আবহাওয়া ও বায়ুদূষণের পূর্বাভাস নির্ভুলভাবে জানাচ্ছে মাইক্রোসফটের এআই মডেল ‘অরোরা’
Published: 28th, May 2025 GMT
নিজেদের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল ‘অরোরা’ এখন আবহাওয়া ও বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দ্রুত ও নির্ভুলভাবে দিতে পারছে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। আবহাওয়া পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য তৈরি এআই মডেলটি প্রচলিত আবহাওয়া বিশ্লেষণ পদ্ধতির তুলনায় বেশি কার্যকর ও দক্ষ বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
‘অরোরা’ তৈরি করেছে মাইক্রোসফট রিসার্চ। অরোরা মূলত একটি ‘ফাউন্ডেশন মডেল’, অর্থাৎ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এআই মডেলটিকে। মাইক্রোসফটের তথ্যমতে, অরোরা এআই মডেল ঘণ্টাভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। মেঘের গঠন, তাপমাত্রা, বাতাসের গতি ও দিক, বৃষ্টিপাত এবং বাতাসের মানের তথ্য অল্প সময়ে বিশ্লেষণ করে নির্ভরযোগ্য তথ্য জানাতে পারে মডেলটি। এই মডেল ব্যবহার করে এমএসএন ওয়েদার অ্যাপে ইতিমধ্যে ঘণ্টাভিত্তিক পূর্বাভাস জানানোর সুবিধা চালু করেছে মাইক্রোসফট।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, অরোরা এআই মডেলে বিভিন্ন স্যাটেলাইট, রাডার, আবহাওয়া কেন্দ্র এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসবিষয়ক প্রায় ১০ লাখ ঘণ্টার তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। এআই মডেলটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এর ‘এনকোডার আর্কিটেকচার’, যা বিভিন্ন উৎস থেকে আসা বিপুল পরিমাণ তথ্যকে একক কাঠামোতে রূপান্তর করে দ্রুত বিশ্লেষণের উপযোগী করে তোলে।
প্রসঙ্গত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আবহাওয়া পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি একেবারে নতুন নয়। গুগলের এআই গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ড এরই মধ্যে ‘ওয়েদারনেক্সট’সহ একাধিক এআই মডেল তৈরি করেছে। গুগলের তৈরি এআই মডেলগুলোও প্রায় একই ধরনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।