নোয়াখালী পৌরসভার ১৯৬ কিলোমিটার সড়ক বেহাল
Published: 31st, May 2025 GMT
নোয়াখালী পৌরসভার ১৯৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সড়কগুলো কাদা পানিতে একাকার। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছোট ডোবা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, আহত হচ্ছেন লোকজন। স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও নালা নির্মাণের কারণে শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের চেয়ে নালা উঁচুতে। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে না। এতে সড়কে পানি জমে গর্ত তৈরি হয়।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ খান সড়কের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গত বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় পৌরসভার ৪১ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। কিছু সড়ক সংস্কারে প্রকল্পে দেওয়া আছে। আর্থিক সংকটের কারণে সংস্কার কাজে বিলম্ব হচ্ছে।’
প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো নোয়াখালী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ২০৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে পাকা সড়ক ১২৩ কিলোমিটার, কাঁচা ৭৩ কিলোমিটার। আর ফুটপাত রয়েছে ১১ কিলোমিটার।
জানা যায়, ১৮৭৬ সালে যাত্রা শুরু করা নোয়াখালী পৌরসভার আয়তন ১৭ দশমিক ১১ বর্গ কিলোমিটার। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৫ জন লোকের বসবাস। পৌরবাসীর পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য প্রথম পর্যায়ের নর্দমা (প্রাকৃতিক খাল) রয়েছে ১৭ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ের নর্দমা বা ড্রেন রয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এবং তৃতীয় পর্যায়ের নর্দমা রয়েছে ৩২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার।
পৌরসভার মাইজদী বাজার এলাকার বাসিন্দা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক জহির উদ্দিন (৩৫) বলেন, ‘পৌরসভার চার লেইনের সড়কটি ছাড়া শাখা সড়কগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ভাড়া বেশি দিলেও ওইসব সড়কে আমরা যেতে সাহস পাই না। কারণ প্রায় গর্তে রিকশা পড়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। একবার গাড়ি গ্যারেজে নিলে মেরামত খরচে ১০ দিনের আয় চলে যায়।’
মাইজদী কোর্ট স্টেশন রোডের বাসিন্দা রেজাউল হক (৬৫) বলেন, ‘শহরের ল’ইর্য়াস কলোনি, কাজি কলোনি ও নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের পূর্ব পাশের সড়কে অসংখ্য গর্ত। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের বেহাল দশা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়নি। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন নোয়াখালী জিলা স্কুল, নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রভাতী শিশু কানন, হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ, নোয়াখালী কেরামতিয়া মাদ্রারাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–গামী হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন এই সড়কে। সড়কের দুরবস্থার কারণে তারা চরম কষ্টে আছেন।’
গত বৃহস্পতিবার সরজমিন পৌরসভার শান্তিনগর, জেলা কারাগার সড়ক, নতুন বাস স্ট্যান্ড, মাইজদী বাজার-পুলিশ লাইন্স, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়নপুর, হাউজিং এস্টেটের সেন্টাল সড়ক, আল-ফারুক একাডেমি সড়ক, বালুর মাঠ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সড়কের গর্তে বৃষ্টির পানি জমে আছে। গর্তে ভারা সড়কে যানবাহন চলে হেলেদুলে।’
করিমপুর মহল্লার বাসিন্দা ফারহানা হক বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে পানি জমে যায়। সড়কে পায়ে হেঁটেও চলা যায় না।’ নতুন বাস স্ট্যান্ড এলকার বাসিন্দা এহসানুল হক শিপু বলেন, ‘জেলা কারাগারে যাওয়ার সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না।’ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বাদল বলেন, ‘শহরের সোনাপুর থেকে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশে পানি প্রবাহের যে নালা রয়েছে তার উচ্চতা সড়কের চেয়ে বেশি। ফলে বৃষ্টির পানি নালার মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে না।’
ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও নালা নির্মাণের ফলে নোয়াখালী শহরের সড়কগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। টানা একঘণ্টা বৃষ্টি হলে শহরের সড়কগুলোতে পানি জমে যায়।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ খান আরও বলেন, ‘পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কের সংস্কারকাজ রাজস্ব তহবিল থেকে করার বিধান রয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় পৌরসভার আয় থেকে বেতন ভাতা দিয়ে যে অবশিষ্ট অর্থ থাকে তা খুবই সামান্য। আমারা বর্তমানে পৌরসভার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নিয়ে কাজ করছি। এ কাজ শেষ হওয়ার পর সড়ক সংস্কারে নজর দেব।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আর্থিক সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ল ম ট র সড়ক সড়ক স স ক র শহর র স প রসভ র সড়কগ ল সড়ক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।
পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।
সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।
শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।
ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ