২৭ মে। আমরা গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত ইলেকট্রোমার্টের রেফ্রিজারেটর কারখানায়। ৩৬ একরের বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মিত এ কারখানায় ঢুকেই চোখে পড়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, অটোমেটেড যন্ত্রপাতি, সুশৃঙ্খল উৎপাদনপ্রক্রিয়া এবং দক্ষ কর্মীদের কর্মতৎপরতা। এখানেই তৈরি হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত কনকা ও হাইকো ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তাপস কুমার মজুমদার। একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পরিবেশবান্ধব কারখানায় যেভাবে রেফ্রিজারেটর তৈরি হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ মিলেছে।

 

প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা

ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী আমদানি, বিপণন ও প্রস্তুতকারক হিসেবে সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের বিশাল ও আধুনিক একটি কারখানা সোনারগাঁয়ে অবস্থিত। এই কারখানার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর উন্নত যন্ত্রপাতি ও অটোমেটেড উৎপাদন লাইন। ফ্রিজের প্রতিটি যন্ত্রাংশ সংযোজন ও গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য রয়েছে ইউরোপিয়ান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। নির্বাহী পরিচালক তাপস কুমার মজুমদার বলেন, ‘১৯৮০ সালে ইলেকট্রোমার্ট তার ব্যবসা শুরু করে। ১৯৯৯ সালে কনকা এবং হাইকো ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম রেফ্রিজারেটরের অ্যাসেম্বলি কারখানা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড কনকা বাংলাদেশের ইলেকট্রোমার্টের সঙ্গে যৌথ সহায়তায় সোনারগাঁয়ে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করে।

২০১৯ সালে এখান থেকে নিয়মিত বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদন শুরু হয়। এই কারখানায় আন্তর্জাতিক মানের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানবিক ত্রুটির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। প্রতিটি ফ্রিজ তৈরি হচ্ছে নির্ধারিত মান অনুযায়ী, যা ক্রেতাকে দেয় দীর্ঘস্থায়ী নিশ্চয়তা ও নির্ভরতা। কনকার ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং ইনভার্টার প্রযুক্তিযুক্ত রেফ্রিজারেটর শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই করে না, বরং ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবনও করে তোলে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এখানে বলা যায়, প্রতি মিনিটে একটি করে রেফ্রিজারেটর তৈরি করছি আমরা। আমাদের কারখানায় রেফ্রিজারেটর তৈরিতে যে ফোমিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তা ইতালি ও জার্মানির সব লেটেস্ট প্রযুক্তি যা সচরাচর পরিলক্ষিত হয় না। সরাসরি বিদেশি প্রকৌশলীরা এসব যন্ত্র পরিচালনায় নিযুক্ত আছেন।’

বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও নিরাপত্তা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কনকা ফ্রিজের অবস্থান শীর্ষে কনকা ফ্রিজে ব্যবহার করা হয়েছে ইকো মুড যা অধিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কাজ করে। এ ছাড়াও বিএসটিআইয়ের ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিংপ্রাপ্ত এসব ফ্রিজ ৭১ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সক্ষম। কারখানায় সারিবদ্ধভাবে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ। এসব ফ্রিজে রয়েছে ওয়াইড ভোল্টেজ রেঞ্জ এবং ডাবল ইলেকট্রিক প্রটেকশন সিস্টেম, যা ফ্রিজকে রক্ষা করে ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েশন ও শর্টসার্কিটের ক্ষতি থেকে। ফলে দেশের যেকোনো অঞ্চলে যেখানেই বিদ্যুতের সমস্যা থাকুক না কেন, কনকা ফ্রিজ দিব্যি সেবা দিয়ে যাবে। কারখানায় নির্ধারিত শেডে দেখা যায় বিদেশ থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল। এসব কাঁচামাল দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। নির্বাহী পরিচালক তাপস কুমার মজুমদার বলেন, কনকা ফ্রিজে ব্যবহৃত হয় ১০০ শতাংশ ফুড গ্রেড প্লাস্টিক, যা এফডিএ সার্টিফায়েড। খাবারের স্বাদ, গুণাগুণ ও পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন রাখতেই এ পদক্ষেপ। এর পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় পরিবেশবান্ধব R600a রেফ্রিজারেন্ট। এই উপাদান ওজোন স্তর নষ্ট করে না এবং বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে সহায়তা করছে। এটি পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ ছাড়া ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস তৈরিতে বর্জ্য ও উপজাত তৈরি হয়, কারখানা ঘুরে বিভিন্ন উপজাত ও বর্জ্যকে কীভাবে নতুন করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষণা দেখা যায়।

খাদ্য সতেজ রাখার প্রযুক্তি

ফ্রিজ মানেই শুধু ঠান্ডা রাখার যন্ত্র নয় এখন। শহর বা গ্রামীণ জীবনের নিত্য অনুষঙ্গ এটি। কনকার অ্যাকটিভেটেড কার্বন ডিওডোরাইজার প্রযুক্তি এক খাবারের গন্ধকে আরেক খাবারে মিশতে দেয় না। ফলে খাবার থাকে সতেজ, স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাদে অটুট। নির্বাহী পরিচালক তাপস কুমার মজুমদার বলেন, পাশাপাশি হিউমিডিটি কন্ট্রোলার ও ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি যুক্ত থাকার কারণে সবজি ও ফলমূল থাকে বাগান থেকে তোলা সদ্য কুড়ানো খাবারের মতো ফ্রেশ। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত নাগরিক জীবনে একটি ফ্রিজ যেন সারা মাসে বন্ধু হিসেবে পাশে থাকে, সে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কনকার ফ্রিজে রয়েছে ওয়াইডেস্ট ও ডিপেস্ট ডিজাইন, যাতে একসঙ্গে অনেক খাবার সংরক্ষণ করা সম্ভব। ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, নিজস্ব কারিগরি টিম নানা ধরনের উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করছে। বিভিন্ন প্রযুক্তি হালনাগাদ করতে গবেষণাগার রয়েছে। পণ্যের ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিসিংয়ে সব সময় গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। পণ্যে ব্যবহৃত ইনভার্টার প্রযুক্তি, স্মার্ট সেন্সর, অটো ডিফ্রস্ট এবং এনার্জি-এফিশিয়েন্ট কম্প্রেসর প্রযুক্তি ব্যবহারে সর্বশেষ উদ্ভাবনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিপণন ও পরিবহনব্যবস্থায় আধুনিকতা

কনকা তাদের বিপণন ও পরিবহনব্যবস্থায়ও এনেছে আধুনিকতা। দেশের প্রতিটি প্রান্তে দ্রুত পণ্য সরবরাহ এবং বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিতে তারা ব্যবহার করছে জিপিএস ট্র্যাকিং যুক্ত পরিবহনব্যবস্থা ও রিজিওনাল হাব। বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য রয়েছে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং ২৪ ঘণ্টার কাস্টমার সার্ভিস সাপোর্ট। কারখানা ঘুরে দেখা যায়, কনকা এমন সব প্রযুক্তি ও সুবিধা দেওয়ার পরও যে দাম নির্ধারণ করছে, তা সাধারণ মানুষের আয়-সক্ষমতার মধ্যেই। স্থানীয় উৎপাদন এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে মান নিয়ন্ত্রণে কোনো ছাড় নেই। ফলে ভোক্তারা পাচ্ছেন বিশ্বমানের ফ্রিজ, যা দীর্ঘদিন টিকে থাকবে, স্বাস্থ্য রক্ষা করবে এবং বিদ্যুৎ বিলও বাঁচাবে।

ইলেকট্রোমার্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের শুধু একটি ফ্রিজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বলতে রাজি নয়। একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ, আরামদায়ক ও হ্যাপি করার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে, আন্তর্জাতিক মান ও পরিবেশবান্ধব চিন্তাধারায় কনকা আজ একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনন্য উদাহরণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবস থ র জন য পর ব শ ও পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

একটি দল ছাড়া কোনো দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না, তা সঠিক নয়: গণফোরাম

গণফোরাম বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফরে গিয়ে একটি দল ছাড়া আর কোনো দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা সঠিক নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে বলেও উল্লেখ করেছে দলটি।

আজ শুক্রবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণফোরামের সভাপতি পরিষদের অন্যতম সদস্য এস এম আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মেজবাহউদ্দীন, মোশতাক আহমেদ, সুরাইয়া বেগম, সেলিম আকবর, শাহ নুরুজ্জামান প্রমুখ।

সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে গণফোরামের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এর ফলে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

গণফোরামের নেতারা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সুফল পাওয়ার জন্য দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে দুঃখজনক।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের বৈঠক জাতিকে আরও হতাশ করেছে বলে উল্লেখ করেছে গণফোরাম। দলটি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এবারের বৈঠকে গণফোরামকে আমন্ত্রণ না জানানোর ফলে সরকার ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

গণফোরামের নেতারা আরও বলেন, গত ৯ মাসে সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও জনপ্রশাসনের অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বা দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা এখনো লক্ষ করা যায়নি। ফলে সরকারের প্রতি জনসমর্থন যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ও জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে।

গণফোরাম সভাপতি পরিষদের সভায় অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, সে ঐক্য যেন কোনো অশুভ শক্তি বিনষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ