যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের ‘পদ্ধতিগত’ মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে। গাজায় গত ১৯ মাস ধরে চলমান যুদ্ধ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে সমান্তরাল অভিযানগুলোর মধ্যে এক বেআইনি চর্চার দিকে নতুন করে আলোকপাত করেছে এটি। ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ইসরায়েলের ব্যবহার করা এখন প্রায় স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

গত শনিবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে গাজা ও পশ্চিম তীরে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহৃত সাতজন ফিলিস্তিনির সাক্ষ্য যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, দুজন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা ওই চর্চার ব্যাপকতা স্বীকার করেছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হয়।

এ অভিযোগের জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের অভিযানে বেসামরিক লোকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং বেশ কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত চলছে।

আসুন, জেনে নেওয়া যাক, মানবঢাল কী? ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কতটা ব্যাপকভাবে এ অস্ত্র ব্যবহার করছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল কি শিগগিরই আরেকটি দমনাভিযান চালাতে পারে—এমন সব প্রশ্নের উত্তর।

মানবঢাল কী, ইসরায়েল কীভাবে এটি ব্যবহার করছে

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের (আইএইচএল) অধীন, ‘মানবঢাল’ বলতে বোঝায়—হামলা থেকে সামরিক লক্ষ্যবস্তু রক্ষায় বেসামরিক বা অন্য সুরক্ষিত ব্যক্তিদের, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা।

গত আগস্টে হারেৎজ আরও প্রকাশ করে, গাজায় মানবঢাল হিসেবে ব্যবহৃত ফিলিস্তিনিদের বয়স সাধারণত ২০-এর কোঠায় এবং কিছু ইউনিট এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের ব্যবহার করেছে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের চিহ্নিত করে (কাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে) টানেলের মুখ বা বিভিন্ন ভবনে পাঠানো নিয়ে গর্বও করেছে এসব ইউনিট।

ওই আইনে যুদ্ধের ময়দানে মানবঢালের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু গাজায় গণহত্যার সময় ইসরায়েলি সেনারা এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ চলতি বছরের শুরুর দিকে এক সেনাসদস্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য প্রকাশ করে, যেখানে তিনি জানান, তাঁর ইউনিটে দিনে ‘ছয়বার’ ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং এ প্রক্রিয়া কার্যত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে ‘স্বাভাবিক’ রীতি হয়ে উঠেছে।

গত আগস্টে হারেৎজ আরও প্রকাশ করে, গাজায় মানবঢাল হিসেবে ব্যবহৃত ফিলিস্তিনিদের বয়স সাধারণত ২০-এর কোঠায় এবং কিছু ইউনিট এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের ব্যবহার করেছে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের চিহ্নিত করে (কাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে) টানেলের মুখ বা বিভিন্ন ভবনে পাঠানো নিয়ে গর্বও করেছে এসব ইউনিট।

‘এটি (ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা) এখন (ইসরায়েলের) সামরিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে’, বলেন ‘হিউম্যান শিল্ডস: এ হিস্ট্রি অব পিপল ইন দ্য লাইন অব ফায়ার’ গ্রন্থের সহরচয়িতা নিকোলা পেরুজিনি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বহু প্রমাণ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি অনেক ইসরায়েলি সেনা নিজেরাও সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের “পশুখাদ্য” হিসেবে ব্যবহার করার প্রমাণ পোস্ট করেছেন; দৃশ্যত তাদের (ইসরায়েলি বাহিনী) যেন কোনো জবাবদিহি নেই।

এ বিষয়ে বহু প্রমাণ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি অনেক ইসরায়েলি সেনা নিজেরাও সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের “পশুখাদ্য” হিসেবে ব্যবহার করার প্রমাণ পোস্ট করেছেন; দৃশ্যত তাদের (ইসরায়েলি বাহিনী) যেন কোনো জবাবদিহি নেই।—নিকোলা পেরুজিনি, ‘হিউম্যান শিল্ডস: এ হিস্ট্রি অব পিপল ইন দ্য লাইন অব ফায়ার’ গ্রন্থের সহরচয়িতা

‘গত কয়েক দশকে প্রমাণ হয়েছে যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রকৃতপক্ষে তদন্ত নয়’, বলেন পেরুজিনি। তিনি জানান, এই চর্চার (ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল করা) নথিভুক্তিকরণ শুরু হয় ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (ফিলিস্তিনি অভ্যুত্থান) সময়। এ চর্চা জেনেভা কনভেনশনের প্রটোকল ১ অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যত যুদ্ধ হয়েছে, তার ইতিহাসে এবারের যুদ্ধেই মানবঢাল ব্যবহার করার সবচেয়ে বেশি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এ গণহত্যা সরাসরি সম্প্রচারিত (ভিডিও, ছবি ইত্যাদি মাধ্যমে) হচ্ছে’, বলেন পেরুজিনি। তিনি আরও বলেন, ‘অনুসন্ধান করে আমরা যা পেয়েছি, তা হলো—এককথায় এটি একটি পদ্ধতিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা।’

গাজায় সাঁজোয়া যান নিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র কর ব যবহ র করছ ইসর য় ল র কর ছ প রক শ ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ