১. প্রেজেন্টেশন তৈরি

প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে এখন আর পাওয়ার পয়েন্ট কিংবা অন্য কোনো সফটওয়্যারের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। গামা এআই টুল (gamma.com.ai) ব্যবহার করে আপনি কাজটা সহজেই করতে পারবেন। কী নিয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে চান, ঠিকঠাক নির্দেশনা দিলেই এআই আপনাকে প্রেজেন্টেশন বানিয়ে দেবে। প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক জিনাত সানজিদা জানালেন, ‘নিজের আইডিয়া বা অভিজ্ঞতার সঙ্গে এআই যুক্ত করে প্রেজেন্টেশন তৈরি করা যেতেই পারে। তবে এআইকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। পুরোপুরি এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন না।’ ক্যানভার (Canva.

com) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারেন। ডিজাইন ও উপস্থাপনার বিষয়টি এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে কনটেন্ট সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও গবেষণায় আপনি আরও বেশি সময় দিতে পারবেন। এসব সাইটে বিষয় লিখে দিলে বা কনটেন্ট দিলে এআই নিজেই স্লাইড ডিজাইন সাজিয়ে দেয়। আপনাকে শুধু টেক্সট ও ছবি নিজের মতো করে সম্পাদনা করে নিতে হবে।

২. ক্লাসওয়ার্ক, হোমওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্ট

লেখা ঠিকঠাক সাজিয়ে নেওয়া, তথ্য অনুসন্ধান কিংবা বিশ্লেষণের কাজে আপনি চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো এআই টুল ব্যবহার করতেই পারেন। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক এইচ এম আতিফ ওয়াফিক বলেন, ‘ক্লাসওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য এখন অনেক উন্নত এআই টুল আছে। এসব টুল শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল লেখায় সহায়তা করে। তবে কপি-পেস্ট কিংবা সরাসরি অনুলিপি করলে কিন্তু তা সহজেই ধরা পড়বে, ক্লাসে নম্বর কম পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। বরং এসব টুলের সহায়তা নিয়ে নিজস্ব ভাষায় উপস্থাপন করা শিখতে হবে। চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি কিন্তু অনেক সময় ভুল তথ্যও দেয়। তাই রেফারেন্স যাচাই করতে হবে।’ জিনাত সানজিদার মতো আতিফ ওয়াফিকেরও একই পরামর্শ—এআইয়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে একে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। এক্সামএআই (examai.ai) টুলটিও শিক্ষার্থীদের সহায়ক হতে পারে। এটি একটি আধুনিক টেস্ট প্রিপারেশন টুল, যা নিজস্ব এআই দিয়ে কুইজ, ফ্ল্যাশকার্ড ও স্টাডি গাইড তৈরি করে। শিক্ষার্থীরা এতে নিজের মতো করে পড়ালেখার পরিকল্পনা (পার্সোনালাইজড স্টাডি প্ল্যান) সাজাতে পারেন, বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারেন, আছে আরও নানা সেবা। এআই-শিক্ষক হিসেবে ক্যাকটাস এআইও (caktus.ai) শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কাজের। এটি রচনা ও থিসিস লেখায় সাহায্য করে, লিখতে পারে কোড। তৈরি করে দেয় গবেষণাপত্রের সারাংশ ও রেফারেন্স। এমন এআই টুল পরীক্ষার সময় প্রস্তুতিতে বেশ সহায়ক।

৩. বানান ও ব্যাকরণ পরীক্ষা

ইংরেজি ভাষায় লেখা অ্যাসাইনমেন্টের বানান ও ব্যাকরণ ঠিক করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই হিমশিম খান। দ্বিধায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে সহায়তার জন্যও আছে একাধিক এআই টুল। যেমন গ্রামারলি। এই এআই টুলটি বানান থেকে শুরু করে ফুলস্টপ, কমা, বাক্য গঠন—সব যাচাই করে ও সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেয়। একটি নিবন্ধ লিখে আপনি গ্রামারলির ‘হাতে’ (পড়ুন ওয়েবসাইটে) ছেড়ে দিলেই এটি সব ভুলত্রুটি শনাক্ত করে ফেলতে পারবে। এ ছাড়া আছে কুইলবট (quillbot.com)। এর মাধ্যমে একই লেখাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব। এটি বিকল্প বাক্য (রিরাইট) ও শব্দ (সিনোনিম) খুঁজতে সাহায্য করে। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বুশরা হুমায়রা বলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই ইংরেজি লেখার ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। বিশেষ করে ব্যাকরণ, বানান ও বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে। এআই টুল ব্যবহার করে এই ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করা যায়। তবে শুধু সংশোধন করলেই হবে না। শিখতে হবে—কোথায়, কেন আমার ভুল হচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা একটা লেখা শেষ করার পর কারও সাজেশন নেওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, দেখানোর কেউ নেই। এ ক্ষেত্রে এআই হতে পারে ভরসা।’ বুশরা মনে করেন, এসব টুল শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। এসব টুল কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে নিজের লেখার মান বাড়ানোরও চর্চা করা উচিত।

৪. পিডিএফ ব্যবস্থাপনা

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময় বড় বড় পিডিএফ পড়তে হয়। অনেক সময় পুরোটা পড়া সম্ভব হয় না। চ্যাটপিডিএফ (chatpdf.com) ব্যবহার করে সহজেই কোনো গবেষণাপত্র বা বইয়ের সারাংশ জেনে নেওয়া যায়। এটি মূল বক্তব্য, গবেষণার ফলাফল ও উপসংহার আলাদা করে দেখায়। পিডিএফ ফাইল আপলোড করে দিলেই এআই আপনাকে সারাংশ তৈরি করে দেবে। পিডিএফের কোনো একটা অংশটা নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন করলেও উত্তর মিলবে।

৫. ভিডিওর ট্রান্সক্রিপ্ট ও বিশ্লেষণ

অনেক সময় ভিডিও লেকচার দেখে বা পডকাস্ট শুনে আমরা নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি উচ্চারণ বুঝতে অনেকে সমস্যায় পড়েন। আবার ভিডিওর দৈর্ঘ্য বেশি লম্বা হলে পুরো ভিডিও দেখে নির্দিষ্ট তথ্যটা খুঁজে বের করাও কঠিন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে অটার ডট এআই। (Otter.ai)। এই ওয়েবসাইটে ভিডিওর কনটেন্ট লিখিত আকারে পাওয়া যায়, নোট নেওয়া সহজ হয়। ভিডিওর লিংক বা ফাইল দিয়ে দিলে এটি নিজ দায়িত্বে পুরো ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করে দেয়। একই ধরনের সেবা পেতে পারেন গুগলের নোটবুকএলএম (notebooklm.google) থেকেও। ধরা যাক, আপনি যে ভিডিওটির ট্রান্সক্রিপ্ট চাচ্ছেন, সেখানে একাধিক মানুষের কণ্ঠস্বর আছে। আপনি যদি আলাদা আলাদা কণ্ঠস্বর শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করে দিতে বলেন, নোটবুকএলএম আপনাকে সেটাও দেবে।

সিভি তৈরির জন্যও আছে একাধিক এআই টুল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স হ য য কর অন ক সময় এসব ট ল এআই ট ল র জন য ভ ড ওর প ড এফ আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত–আহতদের ছবি ও ভিডিও সরাতে এবং সেগুলো ছড়িয়ে পড়া বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। এ রিটের ওপর আদেশের জন্য ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এই দিন ধার্য করেন।

ওই ঘটনায় নিহত–আহতদের ছবি–ভিডিও সরাতে এবং সেগুলো ছড়িয়ে পড়া বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ ২৯ জুলাই রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।

উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ২১ জুলাই বিধ্বস্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত হিসাবে, ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩৪।

পরে আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুর্ঘটনায় আহত–নিহতদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোতে শিশুদের প্রায় পোশাকহীন, অগ্নিদগ্ধ ও আহত অবস্থায় দেখা যায়। এসব ছবি–ভিডিও শিশুদের পরিবারের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের ট্রমাটাইজ (মানসিকভাবে আঘাত) করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের দুর্ঘটনায় আহত–নিহতদের ছবি–ভিডিও প্রকাশে সংবেদনশীল হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব ছবি ব্যবহারে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। তাই হতাহতদের ছবি–ভিডিও সরাতে এবং সেগুলো আর যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ