নোয়াখালী পৌরসভার ১৯৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সড়কগুলো কাদা পানিতে একাকার। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছোট ডোবা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, আহত হচ্ছেন লোকজন। স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও নালা নির্মাণের কারণে শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের চেয়ে নালা উঁচুতে। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে না। এতে সড়কে পানি জমে গর্ত তৈরি হয়।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ খান সড়কের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গত বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় পৌরসভার ৪১ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। কিছু সড়ক সংস্কারে প্রকল্পে দেওয়া আছে। আর্থিক সংকটের কারণে সংস্কার কাজে বিলম্ব হচ্ছে।’
প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো নোয়াখালী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ২০৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক ১২৩ কিলোমিটার, কাঁচা ৭৩ কিলোমিটার। আর ফুটপাত রয়েছে ১১ কিলোমিটার।
জানা যায়, ১৮৭৬ সালে যাত্রা শুরু করা নোয়াখালী পৌরসভার আয়তন ১৭ দশমিক ১১ বর্গ কিলোমিটার। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৫ জন লোকের বসবাস। পৌরবাসীর পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য প্রথম পর্যায়ের নর্দমা (প্রাকৃতিক খাল) রয়েছে ১৭ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ের নর্দমা বা ড্রেন রয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এবং তৃতীয় পর্যায়ের নর্দমা রয়েছে ৩২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। 
পৌরসভার মাইজদী বাজার এলাকার বাসিন্দা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক জহির উদ্দিন (৩৫) বলেন, ‘পৌরসভার চার লেইনের সড়কটি ছাড়া শাখা সড়কগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ভাড়া বেশি দিলেও ওইসব সড়কে আমরা যেতে সাহস পাই না। কারণ প্রায় গর্তে রিকশা পড়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। একবার গাড়ি গ্যারেজে নিলে মেরামত খরচে ১০ দিনের আয় চলে যায়।’ 
মাইজদী কোর্ট স্টেশন রোডের বাসিন্দা রেজাউল হক (৬৫) বলেন, ‘শহরের ল’ইর্য়াস কলোনি, কাজি কলোনি ও নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের পূর্ব পাশের সড়কে অসংখ্য গর্ত। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের বেহাল দশা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়নি। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন নোয়াখালী জিলা স্কুল, নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রভাতী শিশু কানন, হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ, নোয়াখালী কেরামতিয়া মাদ্রারাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–গামী হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন এই সড়কে। সড়কের দুরবস্থার কারণে তারা চরম কষ্টে আছেন।’
গত বৃহস্পতিবার সরজমিন পৌরসভার শান্তিনগর, জেলা কারাগার সড়ক, নতুন বাস স্ট্যান্ড, মাইজদী বাজার-পুলিশ লাইন্স, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়নপুর, হাউজিং এস্টেটের সেন্টাল সড়ক, আল-ফারুক একাডেমি সড়ক, বালুর মাঠ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সড়কের গর্তে বৃষ্টির পানি জমে আছে। গর্তে ভারা সড়কে যানবাহন চলে হেলেদুলে।’
করিমপুর মহল্লার বাসিন্দা ফারহানা হক বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে পানি জমে যায়। সড়কে পায়ে হেঁটেও চলা যায় না।’ নতুন বাস স্ট্যান্ড এলকার বাসিন্দা এহসানুল হক শিপু বলেন, ‘জেলা কারাগারে যাওয়ার সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না।’ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বাদল বলেন, ‘শহরের সোনাপুর থেকে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশে পানি প্রবাহের যে নালা রয়েছে তার উচ্চতা সড়কের চেয়ে বেশি। ফলে বৃষ্টির পানি নালার মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে না।’ 
ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও নালা নির্মাণের ফলে নোয়াখালী শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। টানা একঘণ্টা বৃষ্টি হলে শহরের সড়কগুলোতে পানি জমে যায়।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ খান আরও বলেন, ‘পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কের সংস্কারকাজ রাজস্ব তহবিল থেকে করার বিধান রয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় পৌরসভার আয় থেকে বেতন ভাতা দিয়ে যে অবশিষ্ট অর্থ থাকে তা খুবই সামান্য। আমারা বর্তমানে পৌরসভার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নিয়ে কাজ করছি। এ কাজ শেষ হওয়ার পর সড়ক সংস্কারে নজর দেব।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আর্থিক সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল ম ট র সড়ক সড়ক স স ক র শহর র স প রসভ র সড়কগ ল সড়ক র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক হোন

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার এবং এর নিচের সড়কগুলো ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল যানজট নিরসন করা; অপরিকল্পিত নকশা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং আইন না মানার কারণে সেটিই হয়েছে এখন গলার কঁাটা। পদ্মা সেতু থেকে পাওয়া মূল্যবান সময়টুকু ঢাকার প্রবেশপথেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে এই যানজট কেবল সময়ের অপচয় নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ফেলেছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।

প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ফ্লাইওভার শনির আখড়া থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করলেও এর তিনটি অংশ স্থায়ী যানজটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে—উঠে আসার অংশ, সায়েদাবাদ অংশ এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান টোল প্লাজা ও চানখাঁরপুল অংশ। গুলিস্তান টোল প্লাজার ধীরগতি এবং সায়েদাবাদে সৃষ্টি হওয়া জট মূলত ফ্লাইওভারের সুফলকে ম্লান করে দিচ্ছে। কিন্তু এই জটের মূল কারণ নিছক বেশি যানবাহন নয়, বরং ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা।

নগর–পরিকল্পনাবিদদের মতে, আধুনিক পরিবহনব্যবস্থায় অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয় না, কারণ এটি নিচের রাস্তার ট্রাফিক পরিচালন ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়। হানিফ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপর চাপ কমাতে নিচের সড়কগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। ফলে নিচের যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়কটি সংস্কারের অভাবে বেহাল এবং রাস্তাজুড়ে গর্ত, পানি আর ধুলার রাজত্ব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের চাপ গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের ওপর, যেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে নামার মুখে।

তবে এই অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক নৈরাজ্য। ধারণক্ষমতা ৭০০-৮০০ বাস হলেও সেখানে রাখা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার বাস। টার্মিনালের বাইরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শত শত পরিবহন কাউন্টার। দুর্ঘটনা বা অবৈধ কাউন্টারের কারণে যখন একটি লেনের যানবাহন উল্টো সড়কে চলে আসে, তখন যাওয়া-আসা উভয় পথের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। 

যাত্রাবাড়ী এলাকার যানজট কেবল ট্রাফিক আইন অমান্য বা রাস্তার দুর্বলতার ফল নয়, এর জন্য দায়ী পরিবহন খাতে জেঁকে বসা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটও। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। 

প্রতিদিন লাখো যাত্রীর দুর্ভোগ কমাতে হলে এখন শুধু ফ্লাইওভারের ওপর নয়, নজর দিতে হবে এর নিচেও। নিচের ভাঙাচোরা সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। এর ফলে ফ্লাইওভারের ওপরের চাপ কমে আসবে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, এর আশপাশ এলাকা ও সড়কগুলোকে অবৈধ দখল ও কাউন্টারমুক্ত করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে নিচের সড়কগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক হোন