Risingbd:
2025-07-12@09:33:36 GMT

‘সাগরমাথা’ জয় যেন এক রূপকথা

Published: 27th, May 2025 GMT

‘সাগরমাথা’ জয় যেন এক রূপকথা

পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট, নেপালি নাম ‌‌‘সাগরমাথা’, তিব্বতি ভাষায় চোমোলুংমা, অর্থাৎ ‘পৃথিবীর দেবী মা’। উচ্চতা প্রায় ৮,৮৪৮ মিটার (বর্তমানে কিছু গবেষণায় ৮,৮৪৯.৮৬ মিটার)। বহু শতাব্দী ধরে এই পর্বতশৃঙ্গকে মানুষ শ্রদ্ধা ও ভয়—দুয়ের মিশ্রণে দেখেছে।

১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা একে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর থেকেই শুরু হয় মানুষের একটি অনন্ত আকাঙ্ক্ষা—‘পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় পা রাখতেই হবে।’

কিন্তু এভারেস্ট ছিল এক ‘দুর্জেয় দুর্গ’। প্রকৃতির চরম প্রতিকূলতা, অনিশ্চিত আবহাওয়া, ভয়ঙ্কর ঠান্ডা, আর শ্বাসরুদ্ধকর উচ্চতা—সব মিলিয়ে এটি ছিল এক মৃত্যুকূপের মতো।

এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখতে যাওয়া মানেই মৃত্যুর পায়তারা। শুরুতে যারা গিয়েছিলেন, তারা কেউ ফিরেও আসেননি। প্রথম অভিযান হয় ১৯২১ সালে। তারপর ১৯২৪ সালে জর্জ ম্যালোরি এবং অ্যান্ড্রু আরভাইন ব্রিটিশ অভিযানে অংশ নিয়ে চূড়ার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন বলে অনুমান করা হয়। তবে তারা ফিরে আসেননি। ম্যালোরির একটি বিখ্যাত উক্তি ইতিহাসে অমর হয়ে আছে “Because it’s there.

এভারেস্ট যেন তখন থেকেই এক অনতিক্রম্য পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় ৩০ বছর ধরে অনেক দেশ, বহু অভিযান—সবই ব্যর্থ হয়। অনেক টাকা আর প্রাণ যায় এভারেস্ট জয়ের আশায়। এর মধ্যে ১৯৫২ সালে সুইস দলের তেনজিং নোরগে প্রথমবার চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছান, কিন্তু তখন সফল হননি। অবশেষে পরের বছর এলো সাফল্য। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গর্ব হিসেবে এবং রানির রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে এভারেস্ট জয়ের একটা প্রতীকী মূল্যও ছিল। ১৯৫৩ সালে জন হান্টের নেতৃত্বে একটি বিস্তৃত ব্রিটিশ অভিযান যাত্রা করে। দলটি ছিল আন্তর্জাতিক: সদস্য ছিলেন নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, নেপাল, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের।

এ দলের মূল দুই অভিযাত্রী ছিলেন: স্যার এডমন্ড হিলারি।  নিউজিল্যান্ডের এক মৌমাছি পালনকারী, যিনি পর্বতারোহণে অসম্ভব দক্ষ। আরেকজন তেনজিং নোরগে। নেপালি শেরপা, যিনি ইতিমধ্যে বহু অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন, এবং শেরপাদের মধ্যে এক কিংবদন্তি হয়ে উঠছিলেন।

হিলারি ও তেনজিং অভিযানের চূড়ান্ত দুই সদস্য হিসেবে চূড়ায় উঠবার দায়িত্ব পান। ২৮ মে তারা উচ্চ শিবিরে রাত্রিযাপন করেন। ২৯ মে ভোরে তারা যাত্রা শুরু করেন। চূড়ার কিছু আগে তারা পৌঁছান এক ভয়ানক স্থানে—হিলারি স্টেপ নামের এক খাড়া বরফের ঢালে। এই অংশটি এতটাই বিপজ্জনক যে একে The last great obstacle বলা হয়। বহু দক্ষ পর্বতারোহী এই জায়গায় এসে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

কিন্তু হিলারি সেই ঢাল জয় করেন। তেনজিং তাকে অনুসরণ করেন। সকাল ১১:৩০ মিনিটে তারা বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছান। অবশেষে ২৯ মে, ১৯৫৩ সালের সকালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় পা পড়লো মানুষের। এ যেন চাঁদে অভিযানের আগে মানুষের আরেক পদছাপের বৃহৎ নির্দেশনা।

এতো আয়োজনের পর চূড়ায় তারা ছিলেন প্রায় ১৫ মিনিট। হিলারি তেনজিংয়ের ছবি তোলেন। তেনজিং, বৌদ্ধ বিশ্বাসমতে, একটি চকোলেট, বিস্কুট ও কিছু ধূপ অর্পণ করেন পর্বতের দেবতাকে।

তারা সেখানে নেপাল, ব্রিটেন, ভারত ও জাতিসংঘের পতাকাও স্থাপন করেন। হিলারি পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের একটি সংবাদপত্রকে ছোট করে বলেন: Well, George, we knocked the bastard off. মহাপরাক্রমশালী এভারেস্টকে যেন দুই যোদ্ধা সব শেষে নক ডাউনই করলেন! 

ব্যাপারটা তখনকার দিনে এতো অবিশ্বাস্য আর কঠিন ছিলো যে, তারা যখন ফিরে আসেন, তখনও বাকিরা বিশ্বাসই করতে পারছিল না—এই দুজন সত্যিই চূড়ায় পৌঁছেছেন! খবরটি ব্রিটেনে পৌঁছায় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের দিনেই। একে গণ্য করা হয় সেই যুগের শ্রেষ্ঠতম বিজয় হিসেবে। হিলারি নাইহুড উপাধি পান। তাই তাকে বলা হয় স্যার এডমুন্ড হিলারি। তেনজিং অবশ্য ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনস্থ নেপালি হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে নাইট হতে পারেননি, তবে তিনি ভারতের অন্যতম উচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননার অধিকারী হন।

এক অর্থে এভারেস্ট জয় ছিল এক প্রতীকী মানববিজয়। মানুষ যে নিজের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে, তা প্রমাণিত হয় এই অভিযানে। এভারেস্ট অভিযানের পর তেনজিং নোরগে ও হিলারির জীবনও বদলে যায়। তারা কেবল পর্বতারোহী ছিলেন না, হয়ে উঠেছিলেন সাংস্কৃতিক নায়ক। হিলারি পরে হিমালয়ে বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেন, স্কুল ও হাসপাতাল গড়েন। তেনজিং নেপালে শেরপা সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করেন, নিজের স্মৃতিকথা লেখেন।

তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হিলারি ও তেনজিং কেউই একে অপরকে ‘অগ্রগামী’ হিসেবে দাবি করেননি। তারা দুজনই তাই ঐতিহাসিকভাবে প্রথম এভারেস্টজয়ী।

প্রথম এভারেস্ট বিজয় কেবল শারীরিক পর্বতারোহণ নয়, ছিল এক মানসিক অভিযাত্রা। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের ইচ্ছাশক্তির জয়। এই অভিযানের ফলে এভারেস্ট হয়ে ওঠে কেবল একটি পর্বত নয়, এক প্রতীক—স্বপ্ন দেখার, সাহস করার, এবং নিজেদের সীমা অতিক্রম করার।

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ল এক র একট

এছাড়াও পড়ুন:

নৌভ্রমণে গিয়ে নৌকাডুবে দুই মেয়ের মৃত্যু, সাঁতরে বেঁচে ফিরলেন বাবা-মা  

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রে নদে শুক্রবার বিকালে নৌকাডুবির ঘটনায় দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। কলেজ পড়ুয়া বড়বোন নিলার (১৭) লাশ শুক্রবারই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে। ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া নীহাকে (৯) শুক্রবার খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। তারা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের জালুয়াপাড়া গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও নীপা আক্তার দম্পতির সন্তান। 

দু’টি সন্তান নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার। এখন পরিবারটিতে চলছে কেবলই আর্তনাদ। সন্তানদের হারিয়ে এখন কেবলই বিলাপ করছেন। মাঝে মাঝেই মা নীপা আক্তার মূর্ছা যাচ্ছেন। 

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, মা-বাবা তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ সময় নৌভ্রমণে বের হলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আব্দুর রহমান সাঁতরে রক্ষা পেলেও মা নীপা ও বড় মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নীলাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরীক্ষা করে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর নীপাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে ছোট মেয়ে নীহাকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার সময় মরদেহ ভেসে উঠলে ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে। 

দুই সন্তান হারিয়ে আব্দুর রহমান জানান, দু’টি মেয়ে সারাক্ষণ আনন্দে সংসার ভরিয়ে রাখতো। আশা ছিল- পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। আমরা সমাজে মর্যাদা নিয়ে বাঁচবো। তা আর হলো না। আমাদের একেবারে শূন্য করে চলে গেল। এই শূন্যতা কীভাবে ভুলবো? 

চৌদ্দশত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাহার আলী জানান, আব্দুর রহমান পাশের পুলেরঘাট বাজারে ভাঙারি ব্যবসা করেন। নিলা ও নীহার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোক বিরাজ করছে। 
  
এর আগে ১ জুলাই সকালে নৌকায় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে পাকুন্দিয়ার চরফরাদি ইউনিয়নের চরআলগি গ্রামের তিন শিক্ষার্থী জুবায়ের (৭), শাপলা (১৪) ও শাপলার ভাতিজা আবির (৬) ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবে মারা যায়। শুক্রবারও একই নদীতে ঘটলো আরেকটি দুর্ঘটনা।

এ ঘটনার পর ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন শুক্রবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ চরটেকি এলাকার বেড়িবাঁধে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ভ্রমণের অনুমতি দেবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ