আইপিএলের অভিষেক আসর থেকে খেলে যাচ্ছেন—এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু বিরাট কোহলিই একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু আর বিরাট কোহলি নামটি তাই একরকম সমার্থক হয়ে গেছে। তাই বেঙ্গালুরুর মতো কোহলিরও আক্ষেপটা রয়েই গেছে; একবারও আইপিএল ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি।

অথচ লিগ পর্বে বেঙ্গালুরুকে মোটামুটি সফল দলই বলা যায়। আগের ১৭ মৌসুমের মধ্যে ৯ বার প্লে-অফ পর্বে উঠেছে; এবার নিয়ে ১০ বার। রানার্সআপ হয়েছে ৩ বার। দলের সবচেয়ে বড় তারকা কোহলি তো আইপিএল ইতিহাসেরই শীর্ষ রান সংগ্রাহক (৮৬০৬)। এবারের আসরেরও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬০২ রান করেছেন; ১৩ ইনিংসের ৮টিতেই ফিফটির দেখা পেয়েছেন।

কিন্তু আইপিএলে ব্যাট হাতে কোহলির যত সাফল্য, তার সিংহভাগই লিগ পর্বের ম্যাচে। প্লে-অফ পর্বে তাঁর ব্যাট সেভাবে হাসেনি কখনো। মুল্লানপুরে আজ রাতে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলতে নামার আগে তাই প্লে-অফে কোহলির অতীত রেকর্ড বেঙ্গালুরু সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, আইপিএল প্লে-অফ পর্বে এখন পর্যন্ত ১৫ ইনিংস খেলেছেন কোহলি; ২৬.

২৩ গড়ে ১২১.৭৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৪১ রান। ফিফটি পেয়েছেন মাত্র ২টি, যার সর্বশেষটি সেই ২০১৬ সালের ফাইনালে। এর পর থেকে গত বছর পর্যন্ত আরও চার মৌসুম বেঙ্গালুরু শীর্ষ চারে জায়গা করে নিলেও ফাইনালে উঠতে পারেনি। এর বড় কারণ কোহলির ব্যাটিং-ব্যর্থতা।

তবে ভারতের জার্সিতে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের (ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) নকআউট পর্বের ম্যাচে কোহলির রেকর্ড বেশ ভালো। ২৪ ইনিংসে ৫১.২০ গড়ে করেছেন ১০২৪ রান। ফিফটি আছে ৯টি, সেঞ্চুরি ১টি।

বার্বাডোজে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে কোহলিই সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস সেই ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ট্রফি জয়ের পরপরই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দেন কোহলি।

ভারত জাতীয় দলের মতো বেঙ্গালুরুর হয়েও ১৮ নম্বর জার্সি পরে খেলে আসছেন কোহলি। এই নম্বরের জার্সি তিনি প্রথম গায়ে জড়িয়েছিলেন বয়সভিত্তিক দলে খেলার সময় থেকে। এর সঙ্গে তাঁর বিশেষ সখ্য আছে, গভীর আবেগও কাজ করে।

২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিরাট কোহলির বাবা প্রেম নাথ কোহলি মারা যান। বাবার প্রতি ভালোবাসার প্রদর্শন হিসেবে তিনি তখন থেকে ১৮ নম্বর জার্সি পরে খেলে যাচ্ছেন। ভারত জাতীয় দলে তাঁর অভিষেকও হয়েছিল ২০০৮ সালে ১৮ আগস্ট।

হঠাৎ ১৮ টেনে আনার কারণ, এটি আইপিএলের ১৮তম আসর। গত মার্চে এবারের আসর শুরুর দিনই বেঙ্গালুরুর ম্যাচ ছিল। আইপিএলের পক্ষ থেকে সেদিন একটি পোল খোলা হয়। কোহলিকে টিভি স্ক্রিনে দেখাতেই পোলের প্রশ্নটিও করা হয়: ১৮তম আসরে কি প্রথমবারের মতো আইপিএল শিরোপার দেখা পাবেন ১৮ নম্বর জার্সিধারী? বেশির ভাগেরই উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ’।

কোহলির আইপিএল জয়ের আশা অবশেষে পূরণ হবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে সেটা করতে হলে প্লে-অফে ওই এমআরএফ ব্যাটটা তাঁর হয়ে কথা বলতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ক হল র ন ক হল ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ