হার্ভার্ড-ট্রাম্প লড়াই থেকে বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা
Published: 25th, May 2025 GMT
সামাজিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ পোস্ট করেছে– ‘উইদাউট ইটস ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস, হার্ভার্ড ইজ নট হার্ভার্ড’। অর্থাৎ হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ডই নয়। মানে হার্ভার্ডকে তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। সেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ট্রাম্পের সে উদ্যোগ সাময়িক স্থগিত করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধের সূচনা এ বছরের মার্চ মাসে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলের গাজা আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ রয়েছে এ সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে। ট্রাম্প প্রশাসন এসব বিক্ষোভকে ‘অ্যান্টিসেমিটিক’ চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু হার্ভার্ড প্রশাসন অভিযোগ নাকচ করে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে।
বলা বাহুল্য, হার্ভার্ড শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়; বিশ্বেরও অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২৫ সালের বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিংয়ে হার্ভার্ড-এর অবস্থান ৩ নম্বরে। অন্যদিকে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির র্যাঙ্কিং (২০২৫) অনুযায়ী হার্ভার্ডের অবস্থান ৪ নম্বরে। এমনকি ২০২৩ সালে টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাঙ্কিংয়ে ২০২৩ সালে বিশ্বের ১ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।
হার্ভার্ডের শিক্ষা ও গবেষণার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। সর্বশেষ বারাক ওবামাসহ যুক্তরাষ্ট্রের আটজন প্রেসিডেন্ট হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়; ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। একই সঙ্গে শীর্ষ ধনী বিশ্ববিদ্যালয়ও বলা যায়। হার্ভার্ডের এমন অবস্থানের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়টি, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াই করার হিম্মত রাখছে।
গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ডাইভার্সি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন তথা বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রোগ্রাম বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেসব মানতে অস্বীকৃতি জানায়। সে জন্য ট্রাম্প প্রশাসন অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং হার্ভার্ডের ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সরকারের গবেষণা অনুদান স্থগিত করে। এর পর হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক দাবি করে আদালতে মামলা করে। আর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড দ্বিতীয় দফায় মামলা করে ২৩ মে, যখন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ও প্রতিশোধমূলক দাবি করে মামলায় উল্লেখ করা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে হার্ভার্ডের সাত সহস্রাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় পড়বে। আরও বলা হয়, এর মাধ্যমে হার্ভার্ড বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের জায়গা হারানোর শঙ্কায় পড়বে। যদিও আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সাময়িকভাবে বাতিল করেছেন, এর পরও শঙ্কা কাটেনি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধ আমাদের জন্যও শিক্ষণীয়। বিশেষত, এটি দেখিয়ে দিয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীর অধিকার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতটা সোচ্চার হতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের হস্তক্ষেপের সীমারেখাও দেখিয়ে দিয়েছে হার্ভার্ড। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম.
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ও হার্ভার্ডের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন। বিশেষ করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে সরকার তোষণের কাজ করে, তা কতটা লজ্জাজনক, সে ইঙ্গিতই অনেকের বক্তব্যে স্পষ্ট। ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধর ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যায্য পদক্ষেপে হার্ভার্ড প্রশাসন সমর্থন দেওয়া তো দূরের বিষয়, বরং তাঁর বিরুদ্ধে আদালত পর্যন্ত গেছে।
অথচ আমরা দেখে এসেছি, আমাদের দেশে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সব পদক্ষেপ কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অকপটে মেনে নেয়! শুধু মানাই নয়, বরং সুবিধা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা সরকারপ্রধানের গুণগান গাওয়া, এমনকি অন্যায় দেখলেও নীরব থাকার ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নির্লজ্জ কাজ অবলীলায় ঘটেছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই ছিল আরও এগিয়ে।
এখানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা শিক্ষকদের একার দোষ নেই। বরং সরকারও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেভাবে গড়ে তুলেছে। যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্য যখন উপাচার্য হওয়ার মানদণ্ড বানানো হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার আলাপ তোলার সুযোগ কোথায়? তা ছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তার ওপর অন্যায়ের প্রতিকারে আদালতের আশ্রয় নিয়েছে এবং আদালতও স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছেন। অর্থাৎ শেষ ভরসার জায়গা হিসেবে আদালতের ভূমিকাও এখানে স্পষ্ট।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের কাছে নানাভাবে বন্ধনে আবদ্ধ। সরকারও সেই বন্ধন শিথিল করতে নারাজ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠতে গেলে এসব বন্ধন শিথিল করতেই হবে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট যেভাবে দ্ব্যর্থহীনভাবে ট্রাম্প প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, আমাদের উপাচার্যরা কি তা পারবেন?
এ জন্য প্রথমেই দলীয় বিবেচনার পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার জন্য স্বাধীনতা ও বরাদ্দ দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করেছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলোরও এ ক্ষেত্রে সদিচ্ছা থাকতে হবে। হার্ভার্ড অন্তত সে পথই দেখাচ্ছে।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ধ নত উপ চ র য অন য য় র জন য আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষি বিবর্তনের গল্প বলে যে জাদুঘর
বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির মূলে রয়েছে কৃষি। এই কৃষির বিবর্তনের গল্প, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের জীবন, প্রযুক্তির বিকাশ এবং গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্য যেন এক অমূল্য উত্তরাধিকার।
সময়ের প্রবাহে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে, ভুলে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। সেই হারানো ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও তুলে ধরার প্রয়াসেই গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি জাদুঘর।
আরো পড়ুন:
জাপানের এনইএফ বৃত্তি পেলেন বাকৃবির ২০ শিক্ষার্থী
গোপনে বাকৃবি ছাত্রীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে সাবেক ছাত্রকে দিতেন আরেক ছাত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ঠিক সামনেই সবুজ দেবদারু গাছে ঘেরা এক মনোরম পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে এই কৃষি জাদুঘর। প্রকৃতির কোলে যেন কৃষির ইতিহাস কথা বলে এখানে।
২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মু. মুস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, যার মূল স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম এর উদ্বোধন করেন।
নানা প্রতিবন্ধকতা ও জনবল সংকটের কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও, ২০০৭ সালের ৩০ জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইন মিঞাঁ এটি পুনরায় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এটি দেশের কৃষি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির এক জীবন্ত সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত।
৫ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত এই অষ্টভুজ আকৃতির ভবনটি স্থাপত্যগত দিক থেকেও দারুণ দৃষ্টিনন্দন। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে রঙিন মাছের অ্যাকুয়ারিয়াম, পাশে প্রাচীন সাতটি খনার বচন। প্রবেশমুখের ঠিক পরেই দুটি অফিস কক্ষ, আর একটু ভেতরে এগোলেই দেখা যায় একটি ছাদহীন বৃত্তাকার বাগান, যা প্রাকৃতিক আলোর ছোঁয়ায় উজ্জ্বল। সেই বাগানের চারপাশেই রয়েছে সংরক্ষণশালার বিভিন্ন কক্ষ। প্রতিটি কক্ষই যেন কৃষির একেকটি অধ্যায়।
জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো বীজ সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, তিসি, চিনাবাদাম, কাউনধান, ফ্রেঞ্চ বিন, ফাবা বিনসহ নানা ফল ও সবজির বীজ। দেখা মেলে বিরল প্রজাতির তৈকর ফলের বীজ, যা একসময় আচার ও জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। রয়েছে বহুল পরিচিত ভ্যান্না বীজ, যার তৈল দিয়ে কসমেটিক ও ঔষধি পণ্য তৈরি হয়।
মাটির নানা প্রকার নমুনা, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সার, এমনকি পাহাড়ি চাষাবাদের মডেলও স্থান পেয়েছে এখানে।
শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও দর্শনার্থীদের শিক্ষার জন্য প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্ন ফসল রোগের চিত্র, আক্রান্ত বীজ, ও ব্যাকটেরিয়ার নমুনা। এ অংশের এক বিশেষ আকর্ষণ আড়াই কেজি ওজনের এক বিশাল মিষ্টি আলু, যা দর্শনার্থীদের বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
জাদুঘরের আরেক অংশ যেন এক ক্ষুদ্র প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘর। এখানে প্রদর্শিত আছে বুনো মহিষ, হরিণের শিং, গরু, অজগর ও গোখরা সাপের কংকাল। রয়েছে সংরক্ষিত কালো মেটো ইঁদুর, ধারাই সাপ, এবং কচ্ছপের খোল ও কঙ্কাল।
উপরে তাকালে দেখা যায় এক বিশাল প্রিজার্ভড শকুন, সে যেন আকাশে ডানা মেলে উড়ছে। রয়েছে প্লাটিপাসের কংকালও, যা এক বিরল প্রাণীর বাস্তব নিদর্শন। প্রতিটি নমুনাই যেন দর্শনার্থীকে স্মরণ করিয়ে দেয়, কৃষি কেবল ফসল বা জমির নয়, এটি প্রকৃতি ও প্রাণের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
গ্রামীণ জীবনের বৈচিত্র্যও এখানে তুলে ধরা হয়েছে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে। এক কক্ষে সাজানো আছে ঢেকি, কুলা, পানের ডাবর, হুকা, হারিকেন, কুপি বাতি, গরুর গাড়ির মডেল, এমনকি মাছ ধরার পুরোনো যন্ত্রও। রয়েছে তবলা, বেহালা, আদুরী, ক্রাম ও নাতকসহ বিভিন্ন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র।
এক পাশে দেখা যায় ‘গিলা’, যা একসময় বর-কনের গোসল অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো। এখনকার তরুণ প্রজন্ম হয়তো নামটিও জানে না, অথচ এটি ছিল গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ।
আরো রয়েছে কৃষকের বসতবাড়ির পূর্ণাঙ্গ মডেল, যা দেখতে যেন একেবারে বাস্তব কৃষকের ঘর। এখানে দেখা যায় কৃষকের হালচাষের দৃশ্য, রান্নাঘর, ধান রাখার গোলা, গরুর খোঁয়াড় এবং গৃহিণীর সাজানো রান্নার জায়গা। যেন একবারে গ্রামের জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে দেয়াল আর মডেলের মধ্যে।
প্রযুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য জাদুঘরে স্থান পেয়েছে পুরনো মাইক্রো কম্পিউটার, ডট প্রিন্টার, পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের আধুনিক যন্ত্র, ঘাণি, ডিঙি নৌকা, কাঁঠের তৈরি গরুর গাড়ি, তালগাছের কুন্দা ও উপজাতিদের পোশাক। এক পাশে ঝুলছে হরিণের চামড়া, অন্য পাশে সাজানো উপজাতীয় কৃষি উপকরণ, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই উপকরণগুলো কেবল প্রযুক্তির বিবর্তনের ইতিহাস নয়, বরং কৃষির সঙ্গে মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনধারার মেলবন্ধনের প্রতীক।
জাদুঘরের আরেক বিশেষ প্রদর্শনী হলো প্রাচীন থেকে আধুনিক সময়ের মুদ্রার সংগ্রহ। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। এগুলো দেখে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বিকাশ ও সামাজিক পরিবর্তনের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জাদুঘরের প্রতিটি কোণ যেন বলে, কৃষিই বাংলাদেশের প্রাণ। এখানকার প্রতিটি উপকরণ, প্রতিটি মডেল, প্রতিটি নমুনা কৃষির বিকাশ ও মানুষের সংগ্রামের গল্প বহন করে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে কৃষির অতীত ঐতিহ্য থেকে বর্তমান প্রযুক্তির রূপান্তর পর্যন্ত এক নজরে দেখতে পান।
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “এটি দেশের প্রথম এবং সবচেয়ে উপকরণসমৃদ্ধ কৃষি জাদুঘর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এটিকে দোতলা ভবনে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে, যেখানে কৃষি ভিত্তিক ১৪টি জেলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি উপকরণ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ভবিষ্যতে টিকিট ব্যবস্থা চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।”
এই কৃষি জাদুঘর শুধু কৃষি উপকরণের প্রদর্শনী নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কৃষি সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও মানুষের সম্পর্কের এক সজীব দলিল। শহরের কোলাহল আর কংক্রিটের ভিড় থেকে বেরিয়ে কেউ যদি এখানে আসে, তবে মুহূর্তেই যেন হারিয়ে যায় মাটির গন্ধে, কৃষকের ঘামে, বাংলার গ্রামীণ জীবনের সহজ সরল সৌন্দর্যে।
জাদুঘরটি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এবং প্রতি শনিবার বন্ধ থাকে। সময় সুযোগে একবার ঘুরে গেলে দেখা মিলবে বাংলাদেশের কৃষির হাজার বছরের গল্প, যা মাটি, ঘাম, বীজ আর ঐতিহ্যের বন্ধনে গাঁথা এক অনবদ্য ইতিহাস।
ঢাকা/মেহেদী