টানা তিন রাত ধরে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গতকাল রোববার রাতেও রাজধানী কিয়েভে রাতভর হামলা হয়েছে। শান্তিচুক্তির প্রচেষ্টার মধ্যে রাশিয়ার এই হামলার কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘উন্মাদ’ বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে গত শুক্রবার রাত থেকে হামলার ব্যাপকতা বাড়ায় রাশিয়া। ওই রাতের হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হন। পরে শনিবার রাতেও অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি হয়। আর আজ সোমবার কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তাইমুর তকাচেঙ্কো বলেন, রোববার রাতে শহরটিতে ছয় ঘণ্টা ধরে হামলা সতর্কতা জারি করা ছিল।

রোববার রাতে ইউক্রেনে ৩৫৫টি ড্রোন ও ৯টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিমানবাহিনী। তবে এই হামলায় কেউ নিহত হননি। আর হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি মস্কো। এর আগে হামলার বিষয়ে রাশিয়া বলেছিল, এগুলো তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের অংশ।

হামলার মধ্যে রোববার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার বরাবরই খুব ভালো সম্পর্ক, কিন্তু তাঁর কিছু একটা হয়েছে। তিনি পুরোপুরি “উন্মাদ” হয়ে গেছেন! আমি সব সময় বলেছি, তিনি (পুতিন) শুধু ইউক্রেনের একটা অংশ নয়, পুরো ইউক্রেনটাই চান। হয়তো এ কথা সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে।’

আরও পড়ুনরুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘উন্মাদ’ বললেন ট্রাম্প৯ ঘণ্টা আগে

এর আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইউক্রেনের ওপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে তিনি খুশি নন এবং তিনি মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর বিষয়টি তিনি অবশ্যই বিবেচনা করছেন। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি, সব সময় তাঁর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। কিন্তু তিনি বিভিন্ন শহরে রকেট ছুড়ছেন, মানুষ হত্যা করছেন, এটা আমি একদমই পছন্দ করছি না।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর এই যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য পুতিন ছাড়াও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র বব র

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ