যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত বুধবার ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা ‘শিগগিরই’ বাতিল করতে যাচ্ছে।

এমন এক সময়ে এ পদক্ষেপের ঘোষণা এসেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধের অবসানে ওয়াশিংটন ও বেইজিং একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী রাজনীতিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির চীনা শিক্ষার্থীদের ওপর কড়া নজরদারির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, এই শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ গোপনে বেইজিংয়ের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারেন। তবে রুবিওর এ ঘোষণা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ।

চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নিতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিজের ওপরই–বা কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

রুবিও কী ঘোষণা দিয়েছেন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে রুবিও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা শুরু করবে, বিশেষ করে যাঁদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংযোগ রয়েছে অথবা যাঁরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ক্ষেত্রে পড়াশোনা করছেন।

কোন কোন বিষয়কে ‘গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র’ বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি। তবে গত মার্চে মার্কিন কংগ্রেসের একটি কমিটি কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি, পারডু ইউনিভার্সিটি, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইন, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিচালকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। এতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত পর্যায়ের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিষয়ক প্রোগ্রামে কত চীনা নাগরিক পড়াশোনা করছেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

কমিটির চেয়ারম্যান জন মুলেনার অভিযোগ করেন, চীনের সরকার তাঁদের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গবেষণা প্রোগ্রামগুলোতে যুক্ত করে সংবেদনশীল প্রযুক্তি রপ্ত করে নিতে চাইছে।

মুলেনার চিঠিতে বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি একটি সুসংগঠিত ও পদ্ধতিগত উপায়ে গবেষকদের যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যেখান থেকে তাঁরা সংবেদনশীল, দ্বৈত ব্যবহারে সক্ষম (সামরিক-বেসামরিক) প্রযুক্তির সরাসরি সংস্পর্শ পাচ্ছেন। অনেকে ডিগ্রি শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো পশ্চিমা দেশে থেকে যান।

চিঠিতে কমিটির চেয়ারম্যান লিখেছেন, ‘এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। কারণ, দেখা যাচ্ছে, চীনা নাগরিকেরা অত্যাধুনিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে তা পরবর্তী সময়ে চীনে ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’

‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংযোগ’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, সে বিষয় নিয়েও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও কিছু বলেননি। তিনি বলেন, চীন একদলীয় একটি রাষ্ট্র। সেখানে পার্টির সদস্যসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। চীনে মোট প্রায় ৪০ কোটি পরিবার রয়েছে। ফলে গড়ে প্রতি চারজন চীনা নাগরিকের একজনের কোনো না কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, যার শিরোনাম হচ্ছে, ‘নতুন ভিসা নীতি আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেয়, চীনকে নয়।’

এই বিবৃতিতে রুবিও আরও বলেন, ‘আমরা ভিসার মানদণ্ড পুনর্বিন্যাস করব এবং ভবিষ্যতে চীন ও হংকং থেকে করা সব আবেদন আরও কঠোরভাবে যাচাই করব।’

রুবিওর এ বিবৃতির আগের দিন খবর বের হয়, রুবিও বিশ্বের সব মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটে একটি চিঠি দিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সব দূতাবাসে ভিসা সাক্ষাৎকার স্থগিত করেছে। পররাষ্ট্র দপ্তর আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া আরও বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে।

চীনের প্রতিক্রিয়া কী

বেইজিং ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছে এবং একে ‘রাজনৈতিক ও বৈষম্যমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মতাদর্শ ও জাতীয় নিরাপত্তার’ অজুহাত দেখিয়ে অযৌক্তিভাবে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করেছে। চীন এ পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মাও নিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ পদক্ষেপ ‘চীনা শিক্ষার্থীদের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে’ এবং ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

মাও নিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কথিত স্বাধীনতা ও উদারতার প্রচার আসলে একটি মিথ্যা। তাদের এ রাজনৈতিক ও বৈষম্যমূলক আচরণ সেই সত্যকেই সামনে এনেছে।

এই মুখপাত্র আরও বলেন, এ পদক্ষেপ ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিজের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, জাতীয় ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে’ আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে চীনের শিক্ষার্থীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ক ইউন ভ র স ট এ পদক ষ প পরর ষ ট র র ওপর ক ত কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ