিকে বলেন আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র।

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংটি “শেখ হাসিনার বেআইনি কোনো উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটায় না” বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

অডিও রেকর্ডিংটি যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।

চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।

১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি।

অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট।

তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।

তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।

ঢাকা/ইভা

সম্পর্কিত নিবন্ধ