দুর্নী‌তির মাধ‌্যমে বিপুল প‌রিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জ‌ন কর‌লেও দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশনের (দুদক) কা‌ছে সম্পদের বিবরণী দা‌খিল ক‌রে‌ননি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরী। এছাড়া তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীও সম্পদের বিবরণী দা‌খিল ক‌রে‌ননি।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরু‌দ্ধে মামলা দা‌য়ের করে দুদক। মামলার তদ‌ন্ত শেষে তাদের অভিযুক্ত ক‌রে চার্জ‌শিট অনু‌মোদন দি‌য়ে‌ছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনু‌মোদন দেওয়া হয়ে‌ছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন

তারেক রহমান সব মামলায় খালাস পাওয়ায় ‘সন্তুষ্ট’ ইউট্যাব

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তি‌নি বলেন, “ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরী, স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরী এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।”

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী), তার স্ত্রী ও কন্যার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মামলা ক‌রে দুদক।

এর আগে, ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট এস কে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী ও কন্যার আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেন আদালত। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।

ওইদিন দুদকের উপপরিচালক মো.

নাজমুল হুসাইন তাদের আয়কর নথি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছিল, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।

অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ১৯ ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ২০ বিধি অনুযায়ী অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্ত্রী, সন্তানের আয়-ব্যয়ের সঠিকতা এবং তাদের মালিকানাধীন অন্য কোনো সম্পদ রয়েছে কি না, তা যাচাই/পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য শুরু থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, সুপর্ণা সুর চৌধুরী এবং নন্দিতা সুর চৌধুরীর আয়কর নথি পর্যালোচনা করা অবশ্যক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে দুদক। একইসঙ্গে তার স্ত্রী সুপর্ণা রায় চৌধুরী ও মেয়ে নন্দীতা সুর চৌধুরীর হিসাবের তথ্য চেয়ে সংস্থাটি গত ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা পাঠাতে সময় বেঁধে দেয়। পরে গত বছরের আগস্টে এই পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।

ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এস কে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা রায় চৌধুরী ও মেয়ে নন্দীতা সুর চৌধুরীর নামে আপনাদের ব্যাংকের কোনো শাখায় কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব, ঋণ হিসাব, এফডিআর বা সঞ্চয়পত্র থাকলে তা জানাতে বলা হচ্ছে। একইসঙ্গে হিসাব খোলার ফরম, দাখিলের রেকর্ডপত্র, কেওয়াইসি, নমিনি, টিপি, সিগনেচার কার্ড ও হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পাঠাতে বলা হয়।

অভিযোগ আছে, এস কে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন।

২০২২ সালে এস কে সুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের মার্চে এস কে সুর কে তলব করে দুদক। এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান। গত ১৪ জানুয়ারি এসকে সুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স পর ণ নন দ ত ব বরণ

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের আয়কর নথি তলবের নির্দেশ
  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • স্ত্রীসহ সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের আয়কর নথি তলবের নির্দেশ
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন