বাজেটে সুদ মেটাতে ধরা হয়েছে ১ লাখ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা
Published: 29th, May 2025 GMT
আগামী অর্থবছরে সুদখাতে বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে। এখাতে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে; চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
ফলে আগামী অর্থবছরে সুদ ব্যয় বাড়ছে চলতি অর্থবছরের( ২০২৪-২০২৫) চেয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদখাতে সরকারকে খরচ করতে হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী ২ জুন বেতার-টিভি মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা ড.
আরো পড়ুন:
বাজেট ঘোষণা ২ জুন
বাজেটে টেকসই প্রবৃদ্ধির বার্তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
তামাক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির বাজেট বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস
এর আগে অর্থ বিভাগের করা এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছিল, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আগামী বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনার কারণে সুদ ব্যয় এই পর্যায়ে যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।
এর আগে সুদ ব্যয় বেড়ে যাবার কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছিল, বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনমনীয় এবং আধা নমনীয় ঋণের পরিমান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এখাতের সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু টাকার অবচিতি(ডিভ্যালুয়েশন) এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক উৎসের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ শতাংশ হতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ শতাংশে উন্নীত হবে।
অর্থবিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে সরকারের প্রাক্কলিত সুদ ব্যয় এখাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে। সুদ পরিশোধের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরের সুদ ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের অনুপাতে সুদ পরিশোধ হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়। সুদ ব্যয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে১২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পায় তবে তা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে পুনরায় ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বাজেটের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদখাতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।
সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২১-২২অর্থবছরে সুদ ছিল ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে একলাখ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদ বেড়ে হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
ঢাকা//হাসনাত/রাসেল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক