দুদকের মামলায় স্ত্রী-কন্যাসহ ফেঁসে যাচ্ছেন এসকে চৌধুরী
Published: 29th, May 2025 GMT
দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সম্পদের বিবরণী দাখিল করেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরী। এছাড়া তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীও সম্পদের বিবরণী দাখিল করেননি।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার তদন্ত শেষে তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন
তারেক রহমান সব মামলায় খালাস পাওয়ায় ‘সন্তুষ্ট’ ইউট্যাব
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরী, স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরী এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।”
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী), তার স্ত্রী ও কন্যার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মামলা করে দুদক।
এর আগে, ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট এস কে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী ও কন্যার আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেন আদালত। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
ওইদিন দুদকের উপপরিচালক মো.
আবেদনে বলা হয়েছিল, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ১৯ ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ২০ বিধি অনুযায়ী অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্ত্রী, সন্তানের আয়-ব্যয়ের সঠিকতা এবং তাদের মালিকানাধীন অন্য কোনো সম্পদ রয়েছে কি না, তা যাচাই/পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য শুরু থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, সুপর্ণা সুর চৌধুরী এবং নন্দিতা সুর চৌধুরীর আয়কর নথি পর্যালোচনা করা অবশ্যক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে দুদক। একইসঙ্গে তার স্ত্রী সুপর্ণা রায় চৌধুরী ও মেয়ে নন্দীতা সুর চৌধুরীর হিসাবের তথ্য চেয়ে সংস্থাটি গত ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা পাঠাতে সময় বেঁধে দেয়। পরে গত বছরের আগস্টে এই পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এস কে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা রায় চৌধুরী ও মেয়ে নন্দীতা সুর চৌধুরীর নামে আপনাদের ব্যাংকের কোনো শাখায় কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব, ঋণ হিসাব, এফডিআর বা সঞ্চয়পত্র থাকলে তা জানাতে বলা হচ্ছে। একইসঙ্গে হিসাব খোলার ফরম, দাখিলের রেকর্ডপত্র, কেওয়াইসি, নমিনি, টিপি, সিগনেচার কার্ড ও হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পাঠাতে বলা হয়।
অভিযোগ আছে, এস কে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন।
২০২২ সালে এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের মার্চে এস কে সুর কে তলব করে দুদক। এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান। গত ১৪ জানুয়ারি এসকে সুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স পর ণ নন দ ত ব বরণ
এছাড়াও পড়ুন:
এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি
বাংলাদেশে খুচরা (রিটেইল) ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। ফলে বহুজাতিক এই ব্যাংকে আর কোনো ব্যক্তি আমানত ও ঋণসংক্রান্ত সেবা পাবেন না। তবে খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্তটি হুট করে কার্যকর করা হবে না। ধাপে ধাপে গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে এই সেবা বন্ধ করা হবে। এইচএসবিসির গ্লোবাল এক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ থেকে খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংকটি আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
খুচরা ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত হিসাব, গাড়ির ঋণ, বাড়ি কেনার ঋণ, বিমাসেবা, মেয়াদি বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত অর্থায়ন। এর মধ্যে প্রচলিত ও শরিয়াহ দুই ধরনের সেবা রয়েছে। এসব সেবায় এখন নতুন গ্রাহক যুক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটির ওয়েবসাইটেও এ–সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সাল শেষে এইচএসবিসি বাংলাদেশের আমানত ছিল ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ছিল ১৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ে হয় ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। সারা দেশের ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় ব্যাংকটির ব্যবসাকেন্দ্র রয়েছে। সারা দেশে শাখা ও উপশাখা রয়েছে সাতটি। এ ছাড়া পাঁচটি ‘সিলেকট’ সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক এই ব্যাংক। সারা দেশে ব্যাংকটির এটিএম বুথ রয়েছে ১১টি।
এক বিজ্ঞপ্তিতে এইচএসবিসি জানিয়েছে, ব্যাংকটি বাংলাদেশে তাদের রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করছে। এই প্রক্রিয়া এ বছরের দ্বিতীয় অংশে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে। বাংলাদেশে রিটেইল ব্যবসায় এইচএসবিসির বাজার অবস্থান ও এই ব্যবসার কৌশলগত অবস্থানকে বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধাপে ব্যাংকটি তাদের গ্রাহকদের অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবসা এ ঘোষণার আওতামুক্ত থাকবে। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকিং ব্যবসাটি এইচএসবিসির আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি মার্কেট হিসেবেই থাকছে। এইচএসবিসি গ্রুপ বাংলাদেশের করপোরেট ও ইনস্টিটিউশন ব্যাংকিং তথা করপোরেট গ্রাহকদের সেবা প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং ওই ব্যবসায় ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী গ্রুপটির কার্যক্রম আরও সহজতর করার একটি অংশবিশেষ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ঘোষণা করা হয়। যেসব দেশে এইচএসবিসির পরিষ্কার প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা রয়েছে, সেই সব দেশে ব্যাংকটি তার গ্রাহকদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদানে গুরুত্ব অব্যাহত রাখবে।
জানা যায়, খুচরা ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করলেও বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানিসহ করপোরেট ও কমার্শিয়াল ব্যাংকিং ব্যবসার প্রসার অব্যাহত রেখেছে ব্যাংকটি। ফলে ব্যাংকটির মুনাফাও বাড়ছে। এইচএসবিসি বাংলাদেশ তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালে এক হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। বহুজাতিক ব্যাংকটি ২০২৩ সালে ৯৯৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। ২০২২ সালে এইচএসবিসির নিট মুনাফা ছিল ৫৮৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীতে বলা হয়েছে, সুদের আয় বৃদ্ধি, আমানতের খরচ কমা এবং বিনিয়োগ থেকে ভালো আয় হওয়ায় রেকর্ড মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির নিট সুদ আয় ৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকায়। আমানতের ওপর সুদ ২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণ থেকে সুদের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এইচএসবিসি আয় করেছে ৯৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে মূলধন লাভও রয়েছে। এ আয় আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
এইচএসবিসি ১৯৯৬ সালে ঢাকায় প্রথম শাখা চালু করে। ব্যাংকটির মূল প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসি। বাংলাদেশে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় গুলশানের লিংক রোডে।