ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে। সেখানে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের অনেক সেনাও মারা যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রভাবশালী গণমাধ্যম হারেৎজে এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, “ইসরায়েল সরকার বর্তমানে উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন বা স্পষ্ট পরিকল্পনাহীন; সাফল্যের কোনো সম্ভাবনা ছাড়াই যুদ্ধ চালাচ্ছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে তিনি ‘একটি অপরাধী চক্র’ বলেও বর্ণনা করেন।” 

২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের ১২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এহুদ ওলমার্ট। গতকাল বুধবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, গাজায় হামলাকে তিনি ‘ইসরায়েলের ইতিহাসে নজিরবিহীন’ বলেও বর্ণনা করেন। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির সাবেক এ নেতা লেখেন, “ফিলিস্তিনের জনগণকে অর্থহীনভাবে শিকারে পরিণত করা হচ্ছে; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ পরিণতি’র দিকে এগোচ্ছে।” তিনি লেখেন, গাজায় সাম্প্রতিক অভিযানের সঙ্গে বৈধ যুদ্ধ লক্ষ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি এখন একটি ব্যক্তিগত রাজনৈতিক যুদ্ধ। এর তাৎক্ষণিক ফলাফল হলো– গাজাকে মানবিক বিপর্যয়কর অঞ্চলে রূপান্তরিত করা।

ওলমার্ট বলেন, ‘আমরা এখন গাজায় যা করছি, তা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ; নির্বিচারে, সীমাহীন নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলকভাবে বেসামরিক নাগরিক হত্যা। এটি সরকারের নীতির ফলাফল, যা জেনেশুনে, কুমতলবে, বিদ্বেষপূর্ণভাবে, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে নির্দেশিত।’ এর পরই উপসংহারে ওলমার্ট বলেন, ‘হ্যাঁ, ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে।’

গত সপ্তাহে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলমার্ট অব্যাহত সংঘাতকে ‘উদ্দেশ্যহীন যুদ্ধ ও জিম্মিদের জীবন বাঁচাতে পারে– এমন কিছু অর্জনের সুযোগ ছাড়াই যুদ্ধ’ বলে বর্ণনা করেন। তাঁর এ মন্তব্য নিয়ে তখন ইসরায়েলে বিতর্ক হয়। তবে এবার তিনি ঝড়ই তুললেন। ওলমার্ট নতুন করে বললেও গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে– এমনটা বিশ্বের অনেকেই মনে করেন।

ওলমার্টের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ইসরায়েলের ডেমোক্র্যাটস দলের প্রধান ইয়াইর গোলান। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সাবেক এ ডেপুটি চিফ অব স্টাফ সম্প্রতি কান জাতীয় সম্প্রচারকে বলেন, ‘একটি সুস্থ দেশ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শখের বশে শিশু হত্যা করে না এবং লোকজনকে বাস্তুচ্যুত করতে কাজ করে না।’ 

এ অবস্থায় গাজায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল গতকাল একদিনে আরও ২৮ জনকে হত্যা করেছে। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর মধ্যে উত্তর গাজায় ওসামা আল-আরবিদ নামের সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁর পরিবারের আট সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। 

খাবারের জন্য হাহাকার

ক্ষুধার্ত গাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছালেও তা পর্যপ্ত নয়। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে দক্ষিণ গাজায় একটি তাঁবুতে থাকেন ২৯ বছরের হেবা জাবের। এএফপিকে তিনি বলেন, ক্ষুধার্ত সন্তানদের পানি ও খাবার দিতে না পেরে অপমানে মৃত্যুর চেয়ে বোমায় মরে যাওয়া অনেক ভালো। ৪০ বছরের বাসাম দালৌল বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। ইসরায়েল বোমা ফেলেই যাচ্ছে। কিছুই বদলায়নি। এখন তো যুদ্ধবিরতি স্বপ্নের মতো মনে হয়।’

এ অবস্থায় ত্রাণ নিতে আসা ক্ষুধার্ত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে অন্তত একজন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, জাতিসংঘের বারণ সত্ত্বেও ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা করে আইডিএফ। এ সময় হট্টগোল হলে তারা গুলি চালায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, শত শত নারী-শিশু, যুবক-বৃদ্ধ ত্রাণের জন্য জড়ো হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসছে

বুধবার দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানায়, ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রী বেন গাভির ও বেজালেল স্মোট্রিচের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। এর আগে তিনি আবেদন করলে আইসিসি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ওলম র ট মন ত র সরক র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গাওয়ার পর পালিয়ে থাকতে হয়েছিল

শিল্পীর সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ